হোটেল-বাড়িভাড়ার অর্থ ‘আইবিএএন’ পাঠানো বাধ্যতামূলক
পবিত্র উমরাহ্ পালনে এ বছর উমরাহ্ যাত্রীদের ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি গুনতে হবে। একই সাথে যেনতেনভাবে থাকার হোটেল ও যাতায়াতের গাড়ির বুকিং দেখিয়ে আর ভিসা করা যাবে না। হোটেল বুকিং, যাতায়াতের টাকাও আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাবের (আইবিএএন) মাধ্যমে ভিসার আবেদনের সময়ই পরিশোধ বাধ্যতামূলক। সৌদি সরকার উমরাহ্র ভিসা ফি নতুন করে ৩০০ সৌদি রিয়াল সমপরিমাণ প্রায় ছয় হাজার ৬০০ টাকা আরোপ, সৌদি উমরাহ্ কোম্পানির সার্ভিস চার্জ ১০৫ রিয়াল ও ভিসা সার্ভিস বাবদ ৯৪ রিয়াল সুনির্দিষ্ট করে দেয়ার কারণে এই খরচ বৃদ্ধি পাবে।
সার্ভিস প্রোভাইডিং সংস্থা মুনাচ্ছাকে ভিসা আবেদনের সময়ের মোট খরচের ২০ শতাংশ প্রদানের একটি বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। এই চার্জ আরোপ করা হলে খরচ আরো কয়েক হাজার টাকা বাড়বে। এ ক্ষেত্রে উপরি উক্ত অঙ্কের অর্থ ছাড়াও হোটেল ও গাড়ি ভাড়ার টাকারও ২০ শতাংশ যুক্ত হতে পারে। আজকালের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বাংলাদেশে সফরত একটি সৌদি উমরাহ্ ব্যবস্থাপনাকারী কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার মাহির কে ফাত্তা গতকাল এক প্রশ্নের জবাবে জানান, সৌদি সরকার উমরাহ্র জন্য যে ফি ও অন্যান্য চার্জ নির্ধারণ করেছে তাতে হোটেল এবং যাতায়াতের খরচ বাদ দিয়েও আগের তুলনায় অতিরিক্ত ৩৫০ রিয়ালের কম-বেশি প্রদান করতে হতে পারে। এতে সৌদি উমরাহ্ কোম্পানিগুলোর কোনো হাত নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সৌদি সরকারের নির্দেশনার বাইরে সেখানে কারো কিছু বলার থাকে না।
এর আগে উমরাহ্ ভিসার জন্য এজেন্সিগুলোকে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ রিয়াল পরিশোধ করতে হতো। এই অর্থ সৌদি কোম্পানিগুলোর সার্ভিস চার্জসহ অন্যান্য কিছু চার্জের নামে নেয়া হতো। সৌদি উমরাহ্ কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতামূলকভাবে তাদের ভিসা প্রতি সার্ভিস চার্জ ৪০ রিয়াল থেকে শুরু করে ১০০ রিয়াল পর্যন্ত গ্রহণ করত। গাড়ি ভাড়া বাবদ গ্রহণ করত আরো ৫০ থেকে ৭০ রিয়াল। এ ক্ষেত্রে ভিসা প্রদান করা ছাড়া সৌদি হজ ও উমরাহ্ মন্ত্রণালয়ের অন্য কোনো দায় দায়িত্ব ছিল না এবং কোনো রকমের ফিও নিত না। আগের নিয়মে একটি হোটেল দেখিয়ে দিলেই হতো। কেউ চাইলেই কোনো উমরাহ্ এজেন্সি থেকে তাদের সার্ভিস চাজসহ ৭ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ করে উমরাহ্ ভিসা নিয়ে নিজের উদ্যোগে উমরাহ্ পালনে চলে যেতে পারত। এ বছর থেকে সেটি আর সম্ভব নয়। ভিসা ফিসহ অন্যান্য চার্জ ছাড়াও হোটেল বা বাড়ি ভাড়া এবং গাড়ির ভাড়া আগাম পরিশোধ করতে হবে।
পল্টনস্থ আবাবিল হজ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো: আবু ইউসুফ জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত আমরা যা জানতে পেরেছি তাতে দেখছি এবার অন্যান্য বছরের উমরাহ্র খরচ আনুমানিক ১০ হাজার টাকা বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা মনে করছি। বাংলাদেশে মাত্র বৈধ উমরাহ্ এজেন্সির নাম প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা এখন সৌদি কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআইনসহ সংশ্লিষ্টদের অনুমোদন নিয়ে সৌদি হজ ও উমরাহ্ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার পরই তারা অনুমোদন দিলেই অনলাইনে মোফার জন্য আবেদন করতে পারব। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি সময় থেকে আশা করছি আমরা উমরাহ্র মোফার আবেদন শুরু করতে পারব। অনলাইনে অর্থ পরিশোধ দেখাতে গেলেই তখনই আমরা প্রকৃতপক্ষে আইবিএএন এ কত হারে পরিশোধ করতে হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলতে পারব। এই উমরাহ্ ব্যবস্থাপনাকারী এজেন্সি মালিক বলেন, আমরা আপাতত আমাদের উমরাহ্যাত্রীদের অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা লাগবে জানিয়ে রাখছি। তিনি বলেন, প্রথম দিকে কিছু সংবাদমাধ্যমে উমরাহ্ খরচ কমবে মর্মে ভুল তথ্য পরিবেশিত হওয়ার কারণে কিছু বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আসলে এর আগে তো উমরাহ্র ওপর সরকারের কোনো ফি ছিল ই না। এখন নতুন করে ৩০০ রিয়াল ধার্য হয়েছে।
সফররত মক্কাস্থ ‘পাইওনিয়ার ভিশন কোম্পানি’ নামে এই সৌদি উমরাহ্ কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মাহির কে ফাত্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, উমরাহ্ এজেন্সিগুলোর জন্য এ বছর সৌদি সরকার ১০৫ রিয়াল সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করে দিয়েছে। সৌদি সরকার অনুমোদিত সংস্থা মুনাচ্ছার মাধ্যমে উমরাহ্যাত্রীদের পরিবহন, হোটেল বুকিং এবং ভিসা ফি গ্রহণ করে অনলাইনে উমরাহ্ মোফাহ ইস্যু হবে। এ ক্ষেত্রে উমরাহ্ এজেন্সিগুলো এয়ারপোর্টে উমরাহ্ যাত্রীদের রিভিস করে গাড়িতে ওঠিয়ে দেয়া এবং ফেরার সময় সময়মতো গাড়ির জন্য মুনাচ্ছার সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা করে দেয়া ছাড়া বড় ধরনের কোনো কাজ থাকবে না সৌদি উমরাহ্ কোম্পানিগুলোর। তবে উমরাহ্ যাত্রীদের সৌদি আরব গমন এবং সময়মতো ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে সে জন্য উমরাহ্ এজেন্সিগুলোকেই জবাবদিহিতা করতে হবে।
মাহির কে ফাত্তাহ বাংলাদেশের উমরাহ্ কোম্পানির সাথে ব্যবসায়িক যোগাযোগের জন্য এসেছেন। তার কোম্পানির উমরাহ্ ব্যবস্থাপনার তিনটি লাইসেন্স রয়েছে জানিয়ে বলেন, গতকাল পর্যন্ত ৯টি বাংলাদেশী এজেন্সি তার কোম্পানির সাথে উমরাহ্ ব্যবস্থাপনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। একটি লাইসেন্সের বিপরীতে একটি সৌদি উমরাহ্ কোম্পানি একটি দেশের পাঁচটি উমরাহ্ এজেন্সির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সৌদি আরবে বর্তমানে ছয় শতাধিক উমরাহ্ কোম্পানি রয়েছে। বাংলাদেশের এক একটি উমরাহ্ এজেন্সির উমরাহ্ যাত্রীর কোটা এক হাজার জন। প্রথম দফায় ২৪৫টি বৈধ উমরাহ্ এজেন্সির নাম প্রকাশ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। প্রতি বছর চার শতাধিক উমরাহ্ এজেন্সি উমরাহ্ যাত্রী প্রেরণ করে থাকে। গত বছর উমরাহ্ মওসুমে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষ উমরাহ্ পালন করেছে।
সৌদি সরকার হজ ও উমরাহ্ ভিসার জন্য নতুন করে ৩০০ রিয়াল ধার্য করলেও তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার উমরাহ্র ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২০০০ রিয়াল প্রদানের যে বাধ্যবাধতা ছিল তা রাষ্ট্রীয় আদেশের মাধ্যমে তুলে নিয়েছেন। ফলে এখন কোনো ব্যক্তি নির্ধারিত ফি প্রদান করে যেকোনো সময়ই একাধিকবার উমরাহ্ পালন করতে পারবেন। এর ফলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব থেকে উমরাহ্ যাত্রী অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এ ব্যাপারে নয়া দিগন্তকে বলেন, একাধিকবার উমরাহ্র ওপর থেকে ২০০০ রিয়ালের বাধ্যবাধতা তুলে নেয়ার বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। একইভাবে হজের ওপরও থেকে এটি তুলে নেয়া হয়েছে কি না সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই দাবি সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে আগেই ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
ধর্ম মন্ত্রণালয়র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, উমরাহ্ ব্যবস্থাপনায় লাইসেন্স নবায়ন ও খোঁজখবর রাখা ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়র কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে এবার এজেন্সিগুলো জাতীয় হজ ও উমরাহ্ নীতির আলোকে সাতটি শর্তে উমরাহ্ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফলে উমরাহ্ কার্যক্রমের যাবতীয় ব্যয় বিবরণী হলফনামাসহ জমা দেয়া এবং উমরাহ্ মওসুম শেষে তাদের উমরাহ্ যাত্রীদের আসা-যাওয়ার পুরো তথ্য আশকোনা হজ অফিসকে অবহিত করার শর্ত রয়েছে এতে।
গত উমরাহ্ মওসুমে উমরাহ্ এসেন্সিগুলো প্রথম দিকে সব খরচ মিলিয়ে সর্বনিন্ম ৬৫ হাজার টাকা থেকে ওপরের দিকে উমরাহ্ প্যাকেজ দিয়েছিল। যদিও পরে মধ্যপ্রাচ্যগামী বিমানের ফ্লাইটের সঙ্কটের কারণে শেষের দিকে প্যাকেজ মূল্য অনেক বেড়ে যায়।
সূত্র: হজ্জ নিউজ .কম .বিডি