হজ্জ ও উমরা পালনকারীদের কতিপয় ভুলভ্রান্তি সমূহ
 

কঙ্কর নিক্ষেপের সময় সংঘটিত ভুলভ্রান্তিগুলো

আলহামদুলিল্লাহ।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি কোরবানির দিন সকাল বেলা জমরাতুল আকাবাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন; যেটি সর্বশেষ জমরাত ও মক্কার নিকটবর্তী। প্রত্যেকটি কঙ্কর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলেছেন। কঙ্করগুলো ছিল আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নিক্ষেপ করার মত কঙ্কর অর্থাৎ ছোলার চেয়ে কিছুটা বড়।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জমরাতুল আকাবাতে কঙ্কর নিক্ষেপের দিন ভোরে তাঁর সওয়ারীর পিঠে আরোহিত অবস্থায় আমাকে বললেন: আমার জন্য (কঙ্কর) কুড়িয়ে আন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন: আমি তাঁর জন্য কঙ্কর কুড়িয়ে আনলাম; সেগুলো আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে ছুড়ে মারা যায় এমন। তিনি সেগুলো নিজের হাতে রেখে বললেন: আপনারা এগুলোর মত কঙ্কর নিক্ষেপ করুন…। দ্বীনের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে সাবধান থাকুন। কেননা আপনাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণ দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে ধ্বংস হয়েছে।”[সুনানে ইবনে মাজাহ (৩০২৯), শাইখ আলবানী ‘সহিহ ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে (২৪৫৫) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “বায়তুল্লাহ্‌ তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়ার মাঝে প্রদক্ষিণ করা ও জমরাতগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপ করার বিধান আল্লাহ্‌ যিকির (স্মরণ) কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আরোপ করা হয়েছে।”[মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে আবু দাউদ] এটাই হচ্ছে জমরাতগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপ করার হেকমত বা গূঢ় রহস্য।

কঙ্কর নিক্ষেপ করার সময় হাজীসাহেবগণ যে সব ভুল করে থাকেন সেগুলো কয়েক ধরণের হতে পারে:

 

এক:

কেউ কেউ মনে করেন যে, মুযদালিফা থেকে কঙ্কর সংগ্রহ করা না হলে কঙ্কর নিক্ষেপ সহিহ হবে না। এ কারণে আপনি দেখবেন যে, তারা মীনাতে পৌঁছার আগে মুযদালিফা থেকে কঙ্কর কুড়াতে গিয়ে ক্লান্ত হচ্ছেন। এটি ভুল ধারণা। বরং কঙ্কর যে কোন স্থান থেকে সংগ্রহ করা যাবে; মুযদালিফা থেকে, মীনা থেকে, কিংবা অন্য যে কোন স্থান থেকে। উদ্দেশ্য হচ্ছে কঙ্কর হওয়া।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এমন কোন বর্ণনা আসেনি যে, তিনি মুযদালিফা থেকে কঙ্কর সংগ্রহ করেছেন যাতে করে আমরা বলব যে, সেটা সুন্নাহ। সেটা সুন্নাহ নয়। মুযদালিফা থেকে কঙ্কর সংগ্রহ করা ওয়াজিব নয়। কারণ সুন্নাহ হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা, কাজ বা অনুমোদন। এর কোনটি মুযদালিফা থেকে কঙ্কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে পাওয়া যায়নি।

 

দুই:

কেউ কেউ কঙ্কর সংগ্রহ করে সেগুলোকে ধৌত করেন: এই সতর্কতা থেকে যে, কেউ হয়তো কঙ্করের উপর পেশাব করে রেখেছে কিংবা কঙ্করগুলোকে পরিষ্কার করার উদ্দেশ্য থেকে– এই ধারণা থেকে যে, কঙ্করগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া উত্তম। কারণ যেটাই হোক না কেন কঙ্কর ধৌত করা বিদাত। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা করেননি। যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেননি ইবাদতের উদ্দেশ্যে সে কাজ করা বিদাত। আর ইবাদতের উদ্দেশ্যে না হলে এমন কাজ করা বোকামি ও সময় নষ্ট।

 

তিন:

কেউ কেউ ধারণা করে যে, এ জমরাতগুলো শয়তান এবং তারা শয়তানকেই কঙ্কর নিক্ষেপ করছে। এ কারণে আপনি দেখবেন যে, কেউ কেউ তীব্র রাগ, ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়াশীল আসে; যেন শয়তান তার সামনে। এরপর এই জমরাতগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপ করে। যার ফলে নিম্নোক্ত অনিষ্টগুলো ঘটে থাকে:

১। এমন ধারণা ভুল। বরং আমরা এই জমরাতগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপ করি আল্লাহ্‌র যিকিরকে বুলন্দ করার জন্য, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করে এবং ইবাদত হিসেবে। কেননা কোন মানুষ যদি কোন নেকীর কাজের উপকারিতা না জানা সত্ত্বেও সেটা পালন করে সে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র ইবাদত হিসেবেই সেটা করে। এটি আল্লাহ্‌র প্রতি তার পরিপূর্ণ নতিস্বীকার ও পূর্ণ আনুগত্যের প্রমাণ।

২। কেউ কেউ তীব্র প্রতিক্রিয়া, ক্রোধ, রাগ, শক্তি ও আবেগ তাড়িত হয়ে কঙ্কর মারতে আসে। আপনি দেখবেন যে, এতে করে সে ব্যক্তি অন্য মানুষকে কঠিন কষ্ট দেয়; যেন তার সামনের মানুষগুলো কোন কীটপতঙ্গ, তাদেরকে কোন পরোয়াই সে করে না, দুর্বলদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না। সে উত্তেজিত উটের মত সামনের দিকে আগাতে থাকে।

৩। ব্যক্তি এ কথা মনে রাখে না যে, সে আল্লাহ্‌র ইবাদত করতে এসেছে কিংবা এই কঙ্কর নিক্ষেপের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র জন্য একটি ইবাদত পালন করছে। এ কারণে সে ব্যক্তি শরিয়ত অনুমোদিত যিকির-আযকার বাদ দিয়ে শরিয়তে অনুমোদন নেই এমন কথাবার্তা বলে। আপনি দেখবেন যে, কঙ্কর মারার সময় সে ব্যক্তি বলছে: ‘হে আল্লাহ্‌! শয়তানকে অসন্তুষ্টকরণ ও রহমানকে সন্তুষ্ট করণস্বরূপ’। অথচ কঙ্কর মারার সময় এমন কথা বলা শরিয়তসম্মত নয়। বরং শরিয়তের বিধান হচ্ছে- তাকবীর বলা, যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন।

৪। এ ভ্রান্ত আকিদার কারণে দেখা যায় যে, তিনি বড় বড় পাথর নিয়ে সেগুলো নিক্ষেপ করছেন। তার ধারণা হচ্ছে পাথর যত বড় হবে শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষেত্রে সেটা ততবেশী কার্যকর হবে। আপনি দেখবেন, এমন লোকেরা জুতা ছুড়ে মারছেন, কাষ্ঠখণ্ড ও এ জাতীয় অন্য কিছু ছুড়ে মারছেন; যেগুলো ছুড়ে মারা জায়েয নয়।

আচ্ছা, আমরা যখন বলছি যে, এমন বিশ্বাস ভ্রান্ত-বিশ্বাস তাহলে জমরাতে কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে কী ধরণের বিশ্বাস রাখব? জমরাতগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস রাখব যে, আমরা আল্লাহ্‌র মহত্ব প্রকাশ ও আল্লাহ্‌র ইবাদত পালন হিসেবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণ হিসেবে এ আমলটি করছি।

 

চার:

কঙ্কর কি নিক্ষেপ করার জন্য নির্ধারিত স্থানে পড়ল, নাকি পড়ল না– কেউ কেউ আছেন এ ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দেন না ও ভ্রুক্ষেপ করেন না।

নিক্ষিপ্ত কঙ্করটি নির্ধারিত স্থানে না পড়লে সে নিক্ষেপ করা সহিহ হবে না। তবে, যদি প্রবল ধারণা হয় যে, কঙ্করটি নির্ধারিত স্থানে পড়েছে তাহলে সেটা যথেষ্ট। পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া শর্ত নয়। কারণ এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া সম্ভবপর নয়। যদি কোন ক্ষেত্রে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া সম্ভবপর না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে আমল করা হয়। কারণ শরিয়তপ্রণেতা নামাযে সন্দেহ হলে: কয় রাকাত পড়া হয়েছে, তিন রাকাত; নাকি চার রাকাত; সেক্ষেত্রে প্রবল ধারণার উপর আমল করার কথা বলেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সে ব্যক্তি যেন কোনটা সঠিক সেটা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে; এরপর এর ভিত্তিতে বাকী নামায শেষ করে।”[সুনানে আবু দাউদ (১০২০)]

এ হাদিস থেকে জানা যায় যে, ইবাদতের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে প্রবল ধারণা যথেষ্ট। এটি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে সহজতা। কেননা কখনও কখনও ইয়াকীন বা নিশ্চিত জ্ঞান অসম্ভব হতে পারে।

যদি কঙ্করগুলো হাউজের ভিতরে পড়ে এতেই ব্যক্তির দায়িত্ব মুক্ত হবে; চাই সেটা হাউজের ভেতরে থেকে যাক; কিংবা গড়িয়ে গড়িয়ে নীচে পড়ে যাক।

 

পাঁচ:

কেউ কেউ ধারণা করেন যে, কঙ্কর নিক্ষেপ স্থলে যে পিলার রয়েছে সে পিলারের গায়ে কঙ্করটি লাগতে হবে। এটি ভুল ধারণা। কারণ কঙ্কর নিক্ষেপ সহিহ হওয়ার জন্য কঙ্করটি পিলারের গায়ে লাগা শর্ত নয়। কেননা এ পিলার নির্মাণ করা হয়েছে নিক্ষেপের জায়গাটি, অর্থাৎ যেখানে গিয়ে কঙ্করগুলো পড়ে; সেটা চিহ্নিত করার আলামত হিসেবে। কঙ্করটি যদি নিক্ষেপের জায়গায় গিয়ে পড়ে তাহলে সেটাই যথেষ্ট; পিলারের গায়ে লাগুক বা না-লাগুক।

 

ছয়:

এ ভুলটি মারাত্মক ভুল। কিছু কিছু মানুষ কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে অবহেলা করেন। তাদের শারীরিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা অন্যকে কঙ্কর মারার দায়িত্ব দেন। এটি মহা ভুল। কারণ কঙ্কর নিক্ষেপ হজ্জের অন্যতম একটি আমল। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তোমরা হজ্জ ও উমরা আল্লাহ্‌র জন্য পরিপূর্ণ কর”।[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯৬] এ আয়াতটির বিধান যাবতীয় কর্মসহ হজ্জ সম্পন্ন করাকে অন্তর্ভুক্ত করে। তাই মানুষের উপর ওয়াজিব হচ্ছে হজ্জের কার্যাবলী নিজেই পালন করা এবং অন্য কাউকে দায়িত্ব না দেয়া।

কেউ কেউ বলেন: তীব্র ভিড়, আমার জন্য কষ্টকর। আমরা তাকে বলব: মানুষ যখন প্রথম ধাপে মুযদালিফা হতে মীনাতে ফিরে আসেন তখন তীব্র ভিড় হলেও দিনের শেষভাগে তীব্র ভিড় থাকে না, রাতে তীব্র ভিড় থাকে না। যদি আপনি দিনের বেলায় কঙ্কর মারতে না পারেন তাহলে রাতে মারুন। কেননা রাতও কঙ্কর নিক্ষেপ করার সময়। যদিও দিনে কঙ্কর মারা অধিক উত্তম। কিন্তু, কেউ যদি রাতের বেলা ধীরেসুস্থে, শান্তভাবে, বিনয়-নম্র হয়ে কঙ্কর মারতে পারে সেটা দিনের বেলা ভিড়ের কারণে মৃত্যুর ভয় নিয়ে, কষ্ট-ক্লেশের মধ্যে কঙ্কর মারার চেয়ে উত্তম। হতে পারে সে ব্যক্তি কঙ্কর মারবে ঠিক কিন্তু কঙ্করগুলো সঠিক স্থানে পড়বে না। সারকথা হল: যে ব্যক্তি ভিড়ের কথা বলবে আমরা তাকে বলব: আল্লাহ্‌ বিষয়টিকে প্রশস্ত করে দিয়েছেন। সুতরাং আপনি রাতের বেলায় কঙ্কর মারতে পারেন।

অনুরূপভাবে কোন নারী যদি মানুষের ভিড়ে কঙ্কর মারা নিজের জন্য বিপদজনক মনে করেন তাহলে তিনি পরে রাতের বেলায় কঙ্কর মারতে পারেন। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যারা শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন, যেমন- সাওদা বিনতে যামআ ও তার মত অন্যরা, তাদেরকে কঙ্কর নিক্ষেপ বর্জন করে অন্যকে দায়িত্ব দেয়ার সুযোগ দেননি (যদি সেটা জায়েয কাজ হত)। বরং তিনি তাদেরকে শেষ রাত্রিতে মুযদালিফা ত্যাগ করার অনুমতি দিয়েছিলেন; যাতে করে তারা মানুষের ভিড়ের আগে কঙ্কর মারতে পারেন। এটি সবচেয়ে বড় দলিল যে, শুধু নারী হওয়ার কারণে নিজে কঙ্কর না মেরে অন্যকে দায়িত্ব দেয়া জায়েয নয়।

হ্যাঁ, যদি ধরে নেয়া হয় যে, কেউ অক্ষম এবং তার পক্ষে নিজে নিজে কঙ্কর মারা সম্ভবপর নয়; দিনেও নয়, রাতেও নয়– তার ক্ষেত্রে অন্যকে দায়িত্ব দেয়া জায়েয আছে। কেননা সে ব্যক্তি অক্ষম। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা তাদের বাচ্চাদের পক্ষ থেকে কঙ্কর মারতেন; বাচ্চারা কঙ্কর মারতে অক্ষম হওয়ার কারণে।

মোদ্দাকথা হচ্ছে: যে অক্ষমতার কারণে কেউ নিজে কঙ্কর মারতে পারে না সে অক্ষমতা ব্যতীত হাজীসাহেব কর্তৃক অন্যকে কঙ্কর মারার দায়িত্ব দেয়া বড় ধরণের ভুল। কেননা এটি ইবাদত পালনে অবহেলা এবং ওয়াজিব বা আবশ্যকীয় কাজ পালনে অলসতা।

 

 

মুযদালিফার পথে ও মুযদালিফাতে যে ভুলগুলো হয়ে থাকে

 

আলহামদুলিল্লাহ।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: আরাফার ময়দান থেকে মুযদালিফায় আসার ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো ঘটে থাকে এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

 

এক:

আরাফা থেকে মুযদালিফাতে আসার সময় হাজীসাহেবগণ একে অপরের সাথে ধাক্কাধাক্কি করা। অতি দ্রুত চলা; যার ফলে কখনও কখনও গাড়ীর সাথে এক্সিডেন্ট হয়। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার ময়দান থেকে ধীরস্থিরে রওয়ানা হয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রওয়ানা হওয়ার পর তাঁর উটনী ‘কাসওয়া’ এর লাগাম টেনে ধরে তাঁর সম্মানিত হাত দিয়ে বলেছেন: ওহে ভাইসব! ধীরে চলুন, ধীরে চলুন। তবে তা সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনি খালি জায়গা পেয়েছেন দ্রুত চলেছেন। যখন কোন টিলা পার হতেন তখন উটের লাগাম ঢিল করে দিতেন, যাতে করে উটনীটি উপরে উঠতে পারে। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখতেন। কিন্তু, যখন বিষয়টি এমন হবে যে, জোরে চলা উত্তম; নাকি আস্তে চলা; সেক্ষেত্রে আস্তে চলাই উত্তম।

 

দুই:

কিছু কিছু মানুষ মুযদালিফাতে না পৌঁছেই অবস্থান গ্রহণ করেন। বিশেষতঃ যারা হেঁটে হেঁটে যান তারা। হাঁটতে হাঁটতে তারা ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে অক্ষম হয়ে পড়েন। যার ফলে তারা মুযদালিফাতে পৌঁছার আগেই অবস্থান গ্রহণ করেন। ফজরের নামায আদায় করা পর্যন্ত তারা সেখানে থেকে যান। এরপর তারা সেখান থেকে মীনার উদ্দেশ্যে গমন করেন। যে ব্যক্তি এমনটি করেছে তার মুযদালিফাতে রাত্রি যাপন ছুটে গেছে। এটি খুবই জঘন্য বিষয়। কারণ মুযদালিফাতে রাত্রি যাপন কোন কোন আলেমের মতে, হজ্জের একটি রুকন। জমহুর আলেমের মতে, এটি হজ্জের একটি ওয়াজিব। আর কোন কোন আলেমের মতে, এটি সুন্নত। সঠিক অভিমত হচ্ছে- এটি ওয়াজিব এবং হাজীসাহেবের কর্তব্য হচ্ছে- মুযদালিফাতে রাত্রি যাপন করা এবং শরিয়তপ্রণেতা যে নির্দিষ্ট সময়ের আগে মুযদালিফা ত্যাগ করার অনুমতি দেয়নি সে সময়ের আগে মুযদালিফা ত্যাগ না করা। অচিরেই সে আলোচনা আসবে।

 

তিন:

কিছু কিছু মানুষ মুযদালিফাতে পৌঁছার আগে পথিমধ্যে সাধারণ অবস্থার মত মাগরিব ও এশার নামায আদায় করে ফেলেন; এটি সুন্নতের বরখেলাফ। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পথিমধ্যে নামলেন এবং প্রস্রাব করে ওযু করলেন তখন উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌? তখন তিনি বললেন: নামায সামনে।”[সহিহ বুখারী (১৬৬৯) ও সহিহ মুসলিম (১২৮০)] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবেই থাকলেন। মুযদালিফাতে পৌঁছে তিনি নামায আদায় করলেন। এশার নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশ করার পর তিনি মুযদালিফাতে পৌঁছেছেন। তিনি মাগরিব ও এশার নামায জময়ে-তাখির (বিলম্বে একত্রীকরণ) করে আদায় করেছেন।

 

চার:

কিছু কিছু মানুষ এশার নামাযের ওয়াক্ত পার হয়ে গেলেও মুযদালিফাতে না পৌঁছার কারণে মাগরিব-এশার নামায আদায় করেন না। এটি জায়েয নয়; বরং হারাম ও কবিরা গুনাহ। কারণ কুরআন-হাদিসের দলিলের ভিত্তিতে, নামাযকে তার নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্বে আদায় করা হারাম। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করা মুমিনদের উপর অবশ্য কর্তব্য।”[সূরা নিসা, আয়াত: ১০৩] নামাযের এ সময়সীমা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সীমারেখা লঙ্ঘন করে সে নিজের উপর অত্যাচার করে।”[সূরা ত্বালাক, আয়াত: ১] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “আর যারা আল্লাহ্‌র সীমারেখা লঙ্ঘন করে তারাই যালিম।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২২৯] অতএব, হাজীসাহেব যদি এই আশংকা করেন যে, মুযদালিফাতে পৌঁছার আগেই এশার নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে সেক্ষেত্রে তাঁর উপর আবশ্যক হচ্ছে- নামায আদায় করে নেয়া। এমনকি মুযদালিফাতে না পৌঁছলেও; তিনি যে অবস্থায় আছেন সে অবস্থাতেই নামায আদায় করে নিবেন। যদি তিনি পদব্রজী হন তাহলে দাঁড়িয়ে কিয়াম ও রুক-সিজদাসহ নামায আদায় করে নিবেন। আর যদি আরোহী হন এবং নামা সম্ভবপর না হয় তাহলে গাড়ীতে থেকে হলেও নামায আদায় করে নিবেন। এর দলিল হচ্ছে আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী: “তোমরা আল্লাহ্‌কে সাধ্যানুযায়ী ভয় কর।”[সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬] যদিও গাড়ী থেকে নামতে না পারার সম্ভাবনাটি একেবারেই দূরবর্তী। কারণ প্রত্যেক মানুষই রাস্তার ডানপার্শ্বে বা বামপার্শ্বে নেমে নামায পড়তে পারেন।

মোটকথা: কারো জন্য মাগরিব ও এশার নামায আদায়ে এত বিলম্ব করা জায়েয হবে না যাতে করে এশার ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়– এই যুক্তিতে যে, তিনি সুন্নাহ্‌র অনুসরণ করতে চান এবং মুযদালিফাতে না পৌঁছে নামায পড়বেন না। কেননা এত দেরী করাটা সুন্নাহ্‌র বরখেলাফ। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেরী করেছেন ঠিক; তবে তিনি ওয়াক্তের মধ্যে নামায আদায় করেছেন।

 

পাঁচ:

কিছু কিছু হাজীসাহেব ফজরের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার আগেই নামায পড়ে ফেলেন। নামায পড়েই তারা রওয়ানা হয়ে যান। এটি মারাত্মক ভুল। কারণ ওয়াক্ত হওয়ার আগে নামায আদায় করলে নামায কবুল হবে না। বরং তা হারাম কাজ। কেননা সেটি আল্লাহ্‌র সীমারেখার লঙ্ঘন। যেহেতু নামাযের ওয়াক্ত নির্ধারিত। শরিয়ত ওয়াক্তের শুরু ও শেষ নির্ধারণ করে দিয়েছে। অতএব, কারো জন্য ওয়াক্ত হওয়ার আগে নামায আদায় করা জায়েয নয়।

এ কারণে হাজীসাহেবের উপর আবশ্যক হল এ বিষয়ে সাবধান থাকা এবং ফজরের ওয়াক্ত হওয়া নিশ্চিত হওয়ার পর বা প্রবল ধারণা হওয়ার পর ফজরের নামায আদায় করা। এটা ঠিক যে, মুযদালিফাতে ফজরের নামায আগে আগে আদায় করা বাঞ্ছনীয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগে আগে আদায় করেছেন। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, ওয়াক্ত হওয়ার আগে নামায পড়া হবে। সুতরাং এ ব্যাপারে হাজীসাহেবগণ সতর্ক থাকুন।

 

ছয়:

কিছু কিছু হাজীসাহেব মুযদালিফাতে কিছুমাত্র সময়ও অবস্থান না করে মুযদালিফা ত্যাগ করেন। আপনি দেখবেন, তিনি চলার মধ্যেই আছেন এবং অতিক্রম করে যাচ্ছেন; থামছেন না। তিনি বলেন: অতিক্রম করে যাওয়াই তো যথেষ্ট। এটি মহা ভুল। কারণ অতিক্রম করা যথেষ্ট নয়। বরং সুন্নাহ্‌ প্রমাণ করে যে, হাজীসাহেব মুযদালিফাতে ফজরের নামায পড়া পর্যন্ত অব্স্থান করবেন। এরপর আল-মাশআরুল হারামের নিকটে অবস্থান করে খুব ফর্সা হওয়া (খুব ফর্সা হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- সূর্যোদয়ের পূর্বে দিনের আলো ছড়িয়ে পড়া) পর্যন্ত আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করবেন। এরপর মীনার উদ্দেশ্যে মুযদালিফা ত্যাগ করবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পরিবারের মধ্যে যারা শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন তাদেরকে রাত থাকতেই মুযদালিফা ত্যাগ করার অনুমতি দিয়েছেন। আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) চন্দ্র অস্ত যাওয়ার অপেক্ষায় থাকতেন। চন্দ্র অস্ত গেলে তিনি মুযদালিফা হতে মীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতেন।

(ওজরগ্রস্তদের) আগে চলে যাওয়ার সময়টা চন্দ্র অস্ত যাওয়ার সাথে নির্দিষ্ট করা বাঞ্ছনীয়। কেননা এটা একজন সাহাবীর আমল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পরিবারের যারা দুর্বল ছিলেন তাদেরকে রাতে মুযদালিফা ত্যাগ করার অনুমতি দিয়েছেন; কিন্তু রাতের কখন তারা মুযদালিফা ত্যাগ করবে সেটা তিনি স্পষ্ট করেননি। এ সাহাবীর এ আমল সে অস্পষ্টতাকে স্পষ্ট করে দিচ্ছে। তাই দুর্বল ও অন্য যাদের জন্য মানুষের ভিড়ে গমন করা কষ্টকর তাদের মুযদালিফা ত্যাগ করার জন্য এ সময়টিকে তথা চন্দ্র অস্ত যাওয়াকে নির্দিষ্ট করা বাঞ্ছনীয়। মাসের ১০ তারিখ রাতের চন্দ্র নিশ্চিতভাবে মধ্যরাতের পরেই অস্ত যাবে এবং তখন রাতের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কেটে যাবে।

 

সাত:

কিছু কিছু মানুষ মুযদালিফার রাত নামায আদায়, কুরআন তেলাওয়াত ও যিকিরের মাধ্যমে কাটায়। এটি সুন্নাহ বিরোধী। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ রাতে এ ধরণের কোন ইবাদত করেননি। বরং সহিহ মুসলিমে জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এশার নামায আদায় করার পর ফজর হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম করেছেন। ফজর হওয়ার পর তিনি ফজরের নামায আদায় করেছেন। এ হাদিস প্রমাণ করে যে, ঐ রাতে কোন তাহাজ্জুদের নামায, ইবাদত বন্দেগী, তাসবিহ, যিকির-আযকার বা কুরআন তেলাওয়াত নেই।

 

আট:

কিছু কিছু হাজীসাহেব সূর্যোদয় পর্যন্ত মুযদালিফাতে অবস্থান করেন এবং মুযদালিফাতে ইশরাকের নামায আদায় করেন; এরপর রওয়ানা হন। এটিও ভুল। কেননা তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের খেলাফ এবং মুশরিকদের আদর্শের মোতাবেক। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুযদালিফা থেকে আকাশ ভালভাবে ফর্সা হওয়ার পর সূর্যোদয়ের আগেই রওয়ানা হয়েছেন। আর মুশরিকেরা সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করত।

অতএব, যে ব্যক্তি সূর্যোদয় পর্যন্ত সময় আল্লাহ্‌র ইবাদত হিসেবে অপেক্ষা করবে সেটা মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যাবে এবং সাইয়্যেদুল মুরসালিন এর সুন্নতের খেলাফ হবে।

 

 

 তাওয়াফকালে যে ভুলগুলো সংঘটিত হয়ে থাকে

 

আলহামদুলিল্লাহ।

এগুলো এমন কিছু ভুল যেগুলো তাওয়াফ করাকালে সংঘটিত হয়ে থাকে। এ ভুলগুলো কয়েক ধরণের:

 

এক:

তাওয়াফের শুরুতে নিয়ত উচ্চারণ করা। আপনি দেখবেন যে, কিছু হাজীসাহেব যখন তাওয়াফ শুরু করতে চাচ্ছেন তখন তিনি হাজারে আসওয়াদ অভিমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে বলছেন: “হে আল্লাহ্‌! আমি উমরার জন্য সাত চক্কর তাওয়াফ করার নিয়ত করছি”, কিংবা বলছেন: “হে আল্লাহ্‌! আমি হজ্জের জন্য সাত চক্কর তাওয়াফ করার নিয়ত করছি”। কিংবা বলছেন: “হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার নৈকট্য হাছিলের জন্য সাত চক্কর তাওয়াফ করার নিয়ত করছি”।

নিয়ত উচ্চারণ করা বিদাত। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা করেননি এবং তাঁর উম্মতকে সেটা করার নির্দেশ দেননি। যে ব্যক্তি এমন কোনভাবে আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে যেভাবে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবাদত করেননি কিংবা তিনি তা করার জন্য তাঁর উম্মতকে নির্দেশ দেননি তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র দ্বীনের মধ্যে বিদাত (নতুন বিষয়) চালু করল; যা তাঁর দ্বীনে নেই। অতএব, তাওয়াফকালে নিয়ত উচ্চারণ করা ভুল ও বিদাত। শরয়ি দিক থেকে এটি যেমন ভুল তেমনি বিবেকের বিবেচনায়ও এটি ভুল। নিয়ত উচ্চারণ করার কী আবেদন থাকতে পারে? যেহেতু নিয়ত হচ্ছে আপনি ও আপনার রবের মধ্যস্থিত বিষয়। আল্লাহ্‌ তাআলা আপনার অন্তস্থিত বিষয় সম্যক অবহিত। তিনি অবহিত যে, অচিরেই আপনি এ তাওয়াফটি পালন করবেন। আল্লাহ্‌ যেহেতু জানেন অতএব, আল্লাহ্‌র বান্দাদের কাছে এটি প্রকাশ করার কোন প্রয়োজন নেই।

আপনার পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওয়াফ করেছেন, কিন্তু তিনি তো তাওয়াফের সময় নিয়ত উচ্চারণ করেননি। আপনার পূর্বে সাহাবায়ে কেরাম তাওয়াফ করেছেন, তারা তো নিয়ত উচ্চারণ করেননি। অন্য ইবাদতের ক্ষেত্রেও করেননি। অতএব, এটি ভুল।

 

দুই:

কিছু তাওয়াফকারী হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামেনী স্পর্শ করাকালে তীব্র ধাক্কাধাক্কি করেন; যার কারণে সে ব্যক্তি নিজেও কষ্ট পান এবং অন্যদেরকেও কষ্ট দেন। হতে পারে কখনও কোন মহিলার সাথে ধাক্কাধাক্কি করেন। এক পর্যায়ে শয়তান তাকে প্ররোচিত করে ফলে এ সংকীর্ণ স্থানে এ মহিলার সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে গিয়ে তার অন্তরে কামনা-বাসনা জেগে উঠে। মানুষ রক্ত-মাংসের মানুষ। যে কোন সময় তার উপর কু-আত্মা ভর করতে পারে। ফলে বায়তুল্লাহ্‌র সামনেও সে এ ধরণের গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। এ স্থানে এমন কাজ জঘন্য গর্হিত। যদিও সকল স্থানেই এমন কাজ ফিতনা।

হাজারে আসওয়াদ কিংবা রুকনে ইয়ামেনী স্পর্শ করাকালে তীব্র ধাক্কাধাক্কি করা শরিয়ত অনুমোদিত নয়। বরং যদি শান্তভাবে সেটা সম্ভবপর হয় তাহলে সেটা করা উচিত। আর যদি তা সম্ভবপর না হয় তাহলে আপনি হাজারে আসওয়াদের দিকে শুধু ইশারা করবেন। আর রুকনে ইয়ামেনীর দিকে ইশারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত নয় এবং হাজারে আওয়াদের উপর এটাকে কিয়াস করা যাবে না। কেননা হাজারে আসওয়াদের মর্যাদা রুকনে ইয়ামেনীর চেয়ে অনেক বেশি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি হাজারে আসওয়াদের দিকে ইশারা করেছেন।

এ অবস্থায় ধাক্কাধাক্কি করা যেমন শরিয়ত অনুমোদিত নয় তেমনি মহিলার সাথে ধাক্কাধাক্কি করলে এতে ফিতনাগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। অনুরূপভাবে এমন ধাক্কাধাক্কি মন ও চিন্তাকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়। কেননা মানুষ ধাক্কাধাক্কির মধ্যে অপ্রীতিকর কিছু কথা শুনেই থাকে। ফলে এ স্থান ত্যাগ করার পর ব্যক্তির নিজের উপর নিজের-ই রাগ হয়।

তাওয়াফকারীর উচিত সার্বক্ষণিক শান্ত ও ধীরস্থির থাকা; যাতে করে আল্লাহ্‌র আনুগত্যের অনুভূতি মনে জাগ্রত রাখা যায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “বায়তুল্লাহকে তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়ার মাঝে প্রদক্ষিণ ও জমরাতগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপ করার বিধান আল্লাহ্‌র স্মরণকে বুলন্দ করার জন্য আরোপ করা হয়েছে।”

 

তিন:

কিছু কিছু মানুষ ধারণা করে যে, হাজারে আসওয়াদ পাথরে চুমা না খেলে তাওয়াফ সহিহ হবে না এবং হাজারে আসওয়াদে চুমা খাওয়া তাওয়াফ শুদ্ধ হওয়ার জন্য, হজ্জ কিংবা উমরা শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত– এটি ভুল ধারণা। হাজারে আসওয়াদে চুমা খাওয়া সুন্নত। এটি স্বতন্ত্র সুন্নতও নয়। বরং তাওয়াফের একটি সুন্নত। তাওয়াফ ছাড়া অন্য সময় হাজারে আসওয়াদে চুমা খাওয়া সুন্নত মর্মে আমি জানি না। এর ভিত্তিতে আমরা বলব যেহেতু হাজারে আসওয়াদে চুমা খাওয়া সুন্নত; ওয়াজিব নয়, কিংবা শর্ত নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি হাজারে আসওয়াদে চুমা দিতে পারেনি আমরা বলব না যে, তার তাওয়াফ সহিহ নয়। কিংবা তার তাওয়াফ অপরিপূর্ণ; যে অপূর্ণতার কারণে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে। বরং তার তাওয়াফ সহিহ। আর যদি তীব্র ভিড় থাকে তখন ইশারা করা স্পর্শ করার চেয়ে উত্তম। কেননা ভিড়ের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটাই করেছেন। কেননা এর মাধ্যমে মানুষ অন্যকে কষ্ট দেয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, কিংবা অন্য মানুষ থেকে কষ্ট পাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।

যদি কোন প্রশ্নকারী আমাদেরকে জিজ্ঞেস করে যে, যদি মাতাফ বা তাওয়াফের স্থান জনাকীর্ণ হয় সেক্ষেত্রে মানুষের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে হাজারে আসওয়াদ চুমো খাওয়া উত্তম; নাকি ইশারা করা উত্তম; আপনার মতামত কি?

আমরা বলব: উত্তম হচ্ছে- ইশারা করা। কেননা ঠিক এভাবেই রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সুন্নাহ বর্ণিত হয়েছে। আর সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ।

 

চার:

রুকনে ইয়ামেনী চুম্বন করা। রুকনে ইয়ামেনী চুম্বন করা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়নি। কোন ইবাদত যদি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত না হয় তাহলে সেটি বিদাত; নেক কাজ নয়। তাই কারো জন্য রুকনে ইয়ামেনী চুমো খাওয়া শরিয়তসম্মত হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে তা সাব্যস্ত হয়নি। বরং এ বিষয়ে একটি দুর্বল হাদিস বর্ণিত হয়েছে; যা দলিলের উপযুক্ত নয়।

 

পাঁচ:

কিছু কিছু মানুষ যখন হাজারে আসওয়াদ বা রুকনে ইয়ামেনী মাসেহ করে তখন তারা অবজ্ঞাকারীর মত বাম হাত দিয়ে মাসেহ করে। এটি ভুল। কারণ ডানহাত বামহাতের চেয়ে উত্তম। কেবল শৌচকার্য, ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার, নাকের শ্লেষ্মা নিষ্কাশন ইত্যাদি মল-ময়লা পরিষ্কার করার কাজে বাম হাত এগিয়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে চুমো খাওয়া ও সম্মান প্রদর্শনের কাজে ডানহাতই ব্যবহার করা হয়।

 

ছয়:

লোকেরা ধারণা করে হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামেনী স্পর্শ করা হয় বরকতের জন্য; ইবাদত হিসেবে নয়। ফলে তারা বরকত হিসেবে স্পর্শ করে। এটি নিঃসন্দেহে যে উদ্দেশ্যে স্পর্শ করার বিধান দেয়া হয়েছে সেটার বিপরীত। কারণ হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করা, মোছা বা চুম্বন করার বিধান দেয়া হয়েছে আল্লাহ্‌র প্রতি সম্মান প্রকাশার্থে। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করতেন তখন বলতেন: আল্লাহু আকবার (আল্লাহ্‌ই মহান); এদিকে ইঙ্গিত করার জন্য যে, এ কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্‌র মহত্ব প্রকাশ; পাথর মুছে বরকত হাছিল নয়। ঠিক এ কারণেই আমীরুল মুমিনীন উমর (রাঃ) হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করা কালে বলেছেন: “আল্লাহ্‌র শপথ! আমি জানি, তুমি একটি পাথর ছাড়া আর কিছু নও; তুমি উপকার বা অপকার কিছুই করতে পার না। যদি না আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক তোমাকে চুম্বন করতে না দেখতাম তাহলে আমিও তোমাকে চুম্বন করতাম না”

কিছু মানুষের এ ভুল বিশ্বাস (হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামেনী বরকতের জন্য স্পর্শ করা) থেকে তারা তাদের ছোট ছোট বাচ্চাদেরকেও রুকনে ইয়ামেনী বা হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করার সময় নিয়ে আসে। নিজের হাত দিয়ে রুকনে ইয়ামেনী বা হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করে সে হাত দিয়ে তার ছোট বাচ্চাকে বা শিশুকে স্পর্শ করে। এ ধরণের ভুল আকিদা থেকে বারণ করা ওয়াজিব এবং মানুষের কাছে তুলে ধরা উচিত যে, এ ধরণের পাথরের উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা নেই। বরং স্পর্শকরণ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- আল্লাহ্‌র প্রতি সম্মানপ্রদর্শন ও তাঁর যিকিরকে বুলন্দ করা এবং তাঁর রাসূলের অনুসরণ করা।

….

উল্লেখিত বিষয়গুলো এবং সম ধরণের বিষয়গুলোর পক্ষে শরয়ি কোন দলিল নেই। বরং তা বিদাত; যে কর্মগুলো আমলকারীর কোন উপকার করবে না। তবে, এ ধরণের আমলকারী যদি অজ্ঞ হয় এবং তার মনে যদি উদ্রেক না হয় যে, এগুলো বিদাত তাহলে আশা করা যায়, সে ব্যক্তি ক্ষমা পাবে। আর যদি সে ব্যক্তি আলেম হয় কিংবা অবহেলা করে জিজ্ঞেস না করে তাহলে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে।

 

সাত:

কেউ কেউ তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করের জন্য নির্দিষ্ট দোয়া খাস করে নেয়। এটিও একটি বিদাত যার পক্ষে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা তাঁর সাহাবীবর্গ থেকে কোন কিছু উদ্ধৃত হয়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা তাঁর সাহাবীগণ প্রত্যেক চক্করের জন্য বিশেষ কোন দোয়াকে খাস করতেন না। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ যা জানা যায় তা হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকনে ইয়ামেনী ও হাজারে আসওয়াদের মাঝে বলতেন:

“رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ” (

অর্থ- হে আমাদের রব্ব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচান)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: বায়তুল্লাহ্‌কে তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে প্রদক্ষিণ করা ও জমরাতসমূহে কঙ্কর নিক্ষেপ করার বিধান আল্লাহ্‌র স্মরণকে বুলন্দ করার জন্য দেয়া হয়েছে।

এ বিদাতটির ভ্রান্তি আরও বেড়ে যায় যখন কোন তাওয়াফকারী একটি পুস্তিকা সাথে বহন করে, যে পুস্তিকাতে প্রত্যেক চক্করের জন্য দোয়া লেখা আছে, আর সে ব্যক্তি ঐ পুস্তিকাটি পড়ে। কিন্তু কী পড়ে সে নিজেও তা জানে না; হয়তো আরবী ভাষা না জানার কারণে অর্থ বুঝে না, কিংবা আরবীভাষী আরবী উচ্চারণ করলেও সে কী বলছে তা সে জানে না। এমনকি আমরা কোন কোন তাওয়াফকারীকে এমন কিছু দোয়া পড়তে শুনেছি সেগুলো আসলে স্পষ্টভাবে বিকৃত। যেমন- কেউ একজনকে বলতে শুনেছি: ‘আল্লাহুম্মা আগনিনি বি জালালিকা আন হারামিকা’। সঠিক হচ্ছে- আল্লাহুম্মা আগনিনি বি হালালিকা আন হারামিকা (হে আল্লাহ্‌! আপনি যা হালাল করেছেন সেটার মাধ্যমে আপনি যা হারাম করেছেন সেটা থেকে আমাকে বিমুখ রাখুন)।

এছাড়াও আমরা দেখেছি কিছু কিছু মানুষ ঐ পুস্তিকা থেকে দোয়া পড়তে থাকে। যখন পুস্তিকাটি পড়া শেষ হয়ে যায় তখন দোয়া করা থামিয়ে দেয়। অবশিষ্ট চক্করে সে আর কোন দোয়া করে না। যদি মাতাফে (তাওয়াফস্থলে) ভিড় না থাকে এবং দোয়া শেষ হওয়ার আগে চক্কর শেষ হয়ে যায় সে ব্যক্তি সাথে সাথে ঐ দোয়াটি বাদ দিয়ে দেয়।

এর প্রতিকার হচ্ছে- আমরা হাজীসাহেবদের কাছে তুলে ধরব যে, মানুষ তাওয়াফকালে যা ইচ্ছা ও যা খুশি দোয়া করতে পারে এবং যা ইচ্ছা আল্লাহ্‌র যিকির করতে পারে। যখন মানুষের কাছে এটি তুলে ধরা হবে তখন এ সমস্যাটি নিরসিত হবে।

যে ব্যক্তি এ বিদাতগুলোতে লিপ্ত হয় তার হুকুম:

এ বিদাতগুলোতে লিপ্ত ব্যক্তি:

হয়তো অজ্ঞ-মূর্খ; তার মনে হয়তো উদ্রেকও হয়নি যে, এগুলো হারাম। এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে আশা করা যায় তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না।

কিংবা সে ব্যক্তি আলেম এবং স্বেচ্ছায় নিজে পথভ্রষ্ট ও মানুষকে পথভ্রষ্টকারী। নিঃসন্দেহে এ ব্যক্তি গুনাহগার এবং তার উপরে তার অনুসারীদের গুনাহও বর্তাবে।

কিংবা এ ব্যক্তি হচ্ছে- অজ্ঞ ও আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করার ক্ষেত্রে অবহেলাকারী। এ ব্যক্তির ব্যাপারে আশংকা হয় যে, সে তার অবহেলার কারণে ও জিজ্ঞেস না করার কারণে গুনাহগার হবে।

তাওয়াফ সংক্রান্ত যে ভুলগুলো আমরা এখানে উল্লেখ করলাম আমরা আশা করি, আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের মুসলমি ভাইগণকে এ ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য হেয়ায়েত দিবেন। যাতে করে তাদের তাওয়াফ পালন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনিত আদর্শ মোতাবেক হয়। কারণ সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে- মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। দ্বীনি বিধি-বিধান আবেগ ও ঝোঁকপ্রবণতা দিয়ে গ্রহণ করা যায় না। বরং রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে গ্রহণ করতে হয়।

   

 মসজিদে নববী যিয়ারতকালে যে ভুলগুলো ঘটে থাকে

 

আলহামদুলিল্লাহ।

কিছু কিছু হাজীসাহেব মসজিদে নববী যিয়ারতের সময় যে ভুলগুলো করে থাকেন সেগুলো বিভিন্ন রকমের:

 

এক:

কিছু কিছু হাজীসাহেব বিশ্বাস করেন যে, মসজিদে নববী যিয়ারত করা হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত। মসজিদে নববী যিয়ারত না করলে হজ্জ আদায় হবে না। বরং কোন কোন জাহেল মানুষ যিয়ারতকে হজ্জের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন। এমন বিশ্বাস বাতিল। হজ্জ ও মসজিদে নববী যিয়ারতের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই। যিয়ারত ছাড়াই হজ্জ পরিপূর্ণ হয়ে যায় এবং হজ্জ ছাড়াও যিয়ারত পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু, মানুষ অনেক আগে থেকে হজ্জের সফরে যিয়ারত করে থাকে। যেহেতু বারবার সফর করা তাদের জন্য কষ্টকর। আর যেহেতু যিয়ারত করা হজ্জের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। কারণ হজ্জ ইসলামের অন্যতম একটি রুকন, মহান ভিত্তিগুলোর অন্যতম; কিন্তু যিয়ারত সে রকম কিছু নয়। আমরা এমন কোন আলেম জানি না, যিনি বলেছেন যে, মসজিদে নববী যিয়ারত করা ওয়াজিব কিংবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবর যিয়ারত করা ওয়াজিব।

তবে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যে হাদিসটি বর্ণনা করা হয় যে তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করল কিন্তু আমাকে যিয়ারত করল না সে ব্যক্তি আমার সাথে রূঢ় ব্যবহার করল” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে মিথ্যা হাদিস এবং দ্বীনের স্বতঃসিদ্ধ বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক। যদি এই হাদিসটি সাব্যস্ত হত তাহলে তাঁর কবর যিয়ারত করা সব ওয়াজিবগুলোর মধ্যে সর্বাধিক তাগিদপূর্ণ ওয়াজিব হত।

 

দুই:

কিছু কিছু যিয়ারতকারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবরের চারদিকে তাওয়াফ করেন এবং হুজরার গ্রিল ও দেয়ালগুলো স্পর্শ করেন। এমনকি কেউ কেউ তাদের ঠোঁট দিয়ে চুমো খান, দেয়ালের উপর নিজেদের গাল রাখেন– এগুলো সবই গর্হিত বিদাত। কাবা ঘর ছাড়া অন্য কিছুর চারদিকে তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ বিদাত। অনুরূপভাবে স্পর্শ করা, চুমো খাওয়া ও গাল রাখা কাবা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে করা শরিয়তসম্মত। তাই হুজরার দেয়ালে এ ধরণের কর্ম পালন করার মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র থেকে আরও দূরে সরে যায়।

 

তিন:

কিছু কিছু যিয়ারতকারী মসজিদে নববীর মেহরাব, মিম্বর ও মসজিদের দেয়ালকে স্পর্শ করে। এ সবকিছু বিদাত।

 

চার:

এটি হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্য। কিছু কিছু যিয়ারতকারী বিপদাপদ দূর করার জন্য কিংবা নিজের মাকছুদ পূর্ণ হওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডাকে। এটি মুসলিম মিল্লাত থেকে বহিষ্কারকারী বড় শির্ক; যে কাজের প্রতি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল সন্তুষ্ট নয়। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর নিশ্চয় মসজিদগুলো (তথা সিজদার স্থানগুলো) আল্লাহ্‌র জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে ডেকো না।”[সূরা জিন্ন, আয়াত: ১৮] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশে আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।”[সূরা গাফের, আয়াত: ৬০] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্‌ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৭]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে ما شاء الله وشئت (আল্লাহ্‌ যা চায় এবং আপনি যা চান) বলতে শুনে এর সমালোচনা করে বলেন: তুমি কি আমাকে আল্লাহ্‌র সমকক্ষ বানালে? বরং এককভাবে আল্লাহ্‌ যা চান।”[সুনানে ইবনে মাজাহ (২১১৮)] সুতরাং যে ব্যক্তি অকল্যাণ দূর করা ও কল্যাণ অর্জন করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডাকে তার ব্যাপারটি কেমন হতে পারে? অথচ আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁকে লক্ষ্য করে বলেছেন: “(হে রাসূল!) আপনি বলুন, আল্লাহ্‌ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দের উপরও আমার নিজের কোন অধিকার নেই।”[সূরা আরাফা, আয়াত: ১৮৮] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “বলুন, নিশ্চয় আমি তোমাদের কোন ক্ষতি বা কল্যাণের মালিক নই। বলুন, আল্লাহ্‌র পাকাড়ও হতে কেউই আমাকে রক্ষা করতে পারবে না এবং আল্লাহ্‌ ছাড়া আমি কখনও কোন আশ্রয় পাব না।”[সূরা জিন্ন, আয়াত: ২১]

তাই মুমিনের উচিত তার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাকে তার স্রষ্টার সাথে সম্পৃক্ত করা; যিনি তার আশা বাস্তবায়ন করা ও ভীতি দূর করার ক্ষমতা রাখেন। মুমিনের কর্তব্য হচ্ছে– নিজ নবীর অধিকারগুলো জানা; যেমন- তাঁর প্রতি ঈমান আনা, তাঁকে ভালবাসা, প্রকাশ্যে ও গোপনে তাঁর অনুসরণ করা এবং এর উপর অবিচল থাকার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করা। এ ছাড়া তিনি যেভাবে বিধান দিয়ে গেছেন এর বরখেলাফ করে আল্লাহ্‌র ইবাদত না করা।

 

কোন মুসলিম নিজের হজ্জ করার আগে অন্যের বদলি হজ্জ করবেন না

 

আলহামদুলিল্লাহ।

আমি আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন মায়ের প্রতি আপনার উত্তম আবেগ, তাঁর কল্যাণ করার আগ্রহ ও মৃত্যুর পর তাঁর প্রতি সদাচরণের ইচ্ছার উপর আপনাকে অটল অবিচল রাখেন। আপনি যে প্রশ্নটি জানতে চেয়েছেন সে ব্যাপারে বলব: কোন মুসলিম যদি অন্যের পক্ষ থেকে বদলি হজ্জ করতে চায় তাহলে আগে তাকে নিজের হজ্জ করতে হবে। দলিল হচ্ছে ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদিস, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক লোককে শুবরুমার পক্ষ থেকে তালবিয়া পড়তে শুনে বললেন: শুবরুমা কে? লোকটি বলল: আমার এক ভাই কিংবা আমার এক আত্মীয়। তিনি বললেন: তুমি কি নিজের হজ্জ করেছ? লোকটি বলল: না। তিনি বললেন: “আগে নিজের হজ্জ কর। এরপর শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ্জ করতে পারবে।”[সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: মানাসিক, পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি অন্যের বদলি হজ্জ করেন; এটি একটি সহিহ হাদিস] আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন আপনার মাকে ক্ষমা করে দেন এবং তাকে তাঁর রহমতের মধ্যে প্রবেশ করান। আল্লাহ্‌ই মুত্তাকীদের অভিভাবক।

   
যিলহজ্জের ১১ তারিখের কিছু ভুলভ্রান্তি ও ‘অবিলম্বে মীনা ত্যাগ’
 

আলহামদুলিল্লাহ।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

তার হজ্জ শুদ্ধ। কেননা তিনি হজ্জের কোন রুকন ছেড়ে দেননি। কিন্তু, তিনি যদি ১২ তারিখে মীনাতে রাত্রি যাপন না করে থাকেন তাহলে তিনি সর্বমোট তিনটি ওয়াজিব ছেড়ে দিয়েছেন।

প্রথম ওয়াজিব: ১২ তারিখে মীনাতে রাত্রি যাপন করা।

দ্বিতীয় ওয়াজিব: ১২ তারিখে কংকর নিক্ষেপ করা।

তৃতীয় ওয়াজিব: বিদায়ী তাওয়া করা।

তার উপরে ওয়াজিব হচ্ছে- প্রত্যেকটি ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার কারণে একটি করে দম (পশু) জবাই করে মক্কার গরীবদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া।[ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃষ্ঠা-৫৬৬]

কেননা যে ব্যক্তি হজ্জের কোন ওয়াজিব বর্জন করে তার উপরে দম দেওয়া ওয়াজিব হয়। সে ব্যক্তি উক্ত পশুটি জবাই করে মক্কার গরীবদের মাঝে বণ্টন করে দিবেন।

 

 

হজ্জ বা উমরা পালনোত্তর নারীদের চুল কাটার পদ্ধতি

 

আলহামদুলিল্লাহ।

মাথা মুণ্ডন কিংবা চুল ছোট করা উমরার একটি ওয়াজিব কাজ। নারীদের জন্য মাথা মুণ্ডন করার অনুমতি নেই। তাদের জন্য অনুমোদিত হল চুল ছোট করা। তবে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী মাথার সবগুলো চুল ছোট করা আবশ্যক। এটি মালেকি ও হাম্বলি মাযহাবের অভিমত। যদি কারো মাথার চুলগুলো বেণী করা থাকে তাহলে সবগুলো বেণীর মাথা থেকে কাটবে। যদি বেণী করা না থাকে তাহলে সবগুলো চুল একত্রিত করে সবগুলো চুল থেকে কাটবে। মুস্তাহাব হচ্ছে আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ কাটা। এর চেয়ে কমও কাটতে পারেন। যেহেতু চুল কাটার পরিমাণ নির্ধারণমূলক কোন শরয়ি দলিল বর্ণিত হয়নি।

আল-বাযি (রহঃ) ‘আল-মুনতাকা’ গ্রন্থে (৩/২৯) বলেন: পক্ষান্তরে, কোন নারী যখন ইহরাম করার মনস্থ করবেন তখন তিনি তার চুল বেণী করে নিবেন যেন তিনি হালাল হওয়ার জন্য চুল কাটতে পারেন। কী পরিমাণ চুল কাটবেন? ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত: আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ। ইবনে হাবিব ইমাম মালেক থেকে বর্ণনা করেন যে, আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ কিংবা এর চেয়ে একটু বেশি কিংবা এর থেকে একটু কম। ইমাম মালেক বলেন: আমাদের মাযহাবে এর সুনির্দিষ্ট কোন পরিমাণ নেই। যতটুকু কাটে সেটা জায়েয হবে। তবে, মাথার সবগুলো চুল কাটতে; সেটা লম্বা চুল হোক কিংবা খাটো চুল হোক।[সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]

ইবনে কুদামা (রহঃ) তাঁর মুগনি নামক গ্রন্থে (৩/১৯৬) বলেন:

চুল কাটা কিংবা মুণ্ডন করা সবগুলো চুল থেকে করতে হবে। নারীদেরকেও এভাবে করতে হবে (অর্থাৎ চুল ছোট করার ক্ষেত্রে)। এটিই আমাদের অভিমত। ইমাম মালেকও এটাই বলেছেন।[সমাপ্ত]

তিনি আরও বলেন: যতটুকু কাটুক না কেন জায়েয হবে। ইমাম আহমাদ বলেন: আঙ্গুলের কর পরিমাণ কাটবে। এটি ইবনে উমর (রাঃ), শাফেয়ি, ইসহাক, আবু সাওর এর অভিমত। ইবনে উমর (রাঃ) এর উক্তির কারণে এটাকে মুস্তাহাব হিসেবে ধরা হবে।[সমাপ্ত]

তিনি আরও বলেন (২/২২৬):

নারীরা আঙ্গুলের কর পরিমাণ নিজ মাথার চুল কাটবে। আঙ্গুলের কর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- সর্ব উপরের গিরা থেকে আঙ্গুলের মাথা। নারীদের ক্ষেত্রে বিধান হচ্ছে চুল ছোট করা; মুণ্ডন করা নয়। এ বিষয়ে কোন ইখতিলাফ নেই। ইবনুল মুনযির বলেন: আলেমগণ এর উপর ইজমা করেছেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নারীদের উপরে মাথা মুণ্ডন নেই; তাদের জন্য রয়েছে- চুল ছোট করা।”[সুনানে আবু দাউদ] আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম নারীদেরকে মাথা মুণ্ডন করতে নিষেধ করেছেন।”[সুনানে তিরমিযি] ইমাম আহমাদ বলতেন: “চুলের প্রত্যেক বেণী থেকে এক কর পরিমাণ কর্তন করবে।” এটি ইবনে উমর (রাঃ), শাফেয়ি, ইসহাক, আবু সাওর প্রমুখের অভিমত। আবু দাউদ বলেন, “আমি ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি: নারীরা কি সম্পূর্ণ মাথার চুল ছোট করবে? তিনি বলেন: হ্যাঁ। মাথার সবগুলো চুলকে সামনের দিকে এনে চুলের আগা থেকে আঙ্গুলের কর পরিমাণ কর্তন করবে।”[সমাপ্ত]

শাইখ বিন উছাইমীন (রাঃ) ‘আল-শারহুল মুমতি’ (৭/৩২৯) গ্রন্থে বলেন: তাঁর কথা: “নারীরা কর পরিমাণ কর্তন করবে”। অর্থাৎ আঙ্গুলের কর পরিমাণ। আঙ্গুলের কর হচ্ছে- আঙ্গুলের গিরা। অর্থাৎ কোন নারীর চুলে যদি বেণী থাকে তাহলে তিনি চুলের বেণী (মুঠ করে) ধরবেন; চুলের বেণী না থাকলে চুলের আগা ধরবেন; ধরে আঙ্গুলের কর পরিমাণ কাটবেন। আঙ্গুলের করের পরিমাণ প্রায় ২ সেঃমিঃ। বর্তমানে নারীদের মধ্যে প্রসিদ্ধ হচ্ছে তারা চুলের আগা আঙ্গুলে পেঁচায়, যেখানে চুলের দুই প্রান্ত মিলিত হয় সে স্থানে কাটাকে ওয়াজিব মনে করে — এটি সঠিক নয়।[সমাপ্ত]

উপরোক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যিনি এক গুচ্ছ চুল কেটেছেন তিনি শরিয়তসম্মতভাবে চুল কাটেননি। এখন তার কর্তব্য হচ্ছে, আমরা চুল কাটার যে পদ্ধতি উল্লেখ করেছি সেভাবে চুল কাটা। ইতোমধ্যে তিনি ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ এমন যেসব বিষয়ে লিপ্ত হয়েছেন সেগুলোর জন্য তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে এমন এক মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যিনি তার উমরা সম্পন্ন করতে পারেননি: আর এ নারী যেসব ইহরাম-নিষিদ্ধ কার্যাবলিতে লিপ্ত হয়েছেন; যেমন ধরুন তার স্বামী তার সাথে সহবাস করেছে। ইহরাম অবস্থায় সহবাস করা কঠিনতর নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। কেননা এ নারী অজ্ঞ ছিল। প্রত্যেক ব্যক্তি যিনি অজ্ঞতাবশতঃ কিংবা ভুলক্রমে কিংবা জবরদস্তির শিকার হয়ে ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ এমন কোন কর্মে লিপ্ত হন তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না।[শাইখ ইবনে উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র (২১/৩৫১) থেকে সমাপ্ত]

তাঁকে আরও জিজ্ঞেস করা হয় এমন এক লোক সম্পর্কে যে ব্যক্তি উমরা আদায় করার পর তার মাথার শুধু এক অংশের চুল কেটেছে, এরপর তার পরিবারের কাছে ফিরে আসার পর তার কাছে সুস্পষ্ট হয়েছে যে, তার কাজটি ভুল ছিল; এমতাবস্থায় তার কর্তব্য কী? জবাবে তিনি বলেন: যদি তিনি অজ্ঞতাবশতঃ তা করে থাকেন তাহলে তার কর্তব্য হচ্ছে, এখনি সাধারণ কাপড় খুলে (ইহরামের কাপড় পরিধান করা) এবং পরিপূর্ণভাবে মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল ছোট করা। তার এ ভুল ক্ষমার্হ। কেননা তিনি জানতেন না। মক্কায় অবস্থান করে মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল ছোট করা শর্ত নয়। বরং মক্কাতে ও মক্কার বাহিরে এ কাজ করা যায়। আর যদি তিনি কোন আলেমের ফতোয়ার ভিত্তিতে এ আমল করে থাকেন তাহলে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তোমরা আলেমগণকে জিজ্ঞেস কর; যদি তোমরা না জান।”[সূরা নাহল, আয়াত: ৪৩] কোন কোন আলেমের অভিমত হচ্ছে- মাথার কোন একটি অংশ থেকে চুল কাটা গোটা মাথার চুল কাটার পর্যায়ভুক্ত।[আল-লিকাউস শাহরি (১০নং) থেকে সমাপ্ত]

নারীদের চুল কাটার পূর্বে পোশাক পরিবর্তন করা আবশ্যক নয়। কেননা নারীর জন্য ইহরাম অবস্থায় সাধারণ পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ নয়। বরং তার জন্য শুধু নেকাব ও মোজা পরা নিষিদ্ধ।

আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

 

 মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছোট করার ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো হয়ে থাকে

 

আলহামদুলিল্লাহ।

মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল ছোট করার ক্ষেত্রে যেসব ভুল সংঘটিত হয়ে থাকে সেগুলো নিম্নরূপ:

 

এক:

কিছু কিছু লোক মাথার কিয়দাংশ খুর দিয়ে ভালভাবে মুণ্ডন করে; বাকীটুকু রেখে দেয়। আমি নিজ চোখে এটি দেখেছি। আমি এক লোককে সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করতে দেখেছি; সে তার মাথার অর্ধেক মুণ্ডন করেছে; বাকী অর্ধেকের চুল রেখে দিয়েছে। আমি তাকে ধরে বললাম: কেন আপনি এভাবে করেছেন? তিনি বললেন: আমি এভাবে করেছি যেহেতু আমি দুইটি উমরা করতে চাই। তাই্ প্রথম উমরার জন্য অর্ধেক মুণ্ডন করেছি। আর দ্বিতীয় উমরার জন্য বাকী অর্ধেক রেখে দিয়েছি। এটি অজ্ঞতা ও গোমরাহি; কোন আলেম এমন কোন মত ব্যক্ত করেননি।

 

দুই:

কিছু কিছু লোক উমরা থেকে হালাল হওয়ার জন্য মাথার এক পাশের গুটি কয়েকটি চুল ছোট করেন। এটি আয়াতে কারীমার বাহ্যিক অর্থের বিপরীত। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমাদের মাথা মুণ্ডন করে এবং চুল ছেঁটে”।[সূরা আল-ফাত্‌হ, আয়াত: ২৭] অতএব, চুল ছোট করার প্রভাবটা মাথার উপর স্পষ্টভাবে দেখা যেতে হবে। সবাই জানে যে, এক, দুই বা তিনটি চুল কাটলে সেটা কোন প্রভাব ফেলে না এবং উমরাকারীর মাথায় ফুটে উঠে না যে, সে চুল ছোট করেছে। তাই এটি আয়াতে কারীমার বাহ্যিক বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।

এ দুইটি ভুলের প্রতিকার হচ্ছে- যদি মুণ্ডন করতে চায় তাহলে গোটা মাথার চুল মুণ্ডন করবে। আর যদি চুল ছোট করতে চায় তাহলে সম্পূর্ণ মাথার চুল ছোট করবে; এক, দুইটি চুল ছোট করবে না।

 

তিন:

কিছু কিছু লোক আছে তারা সায়ী শেষ করার পর মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল ছোট করার জন্য কাউকে না পেয়ে নিজ গৃহে চলে যায়। সে হালাল হয়ে গেছে মনে করে স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করে। পরবর্তীতে মাথা মুণ্ডন করে কিংবা চুল ছোট করে। এটি মহা ভুল। কারণ কোন ব্যক্তি মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল ছোট করা ছাড়া উমরা থেকে হালাল হবে না। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী; বিদায় হজ্জকালে তিনি তাঁর সাহাবীদের মধ্যে যারা সাথে করে হাদির পশু আনেনি তাদেরকে নির্দেশ দেন হজ্জের ইহরামকে উমরাতে পরিবর্তন করার, তখন তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন: “এরপর মাথার চুল ছোট করবে অতঃপর হালাল হবে”।[সহিহ বুখারী (১৬৯১) ও সহিহ মুসলিম (১২২৯)] এ হাদিসটি প্রমাণ করে যে, চুল ছোট করা ছাড়া হালাল হওয়া যাবে না।

অতএব, কেউ যদি সায়ী করার পর মাথা মুণ্ডন করার জন্য কিংবা চুল ছোট করার জন্য কাউকে না পায় তাহলে সে ব্যক্তি ইহরামের উপর থাকবে; যতক্ষণ না সে মাথা মুণ্ডন করে কিংবা চুল ছোট করতে পারে। এর আগে হালাল হওয়া জায়েয নেই। যদি ধরে নেয়া হয় যে, কোন এক ব্যক্তি অজ্ঞতাবশতঃ মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল ছোট করার আগে এই মনে করে হালাল হয়ে গেছে যে, এটি জায়েয তাহলে তার অজ্ঞতার কারণে কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু, জানার সাথে সাথে তাকে স্বাভাবিক কাপড়-চোপড় খুলে ইহরামের কাপড় পরতে হবে। কেননা, সে হালাল হয়নি এ কথা জানার পর আর গড়িমসি করা জায়েয হবে না। অতঃপর সে মাথা মুণ্ডন করা কিংবা চুল ছোট করার পর হালাল হবে।

 

 

 

মসজিদে নববী যিয়ারতের সময় যেসব ভুল হয়ে থাকে
 

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

রাসূলকে ডাকা, বিপদমুক্তির জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করা, তাঁর সাহায্য চাওয়া। যেমন- কোন কোন লোক বলে থাকে, “হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের অসুস্থ লোককে সুস্থ করে দিন; হে আল্লাহর রাসূল, আমার ঋণ পরিশোধ করে দিন, হে আমার ওসিলা, হে আমার প্রয়োজনপূর্ণের দরজা” ইত্যাদি শরিকী উক্তিগুলো; যে উক্তিগুলো বান্দার উপর আল্লাহর একক অধিকার তাওহীদের পরিপন্থী।

 

দুই:

কবরের সামনে নামাযের সুরতে দাঁড়ানো— ডানহাত বামহাতের উপর রেখে বুকের উপরে কিংবা নীচে রাখা। এটি হারাম কাজ। যেহেতু দাঁড়ানোর এ পদ্ধতিটি ইবাদত ও হীনতার অবস্থা। এটি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা নাজায়েয।

 

তিন:

কবরের কাছে ঝুঁকে পড়া, সিজদা করা কিংবা এমন কিছু করা যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা জায়েয নয়। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কোন মানুষের জন্য মানুষকে সিজদা করা সঙ্গত নয়”[মুসনাদে আহমাদ (৩/১৫৮), আলবানী ‘সহিহুত তারগীব’ গ্রন্থে (১৯৩৬ ও ১৯৩৭) ও ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (১৯৯৮) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

 

চার:

কবরের নিকটে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। অথবা এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, কবরের নিকটে দোয়া করলে কবুল হয়। এটি করা হারাম। কারণ এটি শিরকে পতিত হওয়ার বাহন। যদি কবরের কাছে দোয়া করা কিংবা নবীজির কবরের কাছে দোয়া করা উত্তম হত, সঠিক হত কিংবা আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হত তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সেটা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে যেতেন। কেননা যা কিছু উম্মতকে জান্নাতের নৈকট্য হাছিল করিয়ে দিবে এমন কোন কিছু বর্ণনা করা থেকে তিনি বাদ দেননি। যখন তিনি এক্ষেত্রে উম্মতকে উদ্বুদ্ধ করেননি এর থেকে জানা গেল যে, এটি শরিয়তসিদ্ধ নয়; হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ। আবু ইয়ালা ও হাফেয যিয়া ‘আল-মুখতারা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, আলী বিন হুসাইন (রাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবরের সন্নিকটে একটি ছিদ্রতে প্রবেশ করে দোয়া করেন। তখন তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন: আমি তোমাদেরকে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করব না যা আমি আমার পিতা থেকে তিনি আমার দাদা, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “তোমরা আমার কবরকে ঈদ বা উৎসবস্থল (ঈদ বলা হয় এমন স্থানকে যা বারবার পরিদর্শন করা হয়) বানিও না এবং নিজেদের ঘরগুলোকে কবর বানিও না। তোমরা আমার উপর দরুদ পড়। কেননা তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের সালাম আমার নিকট পৌঁছানো হয়”।[সুনানে আবু দাউদ (২০৪২), আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (১৭৯৬) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

 

পাঁচ:

যারা মদিনা যিয়ারতে আসতে পারেনি তারা কোন কোন যিয়ারতকারীর মাধ্যমে রাসূলের কাছে সালাম প্রেরণ করা এবং যিয়ারতকারীগণ এ সালাম পৌঁছানো। এটি বিদাতী কর্ম ও নব উদ্ভাবিত কর্ম। সুতরাং ওহে সালাম প্রেরণকারী ও ওহে সালাম সমর্পনকারী এটি করা থেকে বিরত থাকুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণীই আপনাদের জন্য যথেষ্ট: “তোমরা আমার উপর দরুদ পড়। তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের সালাম আমার নিকট পৌঁছানো হয়।”।

আর যথেষ্ট এ বাণীটি: “নিশ্চয় আল্লাহর এমন কিছু বিচরণকারী ফেরেশতা রয়েছে যারা আমার কাছে আমার উম্মতের সালাম পৌঁছে দেয়”।[মুসনাদে আহমাদ (১/৪৪১), সুনানে নাসাঈ (১২৮২), আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (২১৭০) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

 

ষষ্ঠ:

বারবার নবীজির কবর যিয়ারত করা। যেমন- প্রত্যেক ফরয নামাযের পর যিয়ারত করা কিংবা প্রতিদিন নির্দিষ্ট নামাযের শেষে যিয়ারত করা। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তোমরা আমার কবরকে উৎসবস্থল (বারবার যিয়ারতস্থল) বানিও না” এর সাথে সাংঘর্ষিক। ইবনে হাজার হাইছামী ‘মিশকাত’ এর ব্যাখ্যায় বলেন: ঈদ (عيد শব্দটিকে এখানে উৎসব অনুবাদ করা হয়েছে) একটি উৎসবের নাম। ঈদকে ঈদ বলা হয় যেহেতু এটি ঘুরেফিরে করা ও পুনপুন করার মাধ্যমে অভ্যাসে (عادة) পরিণত হয়ে গেছে। হাদিসের অর্থ হচ্ছে- তোমরা আমার কবরকে এমন স্থান বানিও না যেখানে বারবার, পুনপুন, বহুবার আসাটা অভ্যাস। এ কারণে তিনি বলেছেন: “তোমরা আমার উপর দরুদ পড়। কারণ তোমাদের সালাম আমার নিকট পৌঁছে দেয়া হয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন”। সুতরাং দরুদ পড়াই যথেষ্ট।[সমাপ্ত]

ইবনে রুশদ রচিত ‘আল-জামে লিল বায়ান’ নামক গ্রন্থে এসেছে- যে বিদেশী আগন্তুক প্রতিদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবরে আসেন তার ব্যাপারে ইমাম মালেককে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: বিষয়টি এমন হওয়া ঠিক নয়। এ প্রসঙ্গে তিনি হাদিসটি উল্লেখ করেন: “হে আল্লাহ, আপনি আমার কবরকে পৌত্তলিকতার স্থলে পরিণত করবেন না; যেখানে পূজা হয়”[আলবানী ‘তাহযিরুস সাজিদ মিন ইত্তিখাযিল কুবুরি মাসাজিদ’ গ্রন্থে (২৪-২৬) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

ইবনে রুশদ বলেন: অতএব, বারবার কবরে গিয়ে সালাম দেয়া, প্রতিদিন কবরে আসা মাকরুহ; যাতে করে কবর মসজিদের মত হয়ে না যায়; যেখানে নামাযের জন্য প্রতিদিন আসা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ বাণীতে এ ব্যাপারে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন: “হে আল্লাহ, আমার কবরকে পৌত্তলিকতার স্থলে পরিণত করবেন না”[দেখুন: ইবনে রুশদ এর ‘আল-বায়ান ওয়াত তাহসীল’ (১৮/৪৪৪-৪৪৫), সমাপ্ত]

কাযী ইয়াযকে মদিনাবাসী এমন কিছু মানুষ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যারা প্রতিদিন কবরের সামনে একবার বা একাধিকবার দণ্ডায়মান হয়, সালাম দেয় ও কিছু সময় দোয়া করে তখন তিনি বলেন: কোন ফকীহ এমন কোন মত দিয়েছেল বলে আমার কাছে তথ্য নেই। এ উম্মতের শেষ প্রজন্ম সেসব আমলের মাধ্যমে নেককার হবে যেসব আমলের মাধ্যমে প্রথম প্রজন্ম নেককার হয়েছিল। আমার কাছে এ উম্মতের প্রথম প্রজন্মের ব্যাপারে এমন কোন তথ্য পৌঁছেনি যে, তারা এটি করতেন।”[‘আল-শিফা বি তারিফি হুকুকিল মোস্তফা’ (২/৬৭৬)]

 

সপ্তম:

মসজিদের সকল দিক থেকে কবরের অভিমুখি হওয়া কিংবা যখনি মসজিদে প্রবেশ করবে তখনি কবরের দিকে মুখ করা কিংবা যখনি নামায শেষ করবে তখনি কবরের দিকে মুখ করা। সালাম দেয়ার সময় দুইহাত দুইপাশে রেখে মাথা ও থুতনি নোয়ানো। এগুলো বহুল প্রসারিত বিদাত ও ভুল।

আল্লাহর বান্দারা, আল্লাহকে ভয় করুন। সকল বিদাত থেকে সাবধান হোন। কুপ্রবৃত্তি ও অন্ধ অনুকরণ পরিহার করুন। দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে আমল করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “যে ব্যক্তি তার রব প্রেরিত সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত, সে কি তার ন্যায় যার কাছে নিজের মন্দ কাজগুলো শোভন করে দেয়া হয়েছে এবং যারা নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেছে?”[সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ১৪]

আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী অন্যদেরকে পথ দেখাবার তাওফিক দেন।

 

 

৮ ই যিলহজ্জ ইহরাম করার সময় হাজীগণ যে ভুলগুলো করে থাকেন

আলহামদুলিল্লাহ।

হজ্জের ইহরাম বাঁধাকালে যে ভুলগুলো সংঘটিত হয়ে থাকে আমরা সে ভুলগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব:

শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

তারবিয়ার দিন যে ভুলগুলো সংঘটিত হয়ে থাকে সেগুলো নিম্নরূপ:

 

এক:

কিছু কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে, মসজিদে হারাম থেকে ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব। আপনি দেখবেন, তিনি কষ্ট করে হারামে যাচ্ছেন, সেখান থেকে ইহরাম বাঁধার জন্য। এটি ভুল ধারণা। মসজিদে হারাম থেকে ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব নয়। বরং সুন্নত হচ্ছে- হাজীসাহেব যে স্থানে থাকেন সেখান থেকে ইহরাম বাঁধা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে যেসব সাহাবী উমরা থেকে হালাল হয়েছেন অতঃপর তারবিয়ার দিন হজ্জের ইহরাম বেঁধেছেন তারা তো ইহরাম বাঁধার জন্য মসজিদে হারামে আসেননি। বরং প্রত্যেকে তার নিজ জায়গা থেকে ইহরাম বেঁধেছেন। এটি তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানার ঘটনা। সুতরাং এটাই সুন্নাহ। তাই হজ্জের ইহরামকারীর জন্য সুন্নাহ হচ্ছে সে যে স্থানে থাকে সে স্থান থেকে ইহরাম বাঁধবে; চাই সেটা মক্কা হোক কিংবা মীনা হোক। কেননা বর্তমানে কিছু কিছু লোক তাদের স্থান সংরক্ষণের জন্য আগেই মীনাতে চলে যায়।

 

দুই:

কিছু কিছু হাজী ধারণা করে যে, উমরার ইহরামকালে যে কাপড় পরিধান করা হয়েছিল হজ্জের ইহরামকালে পরিস্কার করা ছাড়া সে কাপড় আর পরিধান করা শুদ্ধ হবে না। এটিও ভুল ধারণা। কারণ ইহরামের কাপড় নতুন হওয়া কিংবা পরিচ্ছন্ন হওয়া শর্ত নয়। এটা ঠিক, ইহরামের কাপড় যত পরিস্কার হবে তত ভাল। কিন্তু, এ ধারণা পোষণ করা যে, ‘যে কাপড়ে উমরার ইহরাম করা হয়েছে সে কাপড়ে হজ্জের ইহরাম করা সহিহ হবে না’ এটি ভুল। হজ্জের ইহরামকালে সংঘটিত এ ভুলগুলো এখন আমার স্মরণ হচ্ছে।

ইহরামকারী যে ভুলগুলো করে থাকেন
 

আলহামদুলিল্লাহ।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

কিছু কিছু হাজীসাহেব ইহরামের ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো করে থাকেন:

 

এক:

মীকাত থেকে ইহরাম না বাঁধা। কিছু কিছু হজ্জপালনেচ্ছু ব্যক্তি, বিশেষত যারা আকাশ পথে সফর করেন তারা মীকাত থেকে ইহরাম না বেঁধে জেদ্দায় পৌঁছে ইহরাম বাঁধেন। অথচ তারা মীকাতের উপর দিয়ে উড়ে আসেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দিষ্ট এলাকার অধিবাসীদের জন্য নির্দিষ্ট মীকাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন: “এগুলো এ সমস্ত এলাকার অধিবাসীদের জন্য এবং অন্য যারা এসব স্থানের উপর দিয়ে গমন করবে তাদের জন্য”[সহিহ বুখারী (১৫২৪) ও সহিহ মুসলিম (১১৮১)]

সহিহ বুখারীতে উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, যখন ইরাকবাসী তাঁর কাছে অভিযোগ করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নজদবাসীদের জন্য ‘ক্বার্‌ন’ নামক যে মীকাত নির্ধারণ করেছেন সেটি তাদের পথে পড়ে না অথবা সেটি তাদের জন্য দূরে হয় ও ঘুরতি পথ। তখন তিনি বললেন: “তোমরা তোমাদের পথে ক্বার্‌নের বরাবরে পড়ে এমন কোন স্থান ঠিক কর।”[সহিহ বুখারী (১৫৩১)] এতে প্রমাণিত হয় যে, মীকাতের বরাবর কোন স্থান অতিক্রম করলে সেটা মীকাত অতিক্রম করার পর্যায়ভুক্ত। যে ব্যক্তি বিমানে চড়ে মীকাতের উপর দিয়ে অতিক্রম করে সে যেন মীকাতই অতিক্রম করে। অতএব, তার কর্তব্য হচ্ছে- মীকাতের বরাবরে আসলে ইহরাম বাঁধা। তার জন্য ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করে জেদ্দা থেকে ইহরাম বাঁধা জায়েয হবে না।

এ ভুল সংশোধন করার পদ্ধতি হচ্ছে- হজ্জযাত্রী তার নিজের বাড়ি থেকে কিংবা এয়ারপোর্ট থেকে গোসল করে আসবেন এবং বিমানে বসে ইহরামের প্রস্তুতি নিবেন; ইহরামের কাপড় পরে নিবেন, স্বাভাবিক পোশাক খুলে রাখবেন। এরপর বিমান মীকাত বরাবর আসলে ইহরাম করবেন। অর্থাৎ হজ্জ বা উমরা যা পালন করতে চান সেটার তালবিয়া পাঠ করবেন। তার জন্য মীকাত থেকে ইহরাম না বেঁধে জেদ্দা থেকে বাঁধা জায়েয হবে না। যদি তা করেন তাহলে তিনি ভুল করলেন। এ ভুলের জন্য জমহুর আলেমের মতে, তাকে মক্কাতে একটি ফিদিয়া (ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি) জবাই করে গরীবদের মাঝে বণ্টন করে দিতে হবে; কেননা তিনি একটি ওয়াজিব ছেড়ে দিয়েছেন।

 

দুই:

কিছু কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে, জুতা পরেই ইহরাম বাঁধতে হবে। যদি ইহরামকালে কেউ জুতা না পরে তাহলে পরবর্তীতে তার জন্য জুতা পরা জায়েয হবে না। এটি ভুল। কারণ ইহরামের সময় জুতা পরা ওয়াজিব নয়; শর্তও নয়। জুতা পরা ছাড়াই ইহরাম হয়ে যায়। ইহরামের সময় জুতা না পরলেও পরবর্তীতে জুতা পরতে পারবে। এতে কোন অসুবিধা নেই।

 

তিন:

কিছু কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন যে, ইহরামের কাপড় দিয়েই ইহরাম বাঁধতে হবে এবং হালাল হওয়ার আগ পর্যন্ত এ এক কাপড়েই থাকতে হবে; পরিবর্তন করতে পারবে না। এটি ভুল। কেননা ইহরামকারীর জন্য বিশেষ কারণে কিংবা কোন কারণ ছাড়াই ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করা জায়েয আছে; যদি তিনি পরিবর্তন করে এমন কোন কাপড় পরেন; ইহরাম অবস্থায় যে কাপড় পরা বৈধ।

এক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যে ব্যক্তি কোন একটি ইহরামের কাপড় পরে ইহরাম বেঁধেছেন তিনি সে কাপড় পরিবর্তন করতে চাইলে পরিবর্তন করতে পারেন। কিন্তু, কখনো কখনো পরিবর্তন করাটা আবশ্যকীয় হয়ে পড়তে পারে; যেমন- উক্ত কাপড়ে কোন নাপাকি লাগলে; যাতে করে কাপড়টি না খুলে ধৌত করা সম্ভবপর নয়। কখনও কখনও পরিবর্তন করাটা উত্তম হতে পারে। যেমন- ইহরামের কাপড় যদি খুব ময়লা হয়ে যায়; তবে নাপাকি লাগেনি সে ক্ষেত্রে অন্য পরিস্কার ইহরামের কাপড় দিয়ে এটি পরিবর্তন করাটা বাঞ্ছনীয়।

আবার কখনও কখনও এমন প্রয়োজন পড়ে না; সেক্ষেত্রে ইচ্ছা হলে পরিবর্তন করবে; নচেৎ নয়। তবে, এ বিশ্বাসটি সঠিক নয় যে, কেউ যদি কোন একটি কাপড়ে ইহরাম বাঁধে তাহলে হালাল হওয়ার আগ পর্যন্ত এ কাপড়টি খুলতে পারবে না।

 

চার:

কেউ কেউ ইহরাম করার পর থেকে অর্থাৎ নিয়ত করার পর থেকে ইযতিবা করে থাকেন। ইযতিবা মানে হচ্ছে- ডান কাঁধ বের করে দিয়ে বাম কাঁধের উপর চাদরের পার্শ্ব ফেলে দেয়া। আমরা দেখতে পাই অনেক হাজীসাহেব ইহরামের শুরু থেকে হালাল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটি করে থাকেন। এমনটি করা ভুল। ইযতিবা শুধুমাত্র তাওয়াফে কুদুমের মধ্যে করতে হয়; সায়ীর মধ্যেও না, তাওয়াফের আগেও না।

 

পাঁচ:

কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, ইহরামকালে দুই রাকাত নামায আদায় করা ওয়াজিব। এটিও ভুল। ইহরামকালে দুই রাকাত নামায পড়া ওয়াজিব নয়। বরং ইবনে তাইমিয়ার নিকট অগ্রগণ্য মতানুযায়ী: ইহরামের বিশেষ কোন নামায নেই। কেননা, এ ধরণের কোন নামায নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়নি।

অতএব, হজ্জপালনেচ্ছু ব্যক্তি গোসল করার পর ইহরামের কাপড় পরে ইহরাম বাঁধবে; নামায পড়বে না। তবে, যদি কোন নামাযের ওয়াক্ত হয় যেমন- ফরয নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেছে, কিংবা ওয়াক্ত হওয়ার সময় কাছাকাছি এবং সে ব্যক্তি নামায পড়া পর্যন্ত মীকাতে অবস্থান করতে চায় এক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে- নামাযের পর ইহরাম বাঁধা। পক্ষান্তরে, ইহরামকালে বিশেষ কোন নামাযের উপর নির্ভর করা: অগ্রগণ্য মতানুযায়ী ইহরামের বিশেষ কোন নামায নেই।

হজ্জ বা উমরাতে নিয়ত উচ্চারণ
 

আলহামদুলিল্লাহ।

নিয়তের স্থান হচ্ছে- কলব বা অন্তর। নিয়ত উচ্চারণ করা বিদআত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীবর্গ থেকে সাব্যস্ত হয়নি যে, তারা কোন ইবাদতের পূর্বে নিয়ত উচ্চারণ করেছেন। হজ্জ ও উমরার তালবিয়া নিয়ত নয়।

শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন:

নিয়ত উচ্চারণ করা বিদআত। সজোরে নিয়ত পড়া কঠিন গুনাহ। সুন্নাহ হচ্ছে- মনে মনে নিয়ত করা। কারণ আল্লাহ তাআলা গোপন ও সঙ্গোপনের সবকিছু জানেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “বলুনঃতোমরাকিতোমাদেরধার্মিকতাআল্লাহকেঅবহিতকরছ? অথচভূমণ্ডলে ও নভোমণ্ডলে যাকিছুআছেসব আল্লাহজানেন।আল্লাহসর্ববিষয়েসম্যকজ্ঞাত।”[সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১৬]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কিংবা তাঁর সাহাবীবর্গ কিংবা অনুসরণযোগ্য ইমামদের থেকে ‘নিয়ত উচ্চারণ করা’ সাব্যস্ত হয়নি। সুতরাং জানা গেল যে, এটি শরিয়তে সিদ্ধ নয়। বরং নবপ্রচলিত বিদআত। আল্লাহই তাওফিকদাতা।[ইসলামী ফতোয়াসমগ্র (২/৩১৫)]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে নামায, তাহারাত (পবিত্রতা), রোজা কিংবা অন্য কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়ত উচ্চারণ করা বর্ণিত হয়নি। এমনকি হজ্জ-উমরার ক্ষেত্রেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন না যে,

 

‘আল্লাহু্ম্মা ইন্নি উরিদু কাযা ওয়া কাযা…’ (অর্থ- হে আল্লাহ, আমি অমুক অমুক আমল করার সংকল্প করেছি…)।

 

আল্লাহই ভাল জানেন। এটি না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল থেকে সাব্যস্ত হয়েছে; আর না তিনি তাঁর কোন সাহাবীকে এটা উচ্চারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু এতটুকু পাওয়া যায় যে, দুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালেন যে, তিনি হজ্জ করতে চান; তবে তিনি অসুস্থ। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি হজ্জ শুরু কর এবং এ শর্ত করে নাও যে, ‘মাহিল্লি হাইছু হাবাসতানি’ (অর্থ- আপনি যেখানে আমাকে আটকে রাখেন আমি সেখানে হালাল হয়ে যাব)। তখন তুমি তোমার রবের সাথে যে শর্ত করেছেন সে শর্ত মোতাবেক হালাল হতে পারবে। এখানে মৌখিক উচ্চারণের বিষয়টি এসেছে যেহেতু হজ্জটা মানতের মত। মানত মৌখিক উচ্চারণের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। কেননা কোন লোক যদি মনে মনে মানতের নিয়ত করে তাহলে সে মানত সংঘটিত হবে না। যেহেতু হজ্জ পরিপূর্ণ করার দিক থেকে মানতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্জ শুরু করার সময় এই বাক্য বলে মৌখিকভাবে শর্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন: “ইন হাবাসানি হাবেস ফা মাহিল্লি হাইছু হাবাসতানি” (অর্থ- যদি কোন প্রতিবন্ধকতা দ্বারা আমি আটকে পড়ি তাহলে যেখানে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি সেখানে হালাল হয়ে যাব)।

পক্ষান্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে যে এসেছে, “আমার নিকটে জিব্রাইল এসে বলেন: আপনি এই মোবারকময় উপত্যকায় নামায আদায় করুন এবং বলুন: “উমরাতান ফি হাজ্জা” (অর্থ- উমরাসহ হজ্জ) কিংবা “উমরাতান ওয়া হাজ্জা” (অর্থ- হজ্জ ও উমরা)। এর মানে এ নয় যে, তিনি নিয়ত উচ্চারণ করেছেন। বরং এর অর্থ হচ্ছে- তিনি তাঁর তালবিয়ার মধ্যে হজ্জের প্রকারটি উল্লেখ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ত উচ্চারণ করেননি।[ইসলামী ফতোয়াসমগ্র (২/২১৬)]

আল্লাহই ভাল জানেন।

ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করার হুকুম
 

আলহামদুলিল্লাহ।

মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা হজ্ব ও উমরার ওয়াজিব। অতএব যে ব্যক্তি হজ্ব বা উমরা করতে চায় সে ব্যক্তি স্থল, জল বা আকাশ যে পথে আগমন করুক না কেন তার জন্য ইহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করা জায়েয নেই।

শাইখ উছাইমীনকে ইহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: যে ব্যক্তি ইহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করেছে তার দুইটি অবস্থা হতে পারে। এক. সে ব্যক্তি হজ্ব বা উমরা পালনেচ্ছু ব্যক্তি হবে; সেক্ষেত্রে মীকাতে ফিরে যাওয়া তার উপর আবশ্যক। কারণ সেতো হজ্ব বা উমরা করতে চাচ্ছে। যদি সে মীকাতে ফিরে না যায় তাহলে সে একটি ওয়াজিব বর্জন করল। আলেমদের মতে তাকে ফিদিয়া দিতে হবে। তথা মক্কাতে একটি পশু যবেহ করে সেখানকার ফকীরদের মাঝে বণ্টন করে দিতে হবে। আর যে ব্যক্তি ইহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করেছে কিন্তু সে হজ্ব বা উমরা পালনেচ্ছু নয় তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হবে না। তার অবস্থানের সময় দীর্ঘ হোক অথবা সংক্ষিপ্ত হোক। যদি আমরা তার উপর মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা আবশ্যক করি তাহলে তো হজ্ব বা উমরা তার উপর একাধিকবার আদায় করা ফরজ হয়। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে- হজ্ব জীবনে একবারের বেশি ফরজ নয়। একবারের বেশি যে আদায় করবে সেটা নফল। যে ব্যক্তি ইহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করেছে তার ব্যাপারে আলেমদের মতামতের মধ্যে এই মতটি সবচেয়ে অগ্রগণ্য। অর্থাৎ যদি হজ্ব বা উমরা পালনেচ্ছু না হয় তাহলে তার উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না এবং তাকে মীকাত হতে ইহরাম বাঁধতে হবে না।” [ফিকহুল ইবাদাত; পৃষ্ঠা-২৮৩ ও ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম; পৃষ্ঠা- ৫১৩] এই আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় বিমান থেকে অবতরণ করার পর মীকাতে ফিরে যাওয়া আপনার উপর ওয়াজিব। যদি আপনি মীকাতে ফিরে না যান এবং মীকাত অতিক্রম করার পর ইহরাম বেঁধে থাকেন তাহলে আলেমদের অগ্রগণ্য মত হলো- একটি ছাগল যবেহ করে মক্কার ফকীরদের মাঝে বণ্টন করে দেয়া। আল্লাহই ভাল জানেন।

     

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব