কোনো ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরয হওয়ার পর তা আদায় করার আগেই যদি সে মারা যায় কিংবা স্বাস্থ্যগত কারণে হজ্জ সম্পাদনে অক্ষম হন তবে উভয় অবস্থায় অন্যের দ্বারা হজ্জ করানো জায়েয। শরীয়তের পরিভাষায় একে বদলি হজ্জ বলা হয়। বদলি হজ্জ শুদ্ধ হওয়ার কিছু শর্ত রয়েছে। যথা—
১। বিনিময় দেওয়ার শর্ত না থাকা।
২। ব্যয়ভার থাকবে প্রেরণকারীর দায়িত্বে। অবশ্য যদি বেশির ভাগ ব্যয় প্রেরণকারী বহন করে আর সামান্য কিছু ব্যয় পালনকারীও বহন করে, তবু জায়েয আছে।
৩। মৃত ব্যক্তি বা যার পক্ষ থেকে হজ্জ করানো হচ্ছে, তার মাতৃভূমি থেকে কেউ হজ্জ করা উচিত।
৪। ইহরাম বাঁধার সময় হজ্জের নিয়ত তার (হজ্জ যার পক্ষ থেকে) পক্ষে হতে হবে; যেমন—এরূপ বলবে যে আমি অমুক ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জের নিয়ত করছি।
৫। ইহরাম মিকাত থেকে বাঁধা উচিত, যদি প্রেরক ওমরাহ করার অনুমতি না দেয়, তাহলে মিকাত থেকে ওমরাহর ইহরাম বাঁধা যাবে না এবং হজ্জে তামাত্তুও করা যাবে না। হ্যাঁ, যদি সে বলে দেয়, যেভাবে ইচ্ছা আমার হজ্জ আদায় করে দেবে, তখন হজ্জে তামাত্তুও জায়েয হবে।
বদলি হজ্জ পালনকারী হজ্জের সফরে যদি প্রেরকের টাকা আলাদা রাখে, নিজের টাকার সঙ্গে না মেশায়, তাহলে আমানত রক্ষা হবে; সতর্কতা সত্ত্বেও নষ্ট হলে জামিন হবে না। পক্ষান্তরে যদি সে নিজের টাকার সঙ্গে মিলিয়ে রাখে, তাহলে নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বদলি হজ্জ পালনকারীকে যে টাকা দেওয়া হবে, তাতে খুব সতর্কতা আবশ্যক। অন্যথায় অন্যের হজ্জ বিনষ্ট করার অপরাধে গুনাহগার হতে হবে। তাই সফর শেষে যে অর্থ ও দ্রব্যসামগ্রী (তাদের পয়সায় কেনা) অবশিষ্ট থাকবে, তা ফেরত দেবে। উত্তম পদ্ধতি হলো, প্রেরক প্রথমেই বলে দেবে, এক সফরে ব্যয় বিষয়ক কোনো অসংগতি হলে আমার পক্ষ থেকে মাফ। (ইমদাদুল আহকাম : ২/১৮৭; মুয়াল্লিমুল হুজ্জাজ : ১/২৮১)
৬। যদি মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ যথেষ্ট হয় তাহলে যানবাহনে চড়ে হজ্জ করতে হবে। আর যদি পুরো হজ্জ পায়ে হেঁটে করে, ভাড়ার টাকা সঞ্চয় করে রাখে, তাহলে জরিমানা দেওয়া ওয়াজিব। প্রেরক যদি পদব্রজে হজ্জ করার অনুমতিও দেয় এবং মক্কা থেকে আরাফাতের ময়দানে যাওয়া-আসা যানবাহনে করা ওয়াজিব। আর বাকি সফরে প্রেরক অনুমতি দিলে পদব্রজে করাও জায়েয আছে। (ইমদাদুল আহকাম : ২/১৮৭)
৭। যদি জীবিত অক্ষম ব্যক্তির অনুমতি বা মৃত ব্যক্তির অসিয়তের কারণে বদলি হজ্জ করানো হয়, তাহলে তার (প্রেরকের) মাতৃভূমি থেকে কাউকে দিয়ে হজ্জ করানো আবশ্যক। এতে যদি মৃত ব্যক্তির এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ দিয়ে হজ্জের ব্যয় যথেষ্ট না হয় এবং তার ওয়ারিশরাও অতিরিক্ত সম্পদ ব্যয়ে রাজি না হয়, তাহলে ওই টাকায় যেখান থেকে খরচ সংকুলান হয়, সেখান থেকে বদলি হজ্জ করিয়ে দেবে। আর অসিয়তকারী যদি নিজে কোনো স্থান অথবা কিছু সম্পদ নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে তার কথা অনুসারে বদলি হজ্জ করাতে হবে। তবে সামর্থ্যবান মানুষের জন্য এরূপ নির্ধারণ মাকরুহ। (আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৫২০; ফাতাওয়া রহিমিয়া ৫/২২৮; আহকামে হজ্জ : ১২০)
সূত্রঃ পরিবর্তন ডটকম