হজ্জের মীকাতসমূহ
বিমান আরোহী কখন ইহরাম বাঁধবে?
প্রশ্ন: আমি এ বছর হজ্জ আদায় করতে চাই। রিয়াদ থেকে জেদ্দাতে বিমানযোগে যেতে চাই। ঠিক কোনস্থানে আমি ইহরাম বাঁধব?
উত্তরঃ

আলহামদুলিল্লাহ।

উল্লেখিত অবস্থায় আপনার মীকাত হবে ‘ক্বারনুল মানাযিল’ বর্তমানে এটাকে ‘আস-সাইলুল কাবির’ বলা হয়। হজ্জপালনেচ্ছু ব্যক্তি যে মীকাতের উপর দিয়ে পথ অতিক্রম করবে সে মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব। যদি সে ব্যক্তি তার নিজের মীকাত অতিক্রম না করে তাহলে সে যখন তার মীকাতের সমান্তরালে পৌঁছবে সেটা স্থলপথে হোক, জলপথে হোক কিংবা আকাশপথে হোক তাহলে সে স্থান থেকে ইহরাম বাঁধা তার উপর ওয়াজিব। অতএব, আপনার উপর ওয়াজিব হচ্ছে- বিমান মীকাতের সমান্তরালে পৌঁছলে আপনি সেখান থেকে ইহরাম বাঁধবেন। বিমান যেহেতু মীকাতের উপর দিয়ে খুব দ্রুত উড়ে যাবে তাই সতর্কতামূলক মীকাতের আগে থেকে ইহরাম বাঁধতে বাধা নেই।

শাইখ বিন জিবরীন (রহঃ) বলেন:

যে ব্যক্তির পথে কোন মীকাত পড়বে না সে ব্যক্তি নিকটতম মীকাতের সমান্তরাল দিয়ে অতিক্রম করার সময় সেখান থেকে ইহরাম বাঁধবে সেটা স্থলপথে হোক, জলপথে হোক, কিংবা আকাশপথে হোক। বিমানের যাত্রী মীকাত বরাবর এলে ইহরাম বাঁধবেন। সতর্কতামূলক মীকাতের আগেই ইহরাম বাঁধতে পারেন; যাতে করে ইহরাম বাঁধার আগে মীকাত পার হয়ে না যায়। যে ব্যক্তি মীকাত পার হয়ে যাওয়ার পর ইহরাম বাঁধবে তাকে একটি দম দিতে হবে। আল্লাহই ভাল জানেন। [সমাপ্ত]

[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (২/১৯৮)]

স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র এসেছে-

জেদ্দা হজ্জ কিংবা উমরার মীকাত নয়। তবে, জেদ্দার অধিবাসী ও জেদ্দাতে প্রবাসীরা জেদ্দা থেকে ইহরাম করবেন। তা ছাড়া যে ব্যক্তি কোন প্রয়োজনে জেদ্দা গিয়েছেন; যাওয়ার সময় হজ্জ বা উমরা পালনের সুদৃঢ় ইচ্ছা ছিল না, পরবর্তীতে তার ইচ্ছা জেগেছে সে ব্যক্তিও জেদ্দা থেকে ইহরাম বাঁধবেন। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তির মীকাত জেদ্দার আগে সে ব্যক্তি তার মীকাত থেকে কিংবা তার মীকাতের স্থল, জল বা আকাশপথের সমান্তরাল থেকে ইহরাম বাঁধবেন। যেমন- মদিনা ও মদিনার পিছনে বসবাসকারী কিংবা স্থল বা আকাশ পথে একই সমান্তরাল দিয়ে আগমনকারীদের মীকাত যুলহুলাইফা, যেমন- জুহফাবাসীদের মীকাত হচ্ছে জুহফা এবং যারা স্থল-জল-আকাশ পথে জুহফার সমান্তরাল দিয়ে অতিক্রম করবেন তাদের মীকাতও জুহফা, যেমন- ইয়ালামলামবাসী, ইয়ালামলাম অতিক্রমকারী ও একই সমান্তরাল দিয়ে গমনকারীদের মীকাত ইয়ালামলাম।[সমাপ্ত, ফতোয়াবিষয়ক স্থায়ীকমিটির ফতোয়াসমগ্র (১১/১৩০)]

মীকাতের সমান্তরাল স্থান থেকে ইহরাম বাঁধার দলিল হচ্ছে- সহিহ বুখারীতে বর্ণিত ইবনে উমর (রাঃ) এর বর্ণনা তিনি বলেন: যখন এ দুটি শহর (কুফা ও বসরা) বিজয় হল এর অধিবাসীরা উমর (রাঃ) এর কাছে এসে বললেন: হে আমীরুল মুমিনীন! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নজদবাসীদের মীকাত নির্ধারণ করেছেন ‘ক্বারন’। কিন্তু, ‘ক্বারন’ আমাদের পথে পড়ে না; ক্বারনে যেতে আমাদের কষ্ট হয়। তখন তিনি বললেন: তোমরা তোমাদের পথে ক্বারনের বরাবরে পড়ে এমন কোন স্থান ঠিক কর। এভাবে তিনি তাদের জন্য ‘যাতু ক্বারন’ নামক স্থান মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করলেন।

হাফেয ইবনে হাজার ‘ফাতহুল বারী’ (৩/৩৮৯) গ্রন্থে বলেন:

“তোমরা ক্বারনের বরাবরে পড়ে এমন কোন স্থান ঠিক কর” অর্থাৎ তোমরা যে ভূমি দিয়ে আগমন কর সে রাস্তার উপর মীকাতের বরাবর কোন স্থান ঠিক করে সেটাকে মীকাত হিসেবে নির্ধারণ কর।[সমাপ্ত]

জ্ঞাতব্য, মীকাতের আগে ইহরাম বাঁধা নবীজির আদর্শ নয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে করেননি। সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে- নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। তবে, কেউ যদি বিমানের আরোহী হয় এবং তার পক্ষে মীকাতের সমান্তরাল স্থানে যাত্রা বিরতি করা সম্ভবপর না হয়; সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তি সতর্কতামূলক তার প্রবল ধারণা অনুযায়ী এমন স্থান থেকে ইহরাম বাঁধবেন যাতে করে তিনি ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মীকাত অতিক্রম করতে পারেন।

হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যারা হজ্জ করেছেন তাদের কেউ যুলহুলাইফার আগে ইহরাম বেঁধেছেন মর্মে জানা যায় না। যদি মীকাত সুনির্দিষ্ট না হত তাহলে তারা আগেই ইহরাম বেঁধে ফেলতেন। যেহেতু আগে থেকে ইহরাম বাঁধলে কষ্ট বেশি, এতে সওয়াবও বেশি।[ফাতহুল বারী (৩/৩৮৭)]

আল্লাহই ভাল জানেন।

উমরার নিয়তে ইহরাম ছাড়া মক্কায় প্রবেশ

প্রশ্ন: কয়েক বছর আগে আমি ও আমার স্ত্রী উমরা আদায় করেছি। আমরা অন্য এক ফ্যামিলির গাড়ীতে চড়ে রিয়াদ থেকে সফর করেছি। সে বন্ধু আমাদেরকে বলেছেন যে, আমরা ইহরাম ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করতে পারি এবং মক্কায় রাত্রি যাপন করতে পারি। এরপর সেখান থেকে আমরা ইহরাম বেঁধে নিব। এটা যে, সঙ্গত নয় সেটা জানা না থাকার কারণে আমরা সেটাই করেছি। সে উমরাটি ফরজ উমরা ছিল না। এরপর আমরা বহুবার মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধে উমরা করেছি। ঐ উমরার ক্ষেত্রে আমাদের উপর কোন দায়িত্ব আছে কি? যদি আমাদের উপর পশু যবেহ করা ফরজ হয়; তাহলে এমন কোন প্রতিষ্ঠান আছে কি যারা আমাদের পক্ষ থেকে পশুটি যবেহ করবে; যেহেতু আমি রিয়াদে চাকুরী করি।
উত্তরঃ

আলহামদুলিল্লাহ।

নিঃসন্দেহে আপনাদের সে বন্ধু ভুল করেছেন; যিনি আপনাদেরকে বলেছেন যে, ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা জায়েয। আরেক ভুল করেছেন: তিনি আপনাদেরকে মক্কা থেকে ইহরাম বাঁধতে বলেছেন। কারণ মক্কাবাসী ও মক্কাতে অবস্থানকারীকে উমরা পালন করতে হলে হারাম এলাকার বাইরে গিয়ে ইহরাম বেঁধে আসতে হবে।

যারা মক্কার বাইরে থেকে হজ্জ কিংবা উমরা আদায় করতে আসবেন শরিয়ত তাদের জন্য মীকাত তথা ইহরাম বাঁধার স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যদি ব্যক্তি ঠিক সেই স্থান দিয়েই অতিক্রম করে তাহলে তিনি সে স্থান থেকেই ইহরাম বাঁধবেন। আর যদি ঠিক সে স্থান দিয়ে সফর না করেন তাহলে সে স্থানের সমান্তরাল স্থান থেকে ইহরাম বাঁধবেন।

আর যারা এ মীকাতগুলোর ভেতরে মক্কার দিকে অবস্থান করেন তারা তাদের অবস্থানস্থল থেকে ইহরাম বাঁধবেন। অনুরূপভাবে কেউ যদি জেদ্দাতে আসে কিংবা মীকাতের ভেতরের অন্য কোন জায়গায় আসে; পরবর্তীতে তার উমরা করার ইচ্ছা জাগে তখন সে তার অবস্থানস্থল থেকে ইহরাম বাঁধবে।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মীকাতগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছেন। মদিনার অধিবাসীদের জন্য- যুল হুলাইফা; সিরিয়ার অধিবাসীদের জন্য- জুহফা; নজদ এর অধিবাসীদের জন্য- ক্বারনুল মানাযিল; ইয়েমেনের অধিবাসীদের জন্য- ইয়ালামলাম। এ মীকাতগুলো তাদের জন্য যারা এ স্থানগুলোতে বসবাস করে; কিংবা এ স্থানগুলো যাদের পথে পড়ে; সে সব ব্যক্তিদের জন্য যারা হজ্জ ও উমরা আদায়ের নিয়তে বেরিয়েছে। আর যে ব্যক্তি এ মীকাতগুলোর ভেতরে অবস্থান করে সে তার পরিবার থেকে ইহরাম বাঁধবে।[সহিহ বুখারি (১৪৫৪) ও সহিহ মুসলিম (১১৮১)]

আপনার বন্ধুর উপর তওবা করা ও ইস্তিগফার করা অপরিহার্য; যেহেতু তিনি নিজের মতকে শরিয়তের বিধান বলে চালিয়ে দিয়েছেন। আর জমহুর আলেমের মতামত অনুযায়ী আপনাদের কর্তব্য হচ্ছে- মক্কার হারাম এলাকার মধ্যে একটি ছাগল জবাই করে এর গোশত মক্কার গরীব লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া। কারো যদি এটি করার সামর্থ্য না থাকে তাহলে তার শুধু তওবা করলে চলবে।

স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন:

যে ব্যক্তি উমরা করার নিয়ত করেছে; তার কর্তব্য হচ্ছে- মীকাত অতিক্রমকালে মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা। ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা জায়েয নয়। যেহেতু আপনারা মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধেননি তাই আপনাদের প্রত্যেকের উপর দম (পশু জাবাই করা) ওয়াজিব। যে ছাগল দিয়ে কোরবানি করা জায়েয এমন একটি ছাগল মক্কাতে জবাই করে এর গোশত মক্কার গরীব লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে; আপনারা এ গোশত খেতে পারবেন না। পক্ষান্তরে ইহরামের কাপড় পরার পর দুই রাকাত নামায না পড়ায় কোন কিছু আবশ্যক হবে না।

শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ গাদইয়ান।[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১১/১৭৬,১৭৭)]

যে ব্যক্তি হজ্জ কিংবা উমরা কোন একটি ওয়াজিব আমল ছেড়ে দিয়েছে এ মাসয়ালার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার পর শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

যে ব্যক্তি কোন ওয়াজিব আমল ছেড়ে দিয়েছে আমরা তাকে বলব: আপনি একটি ফিদিয়া (পশু) জবাই করে এর গোশত নিজেই মক্কার দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করুন। কিংবা নির্ভরযোগ্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করুন। আর যদি আপনি অসামর্থ্য হন তাহলে তওবা করলে চলবে। এ মাসয়ালায় এটাই আমাদের অভিমত।[আল-শারহুল মুমতি (৭/৪৪১) থেকে সমাপ্ত]

মক্কাতে আপনাদের পক্ষ থেকে পশু জবাই করার জন্য আপনারা নির্ভরযোগ্য এজেন্সিগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

আল্লাহই ভাল জানেন।

বিমানে ইহরাম বাঁধতে ভুলে গেছেন; তাকে কি ইহরাম করার জন্য মীকাতে ফেরত যেতে হবে কি?

প্রশ্ন: বিমান মীকাত অতিক্রম করার সময় যে ব্যক্তি ভুলে গিয়ে ইহরাম বাঁধেনি; সে যদি গাড়ীতে করে অতিক্রমকৃত মীকাতে ফেরত যেতে চায় সেটা কি জায়েয হবে?
উত্তরঃ

আলহামদুলিল্লাহ।

হ্যাঁ; জায়েয হবে। নিয়ম হচ্ছে: কোন ব্যক্তি যদি মীকাত অতিক্রম করে, মীকাত থেকে ইহরাম না করে; সে যদি হজ্জ বা উমরা করতে চায় এবং সে যে স্থানে আছে সে স্থান থেকে ইহরাম বাঁধে তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। আর যদি মীকাতে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বাঁধে তাহলে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হবে না।

এর ভিত্তিতে আমরা যদি ধরে নিই যে, এক ব্যক্তি আল-কাসিম এয়ারপোর্ট থেকে বিমানে চড়ল; সে যদি উমরা আদায় করতে চায়; সে যদি ইহরাম না করে জেদ্দাতে অবতরণ করে আমরা তাকে বলব: আপনি হয়তো আল-সাইল আল-কাবীরে গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বাঁধবেন; নতুবা জেদ্দা থেকে ইহরাম বাঁধলে আপনার উপর দম ওয়াজিব হবে।[সমাপ্ত]

যে ব্যক্তি জেদ্দাতে থাকে হজ্জের জন্য মক্কা থেকে ইহরাম বেঁধেছে

প্রশ্ন:
আমি জেদ্দাতে থাকি। গতবছর আমি ও আমার স্ত্রী ফরজ হজ্জ আদায় করেছি। হজ্জ করার আটদিন আগে আমরা উমরা আদায় করেছি। আমরা নিজেদের ঘর থেকে ইহরাম না বেঁধে আয়েশা মসজিদ থেকে ইহরাম বেঁধেছি। এটি কি ঠিক হল? আমাদেরকে কি ফিদিয়া দিতে হবে? ফিদিয়া দেয়ার পদ্ধতি কি? ফিদিয়া কার মধ্যে বণ্টন করতে হবে?
উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

জেদ্দাবাসী যদি জেদ্দা থেকে হজ্জ বা উমরার নিয়ত করেন তাহলে তাদেরকে সেখান থেকেই ইহরাম বাঁধতে হবে। কারণ জেদ্দা মীকাতের ভেতরের স্থান। জেদ্দাবাসীর হুকুম হচ্ছে মীকাতের ভেতরে মক্কার আশপাশে অবস্থানকারীদের হুকুম। তারা যেখান থেকে নিয়ত করবে সেখান থেকে তাদেরকে ইহরাম বাঁধতে হবে।

এর দলিল হচ্ছে বুখারি (১৫২৬) ও মুসলিম (১১৮১) কর্তৃক ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস- “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মীকাতগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছেন। মদিনার অধিবাসীদের জন্য- যুল হুলাইফা; সিরিয়ার অধিবাসীদের জন্য- জুহফা; নজদ এর অধিবাসীদের জন্য- ক্বারনুল মানাযিল; ইয়েমেনের অধিবাসীদের জন্য- ইয়ালামলাম। এ মীকাতগুলো তাদের জন্য যারা এ স্থানগুলোতে বসবাস করে কিংবা এ স্থানগুলো যাদের পথে পড়ে; সে সব ব্যক্তিদের জন্য যারা হজ্জ ও উমরা আদায়ের নিয়তে বেরিয়েছে। আর যে ব্যক্তি এ মীকাতগুলোর ভেতরে অবস্থান করে সে তার পরিবার থেকে ইহরাম বাঁধবে। অনুরূপভাবে মক্কাবাসী মক্কা থেকে ইহরাম বাঁধবে।

শাইখ বিন বায বলেন:

উমরা আদায়কারী মক্কায় আসার পথে যে মীকাত দিয়ে পথ অতিক্রম করবে সে মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধবে; যদি সে মীকাতের বাহিরে বসবাসকারী হয়।

আর যদি মীকাতের ভেতরে বসবাসকারী হয়; যেমন জেদ্দা, উম্মুস সালম, বাহরা, লাযিমা, শারায়েহ ইত্যাদি এলাকার অধিবাসী তারা যেখান থেকে হজ্জ কিংবা উমরার নিয়ত করেছে সেখান ইহরাম বাঁধবে। সমাপ্ত[ ইসলামী ফতোয়া (২/৬৯০)]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

যে জেদ্দাবাসী উমরা করার নিয়ত করেছে তার উপর জেদ্দা থেকে ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব; জেদ্দা যেন অতিক্রম না হয়। সমাপ্ত [লিকাউল বাব আল-মাফতুহ (২৪/১২১)]

পূর্বোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলব:

আপনি আয়েশা মসজিদ থেকে যে ইহরাম করেছেন সেটা যদি হজ্জের আগে যে উমরা করেছেন সে উমরার ইহরাম হয়ে থাকে তাহলে আপনারা ইহরাম করার নির্ধারিত স্থান তথা মীকাত অতিক্রম করে ইহরাম করেছেন। যেহেতু আপনাদের অবস্থানস্থল হচ্ছে- জেদ্দা; সেটাই আপনাদের মীকাত।

সতকর্তামূলক আপনাদের করণীয় হবে: প্রত্যেকের পক্ষ থেকে একটি ছাগল জবাই করা। মক্কাতে জবাই করে এর গোশত মক্কার গরীবদের মধ্যে বিতরণ করে দিতে হবে; এ গোশত নিজেরা খাওয়া যাবে না।

ইবনে উছাইমীন বলেন:

কেউ যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত মীকাত থেকে ইহরাম না বাঁধে তদুপরি তার ইহরাম সহিহ হবে; তার হজ্জ-উমরাও সহিহ হবে। তবে আলেমগণ বলেন: মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা হজ্জ কিংবা উমরার একটি ওয়াজিব আমল। আর কেউ যদি হজ্জ কিংবা উমরার কোন একটি ওয়াজিব বর্জন করে তাকে ফিদিয়া দিতে হবে। এই আমলের ঘাটতি পূরণ করার জন্য তাকে ফিদিয়া দিতে হবে। এই ফিদিয়া (পশু) মক্কাতে জবাই করে এর গোশত মক্কার গরীবদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে; এর গোশত খাওয়া যাবে না। এরপর আলেমগণ আরও বলেন: যদি কেউ সক্ষম না হয় তাহলে সে দশদিন রোজা রাখবে। আর কোন কোন আলেম বলেন: তাকে কোন কিছু করতে হবে না। সঠিক মতানুযায়ী যদি ফিদিয়া দিতে না পারে তাহলে তাকে কিছু করতে হবে না। কারণ এমন কোন সহিহ দলিল নেই যে, কেউ যদি কোন ওয়াজিব বর্জন করে ফিদিয়া দিতে অক্ষম হয় তাকে দশদিন রোজা রাখতে হবে।[লিকাউল বাব আল-মাফতুহ (১৪/১৭৫)]

আর আপনারা আয়েশা মসজিদ থেকে যে ইহরাম বেঁধেছেন সেটা যদি উমরা আদায় করার পর আপনাদের হজ্জের ইহরাম হয়ে থাকে এবং আপনাদের উমরার ইহরাম জেদ্দা থেকে বাঁধা হয়ে থাকে তাহলে আপনাদেরকে কোন কিছু করতে হবে না। যদিও আপনাদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে মক্কাতে যেখানে অথবা অন্য যে স্থানে আপনারা উঠেছেন সেখান থেকে ইহরাম বাঁধা; আয়েশা মসজিদ কিংবা হারামের বাইরের অন্য কোন স্থানে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

যে ব্যক্তি তার মীকাত অতিক্রমকালে সেখান থেকে ইহরাম বাঁধেনি; পরবর্তীতে মদিনার মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধেছে

প্রশ্ন: কিছু কিছু সুদানি হাজি জেদ্দা থেকে সরাসরি মদিনায় চলে যান। এরপর আবইয়ার আলী থেকে ইহরাম বাঁধেন। সেসব হাজিদের মদিনাবাসীর মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা কি সহিহ?
উত্তরঃ

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

সুদানের অধিবাসীদের মীকাতের ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা আছে।

দুই:

সুদানের অধিবাসীগণ যখন জেদ্দায় পৌঁছবেন তাদের মীকাত হবে জুহফা কিংবা ইয়ালামলামের সমান্তরাল কোন স্থান কিংবা জেদ্দা; পূর্বোক্ত প্রশ্নোত্তরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে এটাই জানা যায়। অতএব, তারা তাদের মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধেনি। তারা মদিনায় এসে আবইয়ার আলী থেকে ইহরাম বেঁধেছে। তদুপরি তাদের ইহরাম সহিহ। কারণ অগ্রগণ্য মতানুযায়ী যে ব্যক্তি দুইটি মীকাত অতিক্রম করে; তার জন্য পরবর্তী মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা জায়েয আছে। এটি হানাফী মাযহাবের অভিমত।

কানযুদ দাকায়েক গ্রন্থে বলেছেন: “যে মদিনাবাসী যুলহুলাইফা থেকে ইহরাম না বেঁধে জুহফা থেকে ইহরাম বেঁধেছে তাতে কোন অসুবিধা নেই। অনুরূপ বিধান সে ব্যক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যে ব্যক্তি মদিনাবাসী নয়; কিন্তু মদিনার পথ দিয়ে গমনকারী।”

আবু হানিফা থেকে বর্ণিত আছে যে, তার উপর দম (পশু জবাই করা) ওয়াজিব হবে। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় মীকাতটি যদি মক্কার সন্নিকটে হয় সেক্ষেত্রেও। তবে প্রথম অভিমতটি অগ্রগণ্য। আয়েশা (রাঃ) হজ্জের জন্য যুলহুলাইফা থেকে ইহরাম করতেন এবং উমরার জন্য জুহফা থেকে ইহরাম করতেন। যেন তিনি হজ্জের অতিরিক্ত ফজিলতের কারণে অতিরিক্ত সওয়াব পেতে সেটা করতেন। যদি জুহফা তার মীকাত না হত তাহলে উমরার ইহরাম সেখান থেকে বাঁধা জায়েয হত না। কারণ মীকাতের বাইরে অবস্থানকারীদের জন্য হজ্জ কিংবা উমরার ইহরামের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।[তাবয়িনুল হাকায়েক শারহু কানযিদ দাকায়েক (২/৭)]

স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল (১১/১৫৫):

জনৈক ব্যক্তি হজ্জ করতে চান; কিন্তু মক্কাতে তার একটা প্রয়োজন আছে এবং মক্কার পর মদিনাতেও তার একটা প্রয়োজন আছে। সে মীকাত পার হয়ে এসেছে; কিন্তু ইহরাম বাঁধেনি। মক্কায় প্রবেশ করেছে; এরপর মদিনার উদ্দেশ্যে সফর করেছে। মদিনার মীকাত থেকে হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে। তার এ আমলের হুকুম কি?

তাঁরা জবাবে বলেন: যেহেতু সে ব্যক্তি মদিনার মীকাতে গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে এসেছে সুতরাং (পূর্বে) ইহরাম ছাড়া মক্কায় প্রবেশের কারণে তার উপর কোন কিছু অবধারিত হবে না। যদিও তার জন্য উত্তম ছিল তার প্রথম মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কায় প্রবেশ করা”। সমাপ্ত

ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি

আব্দুল্লাহ বিন গাদইয়ান; আব্দুর রাজ্জাক আফিফি; আব্দুল আযিয বিন বায।

শাইখ ইবনে উছাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

জনৈক ব্যক্তি জেদ্দা দিয়ে এসেছে কিন্তু ইহরাম বেঁধে আসেনি। প্রথমে মদিনায় গিয়ে মসজিদে নববী যিয়ারত করেছেন। তারপর মদিনার মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধেছে। তার আমলটা কি সহহি হল?

উত্তরে তিনি বলেন: এতে কোন অসুবিধা নেই। কোন ব্যক্তি যদি দেশ থেকে প্রথমে মদিনায় যাওয়ার নিয়ত করে আসেন। জেদ্দায় নেমে জেদ্দা থেকে মদিনার উদ্দেশ্য সফর করেন। এরপর মদিনাবাসীর মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধে আসেন। তাতে কোন অসুবিধা নেই।[লিকাউল বাব আল-মাফতুহ থেকে সমাপ্ত (নং ১২১)]

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব