হজ্জ একটি ঈমানী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান

হজ্জ একটি ঈমানী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান:

 بسم الله الرحمن الرحيم

অনন্ত করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে

হজ্জ একটি মহা উপাসনা বা ইবাদত। তাই হজ্জ পালনকারীদেরকে লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছেনঃ

ﭽ ﭑ  ﭒ   ﭓﭔ  ﭕ  ﭖ  ﭗ  ﭘ  ﭙ  ﭚ   ﭛ  ﭜ  ﭝ    ﭞ  ﭟ  ﭠﭡ ﭼ  البقرة: ١٩٧

ভাবার্থঃ “হজ্জের জন্য সুবিদিত কয়েকটি মাস (শাওয়াল, জুল্ কাদা, এবং জুল্ হিজ্জা) নির্দিষ্ট রয়েছে। তাই যে ব্যক্তি নিজের উপর এই সব মাসে হজ্জ পালন করার অটল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নিবে, তার উপর হজ্জের সময় যৌনমিলনে অথবা স্ত্রী-পুরুষের সংগমসম্বন্ধীয় ক্রীড়া ও অপকর্ম এবং ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া বৈধ নয়”।

(সুরা আল্ বাকারা, আয়াত নং 197)।

এই বিষয়ে আল্লাহর রাসূল [r]  বলেছেনঃ

“مَنْ حَجَّ لله؛ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ؛ رَجَعَ كيوَمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ”.

صحيح البخاري, رقم الحديث 1521, وصحيح مسلم, رقم الحديث 438- (1350), واللفظ للبخاري

 অর্থঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ্জ পালন করবে এবং তাতে যৌনমিলন অথবা স্ত্রী-পুরুষের সংগমসম্বন্ধীয় ক্রীড়া ও অপকর্ম হতে নিজেকে বিরত রাখবে, সে ব্যক্তি হজ্জ পালনের পর এমন পবিত্র অবস্থায় ফিরে আসবে যে, তার মাতা যেন তাকে সেই দিনই নবজাত পবিত্র শিশুরূপে প্রসব করলো”। সুতরাং সে নবজাত শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে গেলো।

(সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1521 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 438-(1350), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে)।

তাই আল্লাহর প্রশংসা, ধ্যান, জিকির, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, সৎকর্ম, উপাসনা ও ইবাদতে মগ্ন থেকে আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের আদেশ মোতাবেক আনন্দের সহিত হজ্জ পালনের কাজে তৎপর থাকা উচিত।

এই বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেছেনঃ

ﭽ ﭑ  ﭒ         ﭓ  ﭔ    ﭕ  ﭖ  ﭗ  ﭘ  ﭙ  ﭚ  ﭛ  ﭜ   ﭝ  ﭞ  ﭟ  ﭠﭡ  ﭢ  ﭣ  ﭤ  ﭥ  ﭦ    ﭧ  ﭨ     ﭩ ﭼ [ الأحزاب: 36 ]

ভাবার্থঃ “আল্লাহ ও তদীয় রাসূল যখন কোনো কাজের আদেশ প্রদান করবেন, তখন ঈমানদার মুসলিম পুরুষ ও নারীর জন্য সে বিষয়ে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে না, আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের আদেশ অমান্য করবে, সে ব্যক্তি সুখদায়ক সৎপথ ইসলাম ধর্ম হতে প্রকাশ্যভাবেই বিপথগামী হয়ে পড়বে”।

(সুরা আল্ আহযাব, আয়াত নং 36)।

মহান আল্লাহ আরো বলেছেনঃ

ﭽ  ﭒ  ﭓ  ﭔ  ﭕ  ﭖﭗ    ﭼ [البقرة: ٢٠٣]

ভাবার্থঃ “আর আল্লাহকে নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনগুলিতে (জুল্ হিজ্জা মাসের 11 থেকে 13 তারিখ পর্যন্ত) স্মরণ করো”।

(সুরা আল্ বাকারা, আয়াত নং 203)।

মহান আল্লাহ আরো বলেছেনঃ

ﭽ ﮞ  ﮟ  ﮠ  ﮡ  ﮢ  ﮣ  ﮤ  ﮥ  ﮦ  ﮧﮨ  ﭼ [ البقرة: ٢٠٠]

 ভাবার্থঃ “সুতরাং তোমরা যখন হজ্জের যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে নিবে, তখন আল্লাহকে (তাঁর ধ্যান, প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তাকবীর, তাহলীল ও তাঁর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে) এমনভাবে স্মরণ করবে, যেমনভাবে তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষদেরকে স্মরণ করতে থাকো, বরং তার চেয়েও তোমরা অধিক স্মরণ করবে আল্লাহকে”।

(সুরা আল্ বাকারা, আয়াত নং 200)।

নিঃসন্দেহে প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তি যখন পবিত্র কুরআন এবং নির্ভরযোগ্য হাদীসের আলোকে সালাফে সালেহীন (মহাপুরুষগণ) বা পূর্ববর্তী সৎলোকদের পদ্ধতি অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করতে পারবে, তখন সে হজ্জ পালনের মাধ্যমে কতকগুলি বিষয়ের জ্ঞানলাভ করতে সক্ষম হবে। উক্ত ষিয়গুলির মধ্যে থেকে কতকগুলি বিষয়ের বিবরণ এখানে অতি সংক্ষেপে দেওয়া হলোঃ

  • প্রকৃত ইসলামের সঠিক মতবাদ একত্ববাদ বা আকীদা এবং মহান আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠতা।
  • মহান আল্লাহর সঠিক উপাসনা কিংবা ইবাদতের নিয়ম প্রণালী ও পদ্ধতি।
  • সুনীতি ও সচ্চরিত্রের গুণে গুণান্বিত হওয়া।
  • মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলির সম্মান করা।
  • মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে বিনয়-নম্রতা অবলম্বন করা এবং অহংকার বর্জন করা।
  • মুসলিম জাতির মধ্যে ঐক্যের বন্ধন মজবুত করার সঠিক পদ্ধতি স্থাপন করা।
  • সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত করা।
  • সৎকর্মে আন্তরিকতার সহিত পরস্পর সাহায্য ও সহযোগিতা করা।
  • সৎকর্মের উপদেশ দেওয়া এবং অপকর্মের প্রতিরোধ করা।
  • ধৈর্যধারণ করা ইত্যাদি।

وصلى الله وسلم على رسولنا محمد, وعلى آله وأصحابه, وأتباعه إلى يوم الدين, والحمد لله رب العالمين.

অর্থঃ আল্লাহ আমাদের প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসরণকারীগণকে অতিশয় সম্মান ও শান্তি প্রদান করুন।

প্রণয়নেঃ

ডঃ মুহাম্মাদ মর্তুজা বিন আয়েশ মুহাম্মাদ