নারীর হজ ও উমরা

নারীর হজ ও উমরা:
সূচিপত্রঃ

হজের অর্থ :

হজের গুরুত্ব ও ফজিলত :

মহিলাদের হজের গুরুত্ব:

হজের শর্তসমূহ:

এক. আর্থিক সক্ষমতা:

আর্থিক সংগতি বলতে কি বুঝায়? তার পরিমাণ কত ?

মাহরাম কারা?

 এক- বংশীয় মাহরাম

 দুই.- দুধ খাওয়া জনিত মাহরাম

 তিন- বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে মাহরাম

মাহরাম-এর কিছু শর্ত:

হজের আদবসমূহ:

আল্লাহর দরবারে আমল কবুল হওয়ার জন্য শর্ত সমূহ

হজ শুরু করার আগে যা করণীয়

এক. হজ শুরু করার আগে আপনাকে কয়েকটি কাজ করতে হবে

দুই. হজের সফরে আপনাকে কয়েকটি জিনিস সাথে নিতে হবে

তিন. হজের সফরে যাওয়ার সময় আপনার বিশেষ করণীয়

মহিলা হাজী সাহেবার জন্য যা বর্জনীয়

এহরামের আগে ও পরে সর্বাবস্থায় বর্জনীয় বিষয়সমূহ

এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহ

যদি কেউ নিষিদ্ধ বিষয়গুলো করে ফেলে তার কি করা উচিত ?

মহিলা হাজী সাহেবার এহরামের পোশাক

মহিলা হাজী সাহেবারা কীভাবে হজ এবং উমরা সম্পন্ন করবেন

উমরা অথবা হজের এহরাম হওয়ার আগে মহিলাদের

জন্য যা কিছু মুস্তাহাব

এহরাম অবস্থায় মহিলাদের পোশাক

তাওয়াফের ব্যাপারে মহিলাদের বিশেষ কিছু নির্দেশনা

তামাত্তু হজকারী হাজী সাহেবার জন্য হজের কার্যাবলী

তামাত্তু হজ আদায়কারী হাজী সাহেবাদের কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত রূপ

‘ইফরাদ’ অথবা ‘কিরান’

হজ আদায়কারী হাজী সাহেবাদের কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত রূপ

‘কিরান’ হজ আদায়কারী এবং ‘ইফরাদ’ হজ আদায়কারীর মধ্যে পার্থক্য

কিরান হজ আদায়কারীর কর্মকাণ্ড

ইফরাদ হজ আদায়কারীর কর্মকাণ্ড

হায়েয বা নেফাস ওয়ালী মহিলা হাজী সাহেবানদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড

হজে মহিলাদের সৌন্দর্যচর্চা সংক্রান্ত বিভিন্ন হুকুম আহকাম

হজে মহিলা ও তার সন্তান-সন্ততি

একনজরে মহিলা ও পুরুষ হাজীদের মধ্যে পার্থক্যসমূহ

শরিয়ত নিষিদ্ধ কিছু কর্মকাণ্ড থেকে সাবধানকরণ

মহিলা হাজীসাহেবা ও মদিনা শরীফের যিয়ারত

আল্লাহর দরবারে কবুল না হওয়ার ভয় থাকা

মহিলা হাজী সাহেবার জন্য সহিহ হাদিস থেকে নির্বাচিত কিছু মাসনুন দো’আ


ভূমিকা:

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله و الصلاة والسلام على رسول الله، وبعد :

হজ- নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ফরজ। তবে নারীর হজ পুরুষের হজ থেকে ভিন্ন ভাব-উপলব্ধির ধারক। কেননা নারীর হজ্তএক হাদিস অনুযায়্তীজেহাদ তুল্য (দ্র: বুখারি : ১৫২০)। পক্ষান্তরে পুরুষের হজ কেবলই হজ। হজ পালনে নারীর অধিকার পুরুষের থেকে কোনো অংশেই কম নয়, বিষয়টি শক্ত ভূমিতে দাঁড় করানোর জন্যই হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মহাতুল মুমিনিন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আদায় করেছেন বিদায় হজ। শুধু তাই নয়, হজ কর্মে বরং জড়িয়ে রয়েছে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থী নারীর ঈমান-বিধৌত স্মৃতি যা সাফা-মারওয়ার সাঈর আকারে আল্লাহর জিকিরের উদ্দেশে আদায় করতে হয় নারী-পুরুষ সকলকে সমানভাবে।

নারীর প্রকৃতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। সে হিসেবে হজ পালন অবস্থায় নারীর আচার-অবস্থা-আচরণের কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে বিশেষ কিছু দিকনির্দেশনা। হজ বিষয়ে সামগ্রিক ধারণা অর্জনের সাথে সাথে হজ পালনকারী নারীকে এ সব বিষয়ে সম্যক ধারণা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি।

আমাদের বর্তমান প্রকাশনাটি নারীর হজ ও উমরা বিষয়ে একটি মৌলিক গবেষণা। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য বিধানাবলি বিশদভাবে বর্ণনার পাশাপাশি নারীর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য কিছু বিধানের অনুপুঙ্খ বর্ণনা সংবলিত তথ্যনির্ভর গবেষণাটি অত্যন্ত যত্নের সাথে সম্পন্ন করেছেন বিশিষ্ট শরিয়তবিদ ড. আবু বকর যাকারিয়্তাচেয়ারম্যান ফিকাহ বিভাগ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। আল্লাহ তাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন।

নারীর হজ উমরা বিষয়ে এ ধরনের স্বতন্ত্র গবেষণা আমার ধারণা মতে বাংলাদেশে এই প্রথম। গবেষণা-কর্মটি হুজ্জাজ চেরিট্যাবল সোসাইটির পক্ষ থেকে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়ায় উক্ত সোসাইটির সকল কর্মকর্তা ধন্যবাদের দাবি রাখে। গবেষণা কর্মটি হজ পালনকারী নারীদের উপকারে আসলে আমাদের শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব। আল্লাহ আমাদের মেহনত কবুল করুন। আমিন।


হজের অর্থ :

হজ শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা। শরিয়তের পরিভাষায় হজ বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বায়তুল্লাহ ও আরাফা সহ সুনির্দিষ্ট কিছু স্থানে যাওয়া।

হজের গুরুত্ব ও ফজিলত:

হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা কাবা শরীফ পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য রাখেন তাদের উপর হজ ফরজ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে এভাবে তাগিদ দিয়ে বলেছেন:

﴿ وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ﴾

“মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য। এবং যে কেউ প্রত্যাখ্যান করল সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন।” [১]

উপরোক্ত আয়াতে হজকে আল্লাহর অধিকার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

সূরা আল-হজে আল্লাহ তাআলা হজের মূলে কি এবং তা কখন শুরু হয় তা স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন:

﴿وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالاً وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ* لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ﴾

“এবং মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দিন, ওরা আপনার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে ও সব ধরনের ক্ষীণকায় উটের পিঠে, এরা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। তারপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকে খাওয়াও।”[২]

উপরোক্ত নির্দেশটি মহান আল্লাহ ইব্‌রাহীম আলাইহিসসালামকে দিয়েছিলেন। তিনি সে নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছিলেন। আয়াতের তাফসীরে সাহাবি ও তাবেয়ীদের থেকে সহিহভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, ইব্‌রাহীম আলাইহিসসালাম এ নির্দেশ পাওয়ার পর বলেছিলেন, হে আমার প্রভু! আমার ঘোষণা তাদের কানে পৌঁছাবে কে? মহান আল্লাহ তখন সেটা পৌঁছানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন।[৩]

হজ মুসলিমদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কল্যাণকর ইবাদত। এটি সামর্থ্যবানদের জন্য জীবনে একবারই ফরজ। বাকি সময়ে সেটি তার জন্য নফল হিসেবে থাকে।

  • বিভিন্ন হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে হজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে তাগিদ করেছেন।
  • রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন: “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনা”। জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বললেন: “আল্লাহর পথে জিহাদ করা”। জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি জবাব দিলেন: “তারপর হচ্ছে মাবরুর হজ।[৪] হজে মাবরুর বলতে এমন হজকে বুঝায় যে হজে ত্রুটি হয়নি বা যা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য।
  • রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: “এক উমরা আদায় করার পর আবার উমরা আদায় করলে তা মাঝখানের সময়টুকুর জন্য কাফফারা হয়ে যায়। আর মাবরুর হজের প্রতিদানই হচ্ছে জান্নাত”।[৫]
  • রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: “যে ব্যক্তি এমনভাবে হজ করবে যে, তাতে সে অশ্লীল কথা বলে না এবং কোন গুনাহের কাজ করে না, সে সকল গুনাহ থেকে মা তাকে প্রসব করার দিনের মত অবস্থায় ফিরে যায়।”[৬]
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন : যে ব্যক্তি এ ঘরে আসল, তাতে সে অশ্লীল কথা বলে না এবং কোন গুনাহের কাজ করে না, সে সকল গুনাহ থেকে মা তাকে প্রসব করার দিনের মত অবস্থায় ফিরে যায়।”[৭] হাদিসটি একই সাথে হজ এবং উমরাকে অন্তর্ভূক্ত করে।[৮]

এ হচ্ছে হজের কিছু গুরুত্ব ও ফজিলত। যা নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাছাড়া নারীদের জন্য হজের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।


  • মহিলাদের হজের গুরুত্ব:

মহিলাদের হজের গুরুত্ব পুরুষদের থেকে আলাদা। কারণ তা তাদের জন্য জেহাদের সমতুল্য। হাদিসে এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো দেখছি জেহাদই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল, তাহলে আমরা (নারীরা) জেহাদ করব না কেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন: “তোমাদের জন্য মাবরুর হজই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ জেহাদ”।[৯]

এ হাদিস থেকে আমরা মহিলাদের জন্য হজের আলাদা গুরুত্ব বুঝতে পারি। এটি ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হওয়ার পাশাপাশি মহিলাদের জন্য জিহাদ। সুতরাং যে মহিলা হজের জন্য বের হয়েছেন সে হাজী সাহেবাকে আমরা আমাদের অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ এমন অনেক মহিলা আছে যাদের উপর হজ ফরজ হয়েছে অথচ তারা তা জানে না। আবার এমন অনেক মহিলাও আছেন যাদের উপর হজ ফরজ হওয়ার পরে তা করতে গড়িমসি করতে করতে অপারগ অবস্থায় উপনীত হয়েছে। এরা অবশ্যই গুনাহ্‌গার হবে। আপনাকে আল্লাহ তার আনুগত্যের জন্য বাছাই করে নিয়েছেন সে জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন এবং বলুন: আল-হাম-দু-লিল্লাহ।


হজের শর্তসমূহ:

অন্যান্য এবাদতের মত হজেরও কিছু শর্ত রয়েছে, তম্মধ্যে এমন কিছু শর্ত রয়েছে যা না পাওয়া গেলে হজ শুদ্ধই হবে না। যেমন,

১- মুসলিম হওয়া।

২- বিবেকবান হওয়া।

এ ছাড়া আরো কিছু শর্ত রয়েছে যা হজ ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত। শুদ্ধ হওয়ার জন্য নয়। যেমন:

৩- বালেগ হওয়া। যদি কোন শিশু হজ করে তবে তা তার নিজের ফরজ হজ হিসেবে আদায় হবে না।

৪- স্বাধীন হওয়া। দাসের উপর হজ করা ফরজ নয়। কিন্তু যদি কোন দাস হজ করে তবে তা শুদ্ধ হবে। এ শর্তগুলোর ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সমান।

৫- মক্কায় যাওয়ার ক্ষমতা থাকা।

এ শর্তের ব্যাপারে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে তারতম্য রয়েছে।

পুরুষের জন্য এ সক্ষমতা দু’ধরনের:

এক. আর্থিক সক্ষমতা।

দুই. শারীরিক সক্ষমতা।

যদি কারও আর্থিক ও শারীরিক ক্ষমতা থাকে তবে সে নিজেই হজ করতে হবে। আর যদি আর্থিক ক্ষমতা থাকে কিন্তু শারীরিক ক্ষমতা না থাকে তবে কাউকে দিয়ে হজ করাতে হবে। আর যদি শুধু শারীরিক ক্ষমতা আছে কিন্তু আর্থিক ক্ষমতা নেই তাহলে তার উপর হজ ফরজ নয়। কিন্তু তারপরও যদি সে তা করে তা গ্রহণযোগ্য হবে।


নারীদের জন্য সক্ষমতা তিন ধরনের:

এক. আর্থিক সক্ষমতা।

দুই. শারীরিক সক্ষমতা।

তিন. মাহরাম সাথে থাকা।

সুতরাং যদি কোন মহিলা আর্থিক ও শারীরিক ক্ষমতাসম্পন্ন হয় এবং মাহরাম পাওয়া যায় তবে তার উপর হজ ফরজ হবে।

কিন্তু যদি শুধু আর্থিক ক্ষমতা থাকে তবে মহিলার উপর হজ ফরজ হবে, তিনি নিজে না গেলে কাউকে তার পরিবর্তে হজে পাঠাতে হবে।

আর যদি শুধু শারীরিক ক্ষমতা থাকে তবে তার জন্য হজ ফরজ নয়। কিন্তু যদি তিনি কোনভাবে হজে গমন করেন তবে তার হজ হয়ে যাবে। মুহরিম সাথে না থাকলে সেজন্য গুনাহ্‌গার হবে।


আর্থিক সংগতি বলতে কি বুঝায়? তার পরিমাণ কত?

যদি কেউ ঋণ পরিশোধ করা, যাদের খাবার দেয়া তার উপর ওয়াজিব তাদের খাবার দেয়া, নিজের অত্যাবশ্যক সামগ্রী যেমন, খাবার, পানীয়, পরিধেয়, বাসস্থান ও এতৎসংক্রান্ত অতি প্রয়োজনীয় বস্তু যেমন বাহন, বই পত্র ইত্যাদির বাইরে হজে যাওয়া আসা করা এবং সেখানে খরচ করার মত সম্পদ থাকে তবে সে অবশ্যই হজের জন্য ক্ষমতাবান। তাকে হজ করতে হবে। আর এটাই শরিয়তের দৃষ্টিতে আর্থিক সংগতি ধরা হবে। এর পরিমাণ সময়, কাল, অবস্থা ও ব্যক্তির ভিন্ন হওয়া সাপেক্ষে ভিন্ন ভিন্ন হতে বাধ্য।


মাহরাম কারা?

এখানে মাহরাম তারাই যাদের সাথে বিয়ে হওয়া স্থায়ীভাবে হারাম। তারা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত:

এক. বংশীয় মাহরাম।

বংশীয় মাহরাম মোট সাত শ্রেণি:

১- মহিলার মূল যেমন, পিতা, দাদা, নানা। (যত উপরেই যাক)

২- মহিলার শাখা যেমন, পুত্র, পুত্রের পুত্র, কন্যার পুত্র। (যত নীচেই যাক)

৩- মহিলার ভাই। আপন ভাই বা বৈপিত্রেয় ভাই অথবা বৈমাত্রেয় ভাই।

৪- মহিলার চাচা। আপন চাচা বা বৈপিত্রেয় চাচা অথবা বৈমাত্রেয় চাচা। অথবা কোন মহিলার পিতা বা মাতার চাচা।

৫- মহিলার মামা, আপন মামা বা বৈপিত্রেয় মামা অথবা বৈমাত্রেয় মামা। অথবা কোন মহিলার পিতা বা মাতার মামা।

৬- ভাইপো, ভাইপোর ছেলে, ভাইপোর কন্যাদের ছেলে (যত নীচেই যাক)।

৭- বোনপো, বোনপোর ছেলে, বোনপোর কন্যাদের ছেলে (যত নীচেই যাক)।

দুই. দুধ খাওয়াজনিত মাহরাম।

দুধ খাওয়াজনিত মাহরামও বংশীয় মাহরামের মত সাত শ্রেণি। যাদের বর্ণনা উপরে চলে গেছে।

তিন. বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে মাহরাম।

বৈবাহিক কারণে চার শ্রেণি মাহরাম হয়।

১- মহিলার স্বামীর পুত্রগণ, তাদের পুত্রের পুত্রগণ, কন্যার পুত্রগণ (যত নীচেই যাক)।

২- মহিলার স্বামীর পিতা, দাদা, নানা (যত উপরেই যাক)।

৩- মহিলার কন্যার স্বামী, মহিলার পুত্র সন্তানের মেয়ের স্বামী, মহিলার কন্যা সন্তানের মেয়ের স্বামী (যত নীচেই যাক)

৪- যে সমস্ত মহিলাদের সাথে সহবাস হয়েছে সে সমস্ত মহিলার মায়ের স্বামী এবং দাদি বা নানির স্বামী।


মাহরাম- এর কিছু শর্ত:

মাহরামকে অবশ্যই মুসলিম, বিবেকবান এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে।


হজের আদবসমূহ:

১- একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার সাওয়াবের আশা করা।

২- খাটি তাওবা করে নেয়া

৩- পাওনাদারদের কাছ থেকে মাফ নেয়া।

৪- হজের মালটুকু পবিত্র হওয়া।

৫- প্রতিটি কাজে একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং উপর ভরসা করা।

৬- যেহেতু সে এক বরকতময় সফরে বের হয়েছে সুতরাং প্রত্যেক মানসিক, শারীরিক এবং আর্থিক কষ্ট ও খরচের জন্য সওয়াবের আশা করা।

৭- হজের যাবতীয় কষ্টকে ধৈর্য সহকারে মোকাবিলা করা।

৮- যাদের সাথে বের হলে ঈমান ও আমল ঠিক থাকবে তাদের সাথি হওয়া।

৯- নিয়মিত ফরজ নামাজসমূহ আদায় করা।

১০- বেশি বেশি করে আল্লাহর জিকির করা।


আল্লাহর দরবারে আমল কবুল হওয়ার জন্য শর্ত সমূহ:

মহান আল্লাহর দরবারে কোন আমল কবুল হতে হলে দু’টি শর্ত অপরিহার্য।

এক. এখলাস তথা কাজটি একমাত্র আল্লাহর জন্য হওয়া। সুতরাং আমল করার আগে তাওহীদ ঠিক রাখতে হবে। শিরক থেকে মুক্ত থাকতে হবে।

দুই. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত মোতাবেক হতে হবে। যদি রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী না হয় তা হলে বিদ’আতে পরিণত হবে।


হজ শুরু করার আগে যা করণীয়:


এক. হজ শুরু করার আগে আপনাকে কয়েকটি কাজ করতে হবে:

১- স্বামীর অনুমতি:

(ক) যদি আপনার হজটি ফরজ হজ হয়ে থাকে তবে স্বামীর অনুমতি নেয়া আপনার জন্য মুস্তাহাব। যদি স্বামী অনুমতি দেন তবে ভাল। আর যদি অনুমতি না দেন তারপরও যদি আপনি মুহরিম সাথি পান তবে আপনাকে হজ করতে হবে। কোন স্বামীর জন্য আপন স্ত্রীকে ফরজ হজ আদায় করতে বাধা দেয়া উচিত হবে না। হাঁ, এ ব্যাপারে স্ত্রীর নিরাপত্তা ও অন্যান্য যাবতীয় শর্তাদি পূরণ হয়েছে কি না তা দেখাও স্বামীর কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কারণ, সক্ষম হলেই দেরি না করে হজ আদায় করে নেয়া উচিত। নচেৎ যদি বাধা দেয়ার কারণে স্ত্রী কোন কারণে পরবর্তীতে অপারগ হয়ে পড়ে তবে স্বামী সহ তারা উভয়ই গুনাহ্‌গার হবে।

আর যদি আপনার হজটি নফল হজ হয়ে থাকে তবে স্বামীর অনুমতি নেয়া আপনার জন্য ফরজ। স্বামীর অনুমতি ব্যতীত আপনি হজে যেতে পারবেন না। অনুরূপভাবে, স্বামীও আপনাকে নফল হজে গমনের ক্ষেত্রে তার অধিকারের কথা বিবেচনায় রেখে বাধা দেয়ার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।

আর যদি কোন মহিলা স্বামীর মৃত্যু-জনিত ইদ্দত পালন অবস্থায় থাকে। তাহলে সে মহিলা ইদ্দতের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত হজে যেতে পারবে না। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন:

﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحْصُوا الْعِدَّةَ وَاتَّقُوا اللَّهَ رَبَّكُمْ لا تُخْرِجُوهُنَّ مِنْ بُيُوتِهِنَّ وَلا يَخْرُجْنَ﴾

“হে নবী! তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রী গণকে তালাক দিতে ইচ্ছে কর তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং তোমরা ইদ্দতের হিসেব রেখো এবং তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বহিষ্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয়।”[১০]

(খ) কোন পিতা বা মাতা কেউই তাদের মেয়ে সন্তানকে ফরজ হজে গমন করতে বাধা দেয়ার অধিকার রাখে না। যদি কোন মেয়ে হজে যাওয়ার সামর্থ্য থাকে এবং মাহরাম পায় তখন তার জন্য পিতা-মাতার আনুগত্যের দোহাই দিয়ে হজে যাওয়া থেকে বিরত থাকা বৈধ নয়।

২- মাহরাম থাকা:

মহিলাদের উপর হজ ফরজ হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে, মাহরাম থাকা। কেননা; কোন মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের একাকী সফর করা জায়েয নয়। এ ব্যাপারে যুবা-বৃদ্ধা, সুন্দরী-কুশ্রী, চাই সে সফর উড়োজাহাজে হোক অথবা গাড়ি-রেলগাড়ি যেটাই হোক সর্বাবস্থায় মাহরাম থাকা বাধ্যতামূলক। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

لا تسافر المرأة إلا مع ذي محرم، ولا يدخل عليها رجل إلا ومعها محرم، فقال رجل يا رسول الله: إني أريد أن أخرج في جيش كذا وكذا، وامرأتي تريد الحج ؟ فقال: اخرج معها.

“কোন মহিলা মাহরাম ছাড়া যেন সফর না করে, অনুরূপভাবে কোন মাহরাম এর উপস্থিতি ছাড়া কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার ঘরে প্রবেশ না করে” এ কথা শোনার পর এক ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক যুদ্ধে যেতে চাই অথচ আমার স্ত্রী হজে যেতে চায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তুমি তার সাথে বের হও”।[১১]

৩- খাটি তাওবা :

তাওবাহর গুরুত্ব এ থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলা কেবলমাত্র মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করেন। মহান আল্লাহ বলেন:

﴿إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ﴾

“আল্লাহ কেবলমাত্র মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করেন”।[১২]

আর যে ব্যক্তি বারবার কোন গুনাহ করে সে তাকওয়া থেকে দূরে রয়েছে। সুতরাং এ গুরুত্বপূর্ণ সফরের পূর্বে অবশ্যই খাটি তাওবা করে নেয়া উচিত এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসা দরকার। মহান আল্লাহ কোন বান্দার তাওবায় এতই খুশি হোন যে, এ বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি উদাহরণের মাধ্যমে পেশ করেছেন। তিনি বলেন:

لله أشد فرحاً بتوبة عبده، حين يتوب إليه من أحدكم كان على راحلته بأرض فلاة فانفلتت منه وعليها طعامه وشرابه، فأيس منها فأتى شجرة فاضطجع في ظلها، فبينما هو كذلك، فإذا هو بها قائمة عنده، فأخذ بخطامها، ثم قال من شدة الفرح: اللهم أنت عبدي وأنا ربك، أخطأ من شدة الفرح.

“কোন বান্দা যখন তাওবা করে তখন আল্লাহ তার তাওবায় এতই খুশি হোন যেমন তোমাদের কেউ শুষ্ক জনমানবহীন মরুভূমিতে ছিল। এমন সময় তার বাহনটি তার কাছ থেকে পালিয়ে গেল অথচ সে বাহনের উপর তার খাবার ও পানীয় রয়েছে। সে নিরাশ হয়ে এক গাছের নীচে শুয়ে পড়ল। তার মনে হচ্ছে যে, মৃত্যু তার খুবই নিকটে। এমতাবস্থায় হঠাৎ করে সে দেখল যে, তার বাহনটি তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তখন সে বাহনটির লাগাম ধরে খুশির চোটে ভুল করে বলল: হে আল্লাহ তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রভু।”[১৩]

আর তাওবাহ তখনই পূর্ণ হবে যখন যাবতীয় হারাম কার্যাদী থেকে নিজেকে পবিত্র রাখা যায়। চাই তা কথার মাধ্যমে হোক বা কাজের মাধ্যমে হোক যেমন, গিবত, পরনিন্দা, পরচর্চা, বেপর্দা, ও হারাম গান-বাদ্য ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকতে হবে।

৪- এখলাস :

তাকওয়ার উপর ভিত্তি করে কোন এবাদত না হলে যেমন তা কবুল হয় না তেমনিভাবে এখলাস না থাকলেও সেটা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হয় না। একমাত্র মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোন কাজ না হলে আল্লাহ সেটা গ্রহণ করেন না। সুতরাং যে কেউ লোক দেখানো অথবা শোনানোর জন্য, হাজী সাহেবা বলানোর জন্য হজ করতে যাবে সে সওয়াবের বদলে তার জীবনের সমস্ত সওয়াব শেষ করে আসবে। কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বলবেন:

اذهبوا إلى الذين كنتم تراءون)

“তাদের কাছে যাও যাদেরকে দেখানো বা শোনানোর জন্য তোমরা আমল করেছিলে”।[১৪]

৫- অসিয়ত করা।

এ সফরে যাওয়ার আগে আপনি আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য অসিয়ত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

(ما حق امرئ مسلم له شيء يوصي فيه يبيت ليلتين إلا ووصيته مكتوبة عنده)

“কোন মুসলিমের যদি কোন কিছু অসিয়ত করার থাকে তার জন্য এটা উচিত হবে না যে, সে অসিয়ত না করে দু’টি রাত যাপন করে”।[১৫]

আলেমগণ বলেন, যদি মানুষের হকের ব্যাপারে কোন অসিয়ত থাকে, যেমন কারো ঋণ, আমানত অথবা কোন ফরজ হক যা অসিয়ত ছাড়া সাব্যস্ত করার উপায় নেই এমতাবস্থায় অসিয়ত করে তা লিখে রাখাও উচিত। আর যদি কারো জন্যে সম্পদ থেকে নফল অসিয়ত করতে চায় তাহলে এক তৃতীয়াংশের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ রাখা প্রয়োজন।

৬- হজের মাসলা-মাসায়েল শিক্ষা করা.

হজের হুকুম আহকাম জানা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অথচ অধিকাংশ মানুষ হজের নিয়মাবলি না জেনে বা ভাসা ভাসা ধারণা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে। ফলে অনেক সময় দেখা যায় যে হজের জন্য এতকিছু বিসর্জন দিল তার সে হজ আশানুরূপ হয়ে উঠে না। অন্যায়-ও শরিয়ত গর্হিত কাজে নিজেরা জড়িয়ে পড়ে। আবার অনেকে বিদআতও করে বসে। হজ করা যেমন ফরজ, হজের নিয়ম-নীতি জানাও তেমনি ফরজ। কারণ, ফকিহগণের সুনির্দিষ্ট একটি “ধারা” হলো: “যা না হলে ফরজ আদায় হয় না তা করাও ফরজ।”

সুতরাং প্রত্যেক হাজী সাহেবারই উচিত হজের মাসলা-মাসায়েল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা। চাই সেটা বিজ্ঞ আলেমদের জিজ্ঞাসা করেই হোক বা গ্রহণযোগ্য হজের কিতাব পাঠ করার মাধ্যমেই হোক অথবা হজ সংক্রান্ত কোন ক্যাসেট বা সিডি দেখার মাধ্যমেই হোক।

৭- টিকা গ্রহণ করা.

মুসলিম নর-নারী সবারই উচিত ছোট-বড় যাবতীয় বিষয়ে একমাত্র আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে কাজ করা। এ তাওয়াক্কুলের পর্যায়ে পড়ে এতদসংক্রান্ত বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা। উপায়-উপকরণ গ্রহণের প্রথমেই রয়েছে, টিকা গ্রহণ করা। কারণ বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে মানুষের সমাগম হয়। বিভিন্ন ধরনের মহামারির উপদ্রব হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই আল্লাহর উপর ভরসা করার সাথে সাথে তাকে মারাত্মক জ্বর-রোগ-ব্যামো ইত্যাদির জন্য টিকা নেয়া উচিত।


দুই. হজের সফরে আপনাকে কয়েকটি জিনিস সাথে নিতে হবে:

হজের সফরে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জিনিস সাথে নিতে হতে পারে, যা আপনার কাজে আসবে। যেমন:

১- এক খণ্ড কোরআন শরীফ :

যাতে আপনি গাড়ি, কিংবা বিমান অথবা খীমা যেখানে যে অবস্থায় থাকুন না কেন নিজের সময়টুকু কাজে লাগাতে পারেন। এ গুরুত্বপূর্ণ ঈমানী সফরটুকুকে কাজে লাগানোর সবচেয়ে উত্তম ও সঠিক মাধ্যম হলো, আল্লাহর কোরআনের সাথে সময়টুকু কাটানো। চিন্তা করে দেখুন, এক বর্ণে দশ নেকি থেকে শুরু করে সাত শত নেকি পর্যন্ত।

অনেকে বাজারে প্রচলিত ওজিফা নিয়ে থাকে। এ সমস্ত ওজিফা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শরিয়ত-বিরুদ্ধ কথা ও কাজে ভরপুর। এগুলো সাথে নেয়া যেমন গর্হিত কাজ তেমনি এগুলো পড়ে সময় নষ্ট করাও খারাপ কাজ। এগুলোর পরিবর্তে নিজেকে পবিত্র কোরআনের সাথে রাখুন।

২- ব্যাটারি সমেত ছোট একটি ক্যাসেট প্লেয়ার:

কারণ যখন আপনার কোরআন পড়তে অসুবিধা হবে তখন আপনি কারো কোরআন পড়া শুনতে পারেন। কোরআন শুনলেও সওয়াব হয়। সুতরাং আপনার প্রতিটা মুহূর্তে কোন না কোন ভাল কাজে ব্যয় করার জন্য সচেষ্ট থাকুন। তাছাড়া কোন হজ বা দীনি কোন ভাল আলেমের ক্যাসেটও শুনতে পারেন।

৩- গুরুত্বপূর্ণ কিছু দ্বীনি কিতাব:

হজের আহকাম সংবলিত ভালো ও গ্রহণযোগ্য কোন গ্রন্থ আপনার সাথে রাখার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে শায়খ আব্দুল আযীয ইবনে বায ও শায়খ মুহাম্মদ ইবনে সালেহ আল-উসাইমীন রাহেমাহুল্লাহ এর গ্রন্থসমূহ থেকে আপনি হজের সঠিক দিক-নির্দেশনা নিতে পারেন।

৪- স্যানেটারী ন্যাপকিন ও গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ সাথে নেয়া:

বিশেষ করে যাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে, তাদের উচিত যে ঔষধ তাদের সবসময় সেবন করতে হয় তা সাথে নিয়ে নেয়া। যেমন, ডায়াবেটিস, হাইপার-টেনশন, রক্তচাপ, মাথা ব্যথা ইত্যাদির ঔষধ সাথে নিয়ে নেয়া জরুরি।


তিন. হজের সফরে যাওয়ার সময় আপনার বিশেষ করণীয়

৫- হজে বের হওয়ার পূর্ব ক্ষণে দু’রাকাআত নামাজ পড়ে এ নামাজের অসীলা দিয়ে দোয়া করতে পারেন যাতে আল্লাহ আপনার যাবতীয় কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেন।

৬- হজে বের হওয়ার সময় সফরের শুরুতে যানবাহনে উঠে সফরের দোয়া পড়া। সফরের দোয়া হচ্ছে:

“الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر،﴿سُبْحانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ * وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ﴾ “اَللّهُمَّ إنَّا نَسْأَلُكَ فِيْ سَفَرِنَا هذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوى، وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضى، اللَّهٌمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَه، اللَّهُمَّ أنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ، وَالخَلِيْفَةِ فِي الأهْلِ، اللَّهُمَّ إنِّي أعُوْذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ، وَكَآبَةِ الْمَنْظَرْ وَسُوْءِ المُنْقَلَبِ فِي المَالِ وَالأهْلِ”.

উচ্চারণ: “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। সুবহানাল্লাযী সাখখারা লানা হাযা ওমা কুন্না লাহূ মুকরিনীন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনকালিবূন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফী সাফারিনা হাযাল বিররা ওয়াত্‌ তাক্‌ওয়া, ওয়া মিনাল ‘আমালি মা তারদ্বা, আল্লাহুম্মা হাওয়িন ‘আলাইনা সাফারানা হাযা ওয়াতওয়ে ‘আন্না বু’দাহু, আল্লাহুম্মা আনতাস সাহিবু ফিস সাফারে ওয়াল খালিফাতু ফিল আহলি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযু বিকা মিন ওয়া’সায়িস সাফারে, ওয়া কাআবাতিল মানযারি ওয়া সূওয়িল মুনকালাবি ফিল মালি ওয়াল আহল”।

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। কতই না পবিত্র সে মহান সত্তা যিনি আমাদের জন্য এটাকে বশীভূত করে দিয়েছেন যদিও আমরা তা বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না, আর আমরা অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব আমাদের প্রতিপালকের নিকট।” হে আল্লাহ! আমাদের এ সফরে আমরা আপনার নিকট নেককাজ আর তাকওয়া এবং যে কাজে আপনি সন্তুষ্ট এমন কাজ প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এ সফরকে সহজসাধ্য করে দিন এবং এর দূরত্বকে আমাদের জন্য হ্রাস করে দিন। হে আল্লাহ! আপনিই সফরে আমাদের সাথি এবং গৃহে রেখে আসা পরিবার পরিজনের খলিফা বা স্থলাভিষিক্ত (তাদের রক্ষণা বেক্ষনকারী)। হে আল্লাহ! আমরা আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি সফরের ক্লেশ হতে এবং অবাঞ্ছিত কষ্টদায়ক দৃশ্য দর্শন হতে এবং সফর হতে প্রত্যাবর্তনকালে সম্পদ ও পরিজনের ক্ষয়ক্ষতির অনিষ্টকর দৃশ্য দর্শন হতে।[১৬]


মহিলা হাজী সাহেবার জন্য যা বর্জনীয়:

  • এহরামের আগে ও পরে সর্বাবস্থায় বর্জনীয় বিষয়সমূহ:

কিছু কিছু জিনিস এমন আছে যেগুলো এহরাম অবস্থা ছাড়াও হারাম। তারপর যদি সেগুলো এহরাম অবস্থায় করা হয় তখন সেটা গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত হয়। সুতরাং হজের এহরাম বাধা বা সংকল্প করার সাথে সাথে প্রত্যেকে হাজী সাহেবার উচিত এগুলো থেকে নিজেকে হেফাজত করা। যেমন, গিবত, চোগলখোরী, পরনিন্দা, পর-চর্চা, মিথ্যা কথা, মিথ্যা সাক্ষী, হারাম গান-বাজনা শোনা, হারাম বস্তুর দিকে তাকানো, গালি-গালাজ অন্যায় আচরণ ও ঝগড়া ইত্যাদি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে রাখতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন:

﴿الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلا رَفَثَ وَلا فُسُوقَ وَلا جِدَالَ فِي الْحَجِّ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللَّهُ وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى وَاتَّقُونِ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ﴾

“হজ হয় সুবিদিত মাসগুলোতে। তারপর যে কেউ এ মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে তার জন্য হজের সময় স্ত্রী-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ করা যাবে না। তোমরা উত্তম কাজের যা কিছু কর আল্লাহ তা জানেন আর তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর, অবশ্য তাকওয়াই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর।”[১৭]

এ জন্য মহিলা হাজীসাহেবাদের উচিত যে সমস্ত কথাবার্তায় কোন উপকার নেই সে সমস্ত কথা ত্যাগ করে চলা। এতে করে তিনি অনেক পাপাচার থেকে নিজেকে হেফাজত করতে পারবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليقل خيراً أو ليصمت

“তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও আখেরাত দিনের উপর ঈমান রাখে সে যেন কল্যাণের কথা বলে অথবা চুপ থাকে”।[১৮]

সুতরাং আপনার উচিত কাজ হবে অবসর সময়টুকু তালবিয়া, আল্লাহর জিকির, কোরআন তিলাওয়াত, সৎকাজের আদেশ অসৎ কাজ থেকে নিষেধ অথবা কোন মূর্খকে কিছু শেখানোর মাধ্যমে কাটানো। যে সমস্ত কথাবার্তায় গুনাহ নেই তা বলা জায়েয হলেও কম বলা উচিত।

  • এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহ :

১) মাথার চুল কামানো বা উঠানো অথবা যে কোনভাবে তা দূর করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন:

وَلا تَحْلِقُوا رُؤُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ

“আর যতক্ষণ পর্যন্ত হাদী তার স্থানে না পৌঁছাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের মাথা মুণ্ডন করো না”।[১৯]

অধিকাংশ আলেমের মতে, শরীরের অন্যান্য অংশের চুলের বিধানও একই প্রকার। সুতরাং এহরাম অবস্থায় শরীরের কোন অংশের চুলই কাটতে বা ছাঁটতে পারবে না।

২) নখ কাটাঃ

আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, এহরাম অবস্থায় চুল কাটা যেমন হারাম তেমনি নখ কাটাও হারাম। তবে যদি কোন কারণে নখ ভেঙে যায় তবে সেটা ফেলে দেয়ায় কোন দোষ নেই।[২০]

৩) গায়ে বা কাপড়ে সুগন্ধি লাগানো:

এহরাম অবস্থায় গায়ে বা কাপড়ে সুগন্ধি লাগানো যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

(لا تلبسوا من الثياب شيئا مسه الزعفران. ولا الورس )

“তোমরা এমন কাপড় পরিধান করো না যাতে জাফরান বা ওয়ারস সুগন্ধি লেগেছে।”[২১]

অনুরূপভাবে এক সাহাবি হজের সময় তার বাহন থেকে পড়ে মারা যায় তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কাফন দেয়ার নিয়ম বলে দেয়ার সময় বলেছিলেন:

(ولا تقربوه طيبا )

“তোমরা একে আতর বা সুগন্ধি লাগিও না”।[২২] তাই সুগন্ধিযুক্ত বস্তু পরিত্যাগ করতে হবে। যেমন, সুগন্ধিযুক্ত সাবান, সুগন্ধিযুক্ত পানীয় ও খাবার ইত্যাদিও পরিত্যাজ্য।

৪) নেকাব ও হাত মোজা পরিধান করা পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

( لا تتنقب المرأة الحرم (أي المحرمة ) ولا تلبس القفازين )

“এহরাম অবস্থায় কোন মহিলা নেকাব পরবে না, অনুরূপভাবে হাত মোজাও লাগাবে না”।[২৩]

৫) বিয়ে-শাদি করা বা করানো কোনটাই করা যাবে না:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

( لا ينكح المحرم ولا ينكح ولا يخطب )

“এহরাম অবস্থায় কেউ বিয়ে করবে না, বিয়ে দেবে না, বিয়ের প্রস্তাবও করবে না”।[২৪] যদি কেউ এ ধরনের কাজ করে তবে তা ফাসেদ/বাতিল বলে পরিগণিত হবে।

৬) সহবাস বা এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক কর্মকাণ্ড যেমন প্রবল আকাংখা জনিত স্পর্শ, চুমু ইত্যাদি থেকেও দূরে থাকতে হবে। যদি কেউ প্রাথমিক হালাল হওয়ার (পাথর মারার) পূর্বে সহবাস করে তবে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই হজ বাতিল হয়ে যাবে।

৭) স্থল ভূমির শিকার করা বা শিকারে সহায়তা করাও নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন:

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَقْتُلُوا الصَّيْدَ وَأَنْتُمْ حُرُمٌ﴾

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা এহরাম অবস্থায় শিকার করো না”।[২৫] পুরুষ ও মহিলা উভয়ই এ ধরনের শিকার থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে হবে। তবে যে সমস্ত প্রাণী কষ্টদায়ক সেগুলো মারতে কোন দোষ নেই। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন:

أمر الرسول صلى الله عليه وسلم بقتل خمس فواسق في الحل والحرم : الحدأة والغراب والفأرة والعقرب والكلب العقور

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ ধরনের প্রাণীকে হালাল এলাকা এবং হারাম এলাকা উভয় স্থানেই হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন, তা হলো: চিল, কাক, ইঁদুর, সাপ-বিচ্ছু এবং হিংস্র কুকুর”।[২৬]

যদি কেউ নিষিদ্ধ বিষয়গুলো করে ফেলে তার কি করা উচিত?

কোন মহিলা যদি এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বস্তুগুলো করে ফেলে তখন তার তিনটি অবস্থা থাকতে পারে:

– সে তা ভুলে বা অসাবধানতাবশত. অথবা জোরকৃত হয়ে বা ঘুমন্ত অবস্থায় করে ফেলে তবে তার কিছুই করার নেই। সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। এ সব অবস্থায় আল্লাহ তাআলা বান্দাকে যে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন তা হলো: দোয়া

﴿رَبَّنَا لا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِيْنَا أَوْ أَخْطَأْنَا﴾

“হে আমাদের প্রভু! আমরা যদি বিস্মৃত হই বা ভুল করে বসি তবে সে জন্য আপনি আমাদের পাকড়াও করবে না”[২৭] কিন্তু যখনই সেই ওজর শেষ হয়ে যাবে তখন থেকে আর তা করা যাবে না। যেমন মূর্খ ব্যক্তি জানার পর, ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হওয়ার পর, বিস্মৃত ব্যক্তি মনে হওয়ার পর সে ধরনের গুনাহ আর করতে পারবে না।

– আর যদি কেউ এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজগুলো কোন ওজর থাকার কারণে করে তবে সে গুনাহ থেকে মুক্তি পেলেও তাকে সেগুলোর জন্য ফিদয়া দিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন:

﴿وَلا تَحْلِقُوا رُؤُوسَكُمْ حَتَّى يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضاً أَوْ بِهِ أَذىً مِنْ رَأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِنْ صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ فَإِذَا أَمِنْتُمْ فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ﴾

“আর যে পর্যন্ত কুরবানির পশু তার স্থানে না পৌঁছে তোমরা মাথা মুণ্ডন করো না। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ পীড়িত হয় বা মাথায় ব্যথা হয় তবে সিয়াম কিংবা সাদকা অথবা কুরবানির দ্বারা ওটার ফিদ্‌য়া দেবে। যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি হজের পূর্বে ‘উমরা দ্বারা লাভবান হতে চায় সে সহজলভ্য ‘হাদী’ জবেহ করবে। কিন্তু যদি কেউ তা না পায় তবে তাকে হজের সময় তিন দিন এবং ঘরে ফেরার পর সাত দিন এ পূর্ণ দশ দিন সিয়াম পালন করতে হবে।”[২৮]

আর যদি কেউ এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে করে তবে সে গুনাহ্‌গার হওয়ার পাশাপাশি সেগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট ফিদয়া দিতে হবে। ফিদয়া দেয়ার ক্ষেত্রে এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বস্তুগুলোকে আমরা চারভাগে ভাগ করতে পারি:

  • যে নিষিদ্ধ কাজ করলে শুধু গুনাহ হয় ফিদয়া দেয়ার বিধান রাখা হয়নি এবং তা হলো, বিয়ে করা বা দেয়া। এতে ব্যক্তি গুনাহ্‌গার হবে এবং সে বিয়ে বাতিল বা ফাসেদ হবে কিন্তু কোন ফিদয়া দিয়ে মুক্তি পাওয়ার বিধান রাখা হয়নি।
  • যে নিষিদ্ধ কাজ করলে একটি পূর্ণ উট, অথবা গরু ফিদয়া হিসেবে জবাই করতে হয় তা হলো, পাথর মেরে প্রাথমিক হালাল হওয়ার পূর্বে সহবাস করা। মূলত: এ ধরনের সহবাসের কারণে মোট চারটি কাজ করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়:

এক. হজ বাতিল হয়ে যাবে।

দুই. ফিদয়া দিতে হবে, আর তা হলো, একটি পূর্ণ উট, বা গরু।

তিন. যে হজটি করছে তা পূর্ণ করতে হবে।

চার. আগামীতে সে হজের কাজা করতে হবে।

  • যে নিষিদ্ধ কাজ করলে এর সমপরিমাণ প্রতিবিধান করতে হয়। আর তা হলো, কোন স্থল প্রাণী শিকার করা। যেমন হরিণ শিকার বা খরগোশ শিকার করা। এটা করলে শিকারকৃত প্রাণীর অনুপাতে জন্তু জবাই করতে হবে।
  • যে নিষিদ্ধ কাজ করলে সওম (রোজা) বা সাদকা বা একটি ছাগল/দুম্বা জবাই করতে হবে। আর তা হলো, উপরোল্লেখিত নিষিদ্ধ কাজগুলো ব্যতীত এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ অন্যান্য কাজগুলোর কিছু করা। যেমন: বিনা ওজরে মাথা কামানো, আতর লাগানো। ইত্যাদি। রোজার পরিমাণ হলো, তিনদিন। আর সাদকার পরিমাণ হলো, ছয়জন মিসকিনকে তিন সা’ পরিমাণ খাবার দেয়া। (এক সা’= কমপক্ষে ২০৪০ গ্রাম)।

মহিলা হাজী সাহেবার এহরামের পোশাক:

মহিলাদের এহরামের পোশাকের ক্ষেত্রে শরিয়ত কোন পোশাক নির্দিষ্ট করে দেয়নি। অনেকেই মনে করে থাকে মহিলারা সেলোয়ার কামিজ পড়তে হবে বা তাদের পোশাক সাদা হতে হবে। এ ধরনের কোন নিয়ম শরিয়ত নির্ধারণ করে দেয়নি।

সুতরাং মহিলা এহরামের জন্য তার স্বাভাবিক পোশাকই পরতে পারবে। তবে তাকে অবশ্যই শরিয়ত নিষিদ্ধ পোশাক পরিত্যাগ করতে হবে। তার পোশাক আঁট সাট, এমন মিহি যেন না হয় যাতে শরীর স্পষ্ট হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। তবে সবচেয়ে ভাল হয় এমন পোশাক পরা যা মানুষের দৃষ্টি কাড়বে না। কেননা, এখানে পুরুষ মহিলা কাছাকাছি অবস্থান করে থাকে। সৌন্দর্যময় পোশাক পরার মধ্যে ফিতনায় পড়ে যাওয়া এবং ফেলে দেয়ার ভয় আছে।

তারপরও মহিলারা কয়েকটি পোশাক পরতে পারবে না :

১ ও ২- এহরাম অবস্থায় মহিলাদের জন্য হাত মোজা ও নেকাব পড়া হারাম:

কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “এহরাম অবস্থায় মহিলারা নেকাবও পরবে না, আবার হাত মোজাও পরবে না।” সহীহ বুখারি: ১৭৪১ কিন্তু যদি অপরিচিত পুরুষ মহিলাদের পাশ দিয়ে যায়, তবে মাথার ওড়না দ্বারা মুখ ঢেকে রাখতে হবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: “পুরুষরা আমাদের পাশ দিয়ে যেত যখন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এহরাম অবস্থায় ছিলাম, তখন আমাদের নিকটবর্তী হলে আমাদের প্রত্যেকে মাথার ওড়না মুখের উপর দিতাম। যখন তারা আমাদের পাশ দিয়ে চলে যেত, তখন আবার মুখের থেকে কাপড় সরিয়ে নিতাম।”[২৯]

৩- এহরাম অবস্থায় মহিলারা সুগন্ধিযুক্ত কাপড় ব্যবহার করতে পারবে না। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা এহরাম অবস্থায় বলেন: “ঠোঁটের উপর কোন কাপড় দেবে না, নেকাব পরবে না এবং যে কাপড়ে জাফরান ও ওর্য়া‌স (এক ধরনের সুগন্ধি) লেগে আছে, সে কাপড় পরিধান করবে না।”[৩০]

৪- এহরাম অবস্থায় মহিলাদের জন্য যেকোনো রঙের পোশাক পরা জায়েয আছে। যেমন, কালো, লাল, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি। অন্য রঙের চেয়ে সবুজ বা সাদা রঙের কোন বিশেষত্ব নেই।

৫- এহরাম অবস্থায় মহিলারা তাদের কাপড় বদলিয়ে পরিষ্কার অন্য কোন কাপড় পরতে পারবে।

৬- এহরাম অবস্থায় যদি কোন মহিলা ভুলে অথবা অজ্ঞাতবশত নেকাব পরে, তবে তার উপর কোন কাফ্‌ফারা নেই এবং তার হজ বা উমরা সঠিক হবে। কেননা, কাফফারা শুধুমাত্র ঐ ব্যক্তির জন্য, যে হুকুম জানার পরও নিষিদ্ধ কাজে হাত দেয়।

৭- এহরাম অবস্থায় মহিলাদের জন্য পা-মোজা পরা জায়েয আছে। বরং তা উত্তম। কেননা, এর দ্বারা তার পা ঢেকে রাখা যাবে।


মহিলা হাজী সাহেবারা কীভাবে হজ এবং উমরা সম্পন্ন করবেন:

এতে তিনটি বিষয় আলোচনা করা হবে। আর তা হল:

 এক. তামাত্তু হাজী সাহেবাদের জন্য বিস্তারিত পদক্ষেপসমূহ।

 দুই. তামাত্তু হাজী সাহেবাদের জন্য সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট নকশা।

 তিন. কেরান ও ইফরাদ হাজী সাহেবাদের জন্য সংক্ষিপ্ত নকশা।

 এক. তামাত্তু’ হাজী সাহেবাদের জন্য বিস্তারিত পদক্ষেপসমূহ:

এটা স্বীকৃত কথা যে, যে ব্যক্তি হাদী সাথে নিয়ে আসেনি তার জন্য সবচেয়ে উত্তম হজ হলো, তামাত্তু হজ। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা করার জন্য সাহাবায়ে কেরামকে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন: “যদি আমি পিছনে যা করে এসেছি তা নতুন করে করতাম তবে আমি ‘হাদী’ নিয়ে আসতাম না।'[৩১] অর্থাৎ, যদি আমি এখন যা দেখছি তা আগে দেখতাম এবং আমার আবার নতুনকরে কাজ শুরু করার সুযোগ থাকত তবে আমি কেরান হজ না করে তামাত্তু হজ করতাম। এবং হজ ও উমরার মাঝখানে এহরাম ছেড়ে হালাল হয়ে যেতাম।


উমরা অথবা হজের এহরাম হওয়ার আগে মহিলাদের জন্য যা কিছু মুস্তাহাব:

গোসল করা. মহিলাদের মধ্যে কারও যদি হায়েয অথবা নিফাস থাকে, তবুও গোসল করা যাবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমা বিনতে ‘উমাইসকে যখন তার সন্তান মুহাম্মাদ ইবনে আবি বকরের জন্ম হলো তখন বললেন: “গোসল কর, কাপড় দিয়ে ভালো করে বেঁধে নাও এবং এহরাম কর।”[৩২]

গায়ে সুগন্ধি ব্যবহার করা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী-গণ এহরাম করার আগে গায়ে সুগন্ধি মেখে নিতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দেখতেন, কিন্তু কিছু বলতেন না। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: “আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মক্কায় যেতাম তখন এহরামের আগে আমাদের কপালে সুগন্ধি মেখে নিতাম। যদি কেউ ঘেমে যেত, তবে তা মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখতেন, কিন্তু নিষেধ করতেন না।”[৩৩]

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া: আর তা বিভিন্নভাবে হওয়া যায়। যেমন: নখ কাটা, বগলের চুল উঠিয়ে ফেলা, নাভির নীচের চুল কাটা ইত্যাদি।

মেহেদি লাগানো: এহরামের আগে মেহেদি লাগানো যেতে পারে।

আর এ কাজগুলো মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। ‘সমস্ত উলামা একমত হয়েছেন যে, গোসল করা বাদে এহরাম করা জায়েয এবং এহরামের আগে গোসল করা ওয়াজিব নয়।'[৩৪]


  • এহরাম অবস্থায় মহিলাদের পোশাক:

এরপর মহিলা তার স্বাভাবিক সংযত পোশাক পরে নেবে। শরিয়ত সমর্থিত যে কোন পোশাকই পরে সে এহরাম করতে পারে। আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, মহিলা তার কামিজ, ওড়না এবং সেলোয়ার, পা মোজা সহ এহরাম করতে পারে।[৩৫]

তবে সে তার চেহারা ঢাকার জন্য নেকাব বা ওড়না অথবা অন্য কোন কাপড় পরতে পারবে না। অনুরূপভাবে সে হাত মোজা পরতে পারবে না। কিন্তু যখন মাহরাম ছাড়া অন্য কেউ তার দিকে তাকানোর সম্ভাবনা থাকবে তখন সে মাথার উপর থেকে টেনে তার চেহারাকে ঢেকে রাখবে। যেমনটি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ও রাসূলের স্ত্রী-গণ এবং সালফে সালেহীনের স্ত্রী-গণ করেছিলেন।

পুরুষের মত মহিলাও শরিয়ত নির্ধারিত স্থান থেকে এহরাম বাঁধবে। হজ ও উমরার জন্য সে এ সমস্ত মীকাত অতিক্রম কালেই এহরাম বাঁধতে হবে। এ স্থানগুলো হচ্ছে: মদীনাবাসীদের জন্য জিল-হুলাইফাহ, (আবইয়ারে আলী), সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফা (রাবেগ) ইয়ামনবাসীদের জন্য ইয়ালমলম, নাজদবাসীদের জন্য ক্বারনুল মানাযেল আর ইরাকিদের জন্য যাতে ইরক নামক স্থানসমূহ।[৩৬] আমরা পূর্বাঞ্চলের অধিবাসীরা যদি সরাসরি মক্কায় যাওয়ার নিয়ত করি তবে ইয়ামনের মীকাত অনুসরণ করে আমাদেরকে ‘ইয়ালমলম’ থেকে এহরাম বাঁধতে হবে। কিন্তু এ স্থানটি যেহেতু জেদ্দার একটু আগে এবং এখানে বিমান অপেক্ষা করার মত অবস্থা থাকে না তাই আমাদেরকে আমাদের বিমানবন্দরেই এহরাম বেঁধে উঠতে হবে। আর যদি আমরা সরাসরি মক্কায় না গিয়ে মদিনা শরীফে আগে যাই তবে আমাদেরকে মদিনায় গিয়ে সেখানকার অধিবাসীদের ন্যায় ‘জিলহুলাইফা’ তথা আবইয়ারে আলী থেকে এহরাম বাঁধতে হবে।

আর যদি কোন মহিলা এ সমস্ত মীকাত এর ভিতরে অবস্থান করে তবে সে তার ঘর থেকেই হজের এহরাম বাঁধবে। যেমন, মক্কা ও জেদ্দার অধিবাসীরা তারা তাদের ঘর থেকেই হজের এহরাম বাঁধবে। কিন্তু মক্কাবাসীরা যদি উমরার এহরাম করে তবে তাদেরকে কমপক্ষে সবচেয়ে কাছের হালাল এলাকায় যেতে হবে যাকে আমরা ‘মসজিদে আয়েশা’ বা তান’য়ীম বলে থাকি।

মনে রাখা আবশ্যক যে, মীকাত থেকে এহরাম বাঁধা সুন্নাত। যদি কেউ তার পূর্বেই এহরাম বাঁধে তবে তার এহরাম শুদ্ধ হবে যদিও তার একটি সুন্নাত বাদ পড়ে গেল।

কেউ এহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করলে তাকে মীকাতে ফিরে যেতে হবে এবং পুনরায় এহরাম বাঁধতে হবে। আর যদি মীকাত অতিক্রম করার পর এহরাম বাঁধে তাহলে তাকে একটি ছাগল পশু সাদকা করতে হবে। যা সে নিজে খেতে পারবে না। হারাম এলাকার ফকিরদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে।

এহরাম বাধার জন্য বিশেষ কোন নামাজ নেই। তবে কোন ফরজ বা নফল নামাজের পরে এহরামটি হওয়া মুস্তাহাব। যেমন তাহিয়্যাতুল অজু, বা তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা চাশ্‌তের নামাজ বা বিতরের সালাত এর পরে এহরাম বাঁধা। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

أتاني الليلة آت من ربي، فقال: صل في هذا الوادي المبارك، وقل عمرة في حجة.

“এ রাত্রিতে আমার নিকটি এক আগন্তুক (ফিরিশতা) এসে আমাকে বলেছে, এ উপত্যকায় নামাজ পড়ুন এবং বলুন: হজের সাথে উমরার নিয়ত করছি”।[৩৭]

নামাজের পরে এহরাম বাধার জন্য মনে মনে নিয়ত বা দৃঢ় সংকল্প করে নিতে হবে। তারপর কোন ধরনের হজ আদায় করছে তা মুখে বলা সুন্নাত। যেমনটি উপরোক্ত হাদিসে এসেছে।

যদি তামাত্তু হজ করার ইচ্ছা করে তবে সে যেন বলে, َلبَّيْكَ عُمْرَةً “লাব্বাইকা ওমরাতান” বা “আমি উমরা আদায়ের জন্য হাজির হচ্ছি”। তারপর তালবিয়া পাঠ করতে হবে। তালবিয়া হলো:

لَبَّيْكَ اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ.

“লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারীকা লাকা”।[৩৮]

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আপনি যে জন্য আমাকে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আমি সে জন্য হাজির, সদা হাজির। আমি সদা উপস্থিত, আমি ঘোষণা করছি যে, আপনার কোন শরিক নেই। আমি এও ঘোষণা করছি যে, যাবতীয় হামদ তথা সগুণে প্রশংসার অধিকারী হিসেবে প্রাপ্য প্রশংসা শুধু আপনারই, অনুরূপভাবে যাবতীয় নিয়ামাতও আপনার। যেমনিভাবে সব ধরনের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি আপনারই। আপনার কোন শরিক নেই। আপনি ব্যতীত আর কেউ এগুলো পেতে পারে না।

এ তালবিয়া পাঠ করা অত্যন্ত জরুরি। বেশি বেশি করে তালবিয়া পাঠ করুন। তবে উচ্চ স্বরে নয়। মহিলারা তালবিয়া পাঠের সময় তাদের স্বর উচ্চ করবে না।

এহরাম করার পর-পরই তার উপর কিছু বিষয় পরিত্যাজ্য হয়ে পড়ে। যা আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি।

তারপর যখন ইহরামকারী হাজী সাহেবা মসজিদে হারামে পৌঁছাবেন তখন আপনার ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করুন এবং নিম্নোক্ত দো’আ পাঠ করুন:

بِسْمِ اللهِ، والصَّلاّةُ وَالسَّلامُ عَلَى رَسُولِ اللهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْلِيْ ذُنُوْبِي، وافْتَحْ لِيْ أبْوَابَ رَحْمَتِكَ، أعُوْذُ بِاللهِ العَظِيْمِ وبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ، وَبِسُلْطَانِهِ القَدِيْمِ، مِنَ الشَّيْطَانِ الرَجيْمِ

উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহ, ওয়স্‌-সালাতু ওয়াস্‌-সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ্‌, আল্লাহুম্মাগফির লী যুনূবী, ওয়াফ্‌তাহ্‌ লী আব্‌ওয়াবা রাহমাতিকা, আ’ঊযু বিল্লাহিল ‘আযীম ওয়া বি ওয়াজহিহিল কারীম, ওয়াবি সুলত্বানিহিল ক্বাদীম, মিনাশ্‌ শাইত্বানির রাজীম।”

তারপর যখন কা’বার কাছে পৌঁছবেন তখন তাওয়াফ শুরু করার আগে তালবিয়া পাঠ করা বন্ধ করে দিতে হবে।

তারপর হাজারে আস্‌ওয়াদের কাছে এসে সম্ভব হলে তা স্পর্শ করুন, আর যদি সম্ভব না হয় তবে হাজারে আস্‌ওয়াদের সোজা হয়ে সেদিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলবেন:

ِبسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ

উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার।” তারপর কা’বাকে বাম পাশে রেখে সাত বার তাওয়াফ করুন।

আর যদি তাওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামানীর কাছে যাওয়া সম্ভব হয়, তবে তা স্পর্শ করুন, নইলে হাত দ্বারা ইশারা করা ব্যতীত এগিয়ে যান। তারপর রুকনে ইয়া মানী এবং হাজারে আস্‌ওয়াদের মাঝখান দিয়ে পার হওয়ার সময় এই আয়াতটি পাঠ করুন:

﴿رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ﴾

উচ্চারণ: “রাব্বানা আতিনা ফিদ্‌ দুনিয়া হাসানাতান, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া ক্বিনা ‘আযাবান নার।”

অর্থাৎ, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখরাতে কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।”[৩৯]

এ দো’আ ব্যতীত তাওয়াফের সময় সুনির্দিষ্ট কোন দো’আ নেই। অনেকে প্রতি তাওয়াফের জন্য বিভিন্ন দো’আ তৈরি করে নিয়েছে, সেগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই। এগুলো পড়া বাদ দিয়ে আপনি আপনার ভাষায় যত বেশি পারেন দো’আ করুন। আর যদি কোরআন পাঠ করেন অথবা অন্য কোন দো’আ পাঠ করেন তবে কোন ক্ষতি নেই।

যখন তাওয়াফ সমাপ্ত হবে, তখন মাকামে ইব্‌রাহীমকে সামনে নিয়ে কিবলার দিক হয়ে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করুন। প্রথম রাকা’আতে সূরা ফাতেহার পরে সূরা কাফেরূন বা কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ফাতেহার পর সূরা এখলাস বা কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ দ্বারা পড়া সুন্নাত। তবে অন্য সূরা দ্বারাও পড়া যাবে। আর যদি মাকামে ইব্‌রাহীমের কাছে নামাজ পড়তে না পারেন, তবে হারাম শরীফের যে কোন স্থানে এই নামাজ পড়া যেতে পারে।


  • তাওয়াফের ব্যাপারে মহিলাদের বিশেষ কিছু নির্দেশনা:

  তাওয়াফের জন্য পবিত্রতা শর্ত। কোন মহিলা হায়েয বা নিফাস অবস্থা অথবা বিনা অজুতে তাওয়াফ করতে পারবে না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর হজের সময় হায়েয এসে গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন:

افعلي كما يفعل الحاج، غير أن لا تطوفي حتى تطهري.

“হাজীরা যা করে তুমিও তা করো, তবে পবিত্র না হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করো না”।[৪০]

 মহিলা হাজী সাহেবা ‘রামল’ করবে না। রামল হলো উমরার তাওয়াফ এবং হজের তাওয়াফে কুদুমের প্রথম তিন চক্করের সময় ঘন ঘন পা ফেলে শক্তি প্রদর্শন করে তাওয়াফ করা। এটি পুরুষদের জন্য সুন্নাত। মহিলাদের জন্য নয়।

 অনুরূপভাবে মহিলা হাজী সাহেবগণ ‘ইয্‌তেবা’ও করবে না। ‘ইয্‌তেবা’ হলো, উমরার তাওয়াফ এবং হজের তাওয়াফে কুদুমের প্রথম তিন চক্করের সময় গায়ের চাদরকে ডান বগলের নীচে দিয়ে নিয়ে কাঁধের উপর এমনভাবে রাখা যেন ডান কাঁধ খোলা থাকে। এটিও শুধু পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য, নারীদের জন্য নয়।

 মহিলাদের উচিত ভিড়ের সময় কা’বার পার্শ্বদেশ থেকে একটু দূর দিয়ে তাওয়াফ করা যাতে পুরুষদের সাথে ধাক্কাধাক্কি বা মিলেমিশে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে।

 হাজারে আস্‌ওয়াদের নিকট পুরুষদের সাথে মেলা-মেশা থেকে মহিলাদের বিরত থাকতে হবে এবং হাজারে আস্‌ওয়াদে চুমো খাওয়ার জন্য পুরুষদের সামনে মুখ খোলা জায়েয হবে না। কেননা, এটি গুরুতর অন্যায় এবং বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

 তাওয়াফ, সা’য়ী এবং অন্যান্য সময় পর পুরুষের সামনে মুখ খোলা রাখা, পর্দাহীন অবস্থায় থাকা এবং সাজ-সজ্জা প্রকাশ করা নিঃসন্দেহে গুনাহের কাজ। বিশেষ করে হাজারে আস্‌ওয়াদে চুমো দেওয়ার সময়।

লক্ষণীয় যে, হারামের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টি করা সবচেয়ে বড় গর্হিত কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন :

﴿وَمَنْ يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ﴾

“আর যে সেখানে সীমালংঘন করে পাপ কাজের ইচ্ছে করে, তাকে আমি আস্বাদন করাব যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”[৪১]

অনেক মহিলা এভাবে বেপর্দা হয় চলার জন্য হারামের মত স্থানে নিজেও গুনাহ্‌গার হয়, অন্যদেরকেও গুনাহ্‌গার করে।

 যে সময়গুলোতে পুরুষরা কা’বার পাশে কম থাকে, সে সময়গুলোতে তাওয়াফ করতে মহিলাদের চেষ্টা চালাতে হবে। আতা ইবনে আবি রাবাহ্‌ বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী-গণ তাওয়াফের সময় পুরুষদের সাথে মিশতেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যখন তাওয়াফ করতেন, তখন তিনি পুরুষদের থেকে দূরে থাকতেন। এক মহিলা তাকে বলল, চলুন, আমরা হাজারে আস্‌ওয়াদের নিকট যাই। তখন তিনি বললেন: ‘আমার কাছ থেকে চলে যাও।’ তিনি যেতে রাজি হননি।[৪২] উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মহিলাদের পুরুষদের সাথে মিশতে মানা করেছিলেন। একদা দেখলেন, এক পুরুষ মহিলাদের সাথে তাওয়াফ করছে। তখন তিনি তাকে ছড়ি দিয়ে মারলেন।[৪৩]

তারপর সা’য়ী করার স্থানে যাবে এবং যখন সাফা পাহাড়ের কাছে পৌঁছাবে তখন বলবে:

﴿إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْراً فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ﴾

উচ্চারণ: “ইন্নাস্‌ সাফা ওয়াল র্মা‌ওয়াতা মিন শা’আ’ইরিল্লাহি ফামান হাজ্জাল বাইতা আও ই’তামারা ফালা জুনাহা ‘আলাইহি আন ইয়াত্‌তাওয়াফা বিহিমা ওয়ামান তাত্বাওওয়া’আ খাইরান ফা ইন্নাল্লাহা শাকিরুন ‘আলীম।”[৪৪]

এ প্রথমবারই শুধু এ দো’আ পড়তে হবে। তারপর হাজী সাহেবা কা’বার দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন এবং দু’হাত উপরে উঠিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করবেন এবং যা ইচ্ছা দো’আ করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সময়ে তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন তারপর যে দো’আ করতেন তা হলো,

لآ إلَهَ إلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٍ، لآ إلَهَ إلَّا اللهُ وَحْدَهُ، أنْجَزَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ.

উচ্চারণ: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুল্‌কু ওয়ালাহুল হাম্‌দু ওয়াহুওয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু, আনজাযা ওয়া’দাহু ওয়া নাসারা ‘আব্‌দাহু ওয়াহাযামাল আহ্‌যাবা ওয়াহ্‌দাহু।”

তারপর মারওয়ার দিকে যাবে। মারওয়ায় পৌঁছার সাথে সাথে তার এক চক্কর পূর্ণ হয়ে যাবে। তারপর এভাবে সাফা এবং মারওয়ার মাঝে সাত চক্কর লাগাবে। সা’য়ীর সময়ে মনে যা ইচ্ছে হয় দো’আ করবে। ইচ্ছা করলে সুন্নাত মোতাবেক জিকির, কোরআন পাঠও করতে পারে।

মনে রাখা দরকার যে,

 সা’য়ীর জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। তবে পবিত্র থাকা মুস্তাহাব।

 মহিলা হাজী সাহেবাগণ দুই সবুজ চি‎েহ্নর মাঝখানে দৌড়াবেন না। কারণ মহিলাগণ দৌড়ালে তা তাদের জন্য বেপর্দা হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

  অনুরূপভাবে মহিলা হাজী সাহেবগণ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের উপরেও উঠবেন না। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন: “মহিলাগণ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে চড়বে না এবং উচ্চ স্বরে তালবিয়াও পাঠ করবে না”[৪৫]

 সা’য়ী শেষ করার পর মহিলাগণ তাদের চুলের সমস্ত বেণি হতে এক অঙ্গুলির মাথা পর্যন্ত (এক সেন্টিমিটার পরিমাণ) ছোট করবেন।

আর এভাবেই মহিলা হাজী সাহেব তার উমরার কাজ সমাধা করার মাধ্যমে হালাল অবস্থায় উপনীত হবেন এবং পূর্বে যা যা তার উপর হারাম ছিল তা আবার হালাল হয়ে যাবে।

তবে মনে রাখতে হবে যে, মহিলাগণ যেন তাদের চুল কাটার জন্য কোন বেগানা পুরুষের সামনে তা না করে। বরং এমনভাবে করবে যাতে কেউ তার চুল না দেখে।


তামাত্তু হজকারী হাজী সাহেবার জন্য হজের কার্যাবলী:

যিলহজ মাসের আট তারিখ চা-শতের সময় মহিলা হাজী সাহেবা যে যেখানে আছে সেখান থেকেই হজের এহরাম বাঁধবেন। ইতিপূর্বে উমরাহ এর এহরাম বাধার পূর্বে যা যা করেছেন এখনও তাই করবেন অর্থাৎ, গোসল, সুগন্ধি এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা লাভ করার পর হজের জন্য দৃঢ় সংকল্প করে বলবেন: لبيك حجاً অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি হজের জন্য হাজির। হাজির।

তারপর নিম্নোক্ত তালবিয়া পাঠ করবেন:

لَبَّيْكَ اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ.

“লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারীকা লাকা”।[৪৬]

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আপনি যে জন্য আমাকে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আমি সে জন্য হাজির সদা হাজির। আমি সদা উপস্থিত, আমি ঘোষণা করছি যে, আপনার কোন শরিক নেই। আমি এও ঘোষণা করছি যে, যাবতীয় হামদ তথা সগুণে প্রশংসার অধিকারী হিসেবে প্রাপ্য প্রশংসা শুধু আপনারই, অনুরূপভাবে যাবতীয় নিয়ামতও আপনার। যেমনিভাবে সব ধরনের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি আপনারই। আপনার কোন শরিক নেই। আপনি ব্যতীত আর কেউ এগুলো পেতে পারে না।

তারপর যদি তিনি মিনার বাইরে অবস্থানকারী হন তবে মিনায় চলে যাবেন সেখানে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং ফজর এর নামাজ আদায় করবেন। জোহর ও আসর এবং এশার নামাজকে কসর হিসেবে দু’রাকাত পড়বেন।

তারপর নয় (৯) তারিখ (আরাফাতের দিন) সূর্য উদয়ের পর মিনা থেকে ‘আরাফাতে রওনা দেবেন। নামীরা- নামক স্থানে যদি সম্ভব হয় তবে সূর্য হেলে যাওয়া পর্যন্ত ওখানে অবস্থান করা সুন্নাত। সম্ভব না হলে আরাফাতেই চলে যান। আরাফাতে সূর্য ডোবা পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে এবং জোহর ও আসরের নামাজ একসাথে কসর অর্থাৎ দু’রাকা’আত করে জোহরের সময়ে আদায় করুন। (জোহরের আজান দিলে জোহরের দুরাকা’আত নামাজ আদায় করার পর আবার আসরের একামত দিয়ে আসরের নামাজ জোহরের সাথে দুরাকা’আত আদায় করুন। এ দুই নামাজের মাঝখানে কোন সুন্নাত নামাজ নেই)

মনে রাখা আবশ্যক যে, দু’নামাজ একসাথে আদায় করা এবং কসর তথা চার রাকা’আতের ফরজ নামাজ দুরাকা’আত পড়া নারী-পুরুষ সকল হাজী সাহেবদের জন্য প্রযোজ্য। এমনকি যদি কোন হাজী মক্কা বাসীও হন।

আরাফাতে অবস্থান করতে হলে পবিত্রতার প্রয়োজন হয় না। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হায়েয হিসেবে আরাফাতে অবস্থান করেছিলেন।

আরাফাতে পৌঁছানোর পর বেশি বেশি করে দো’আ, জিকির-আজকার এবং কোরআন তিলাওয়াত করুন। আর আরাফাতের দিনের দো’আই সর্বোত্তম দো’আ। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “সর্বোত্তম দো’আ হল আরাফাতের দিনের দো’আ, আর আমি এবং আমার পূর্বের নবিগণ যা বলেছি এর মধ্যে সর্বোত্তম হল:

لآ إلَهَ إلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٍ،

উচ্চারণ: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুল্‌কু ওয়ালাহুল হাম্‌দু ওয়াহুওয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর।”

অর্থাৎ, “একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্‌ বা মা’বুদ নেই, তাঁর কোন শরিক নেই, যাবতীয় ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও রাজত্ব তাঁরই, তিনি সমস্ত প্রশংসার অধিকারী এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।”[৪৭]


দো’আ করার সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখা দরকার:

 কিবলামুখী হওয়া।

  হাত তুলে দো’আ করা।

 দো’আ করার সময় মন থেকে করা।

 বুঝে দো’আ করা।

 বার বার দো’আ করা, তবে এমন কিছু না চাওয়া যা চাওয়া জায়েয নেই।

সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত ‘আরাফাতে অবস্থান করা ওয়াজিব। এ জন্য অবস্থান করতে হবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেছেন আর অন্ধকার যুগের লোকেরা সূর্য ডোবার আগেই চলে যেত। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ডোবার পরে যেতেন। তাই আমাদের সূর্য ডোবার পরে যেতে হবে।

বিশেষ জ্ঞাতব্য যে, কেউ যদি সূর্য ডোবার আগে আরাফা ত্যাগ করে, তবে তার উপর ওয়াজিব ছেড়ে দেয়ার কাফ্‌ফারা হিসেবে দম তথা একটি ছাগল মক্কার হারাম এলাকায় জবাই করে সদকা করে দিতে হবে।

যখন সূর্য ডুবে যাবে, তখন তালবিয়া পড়তে পড়তে এবং আল্লাহর জিকির করতে করতে মুযদালিফার দিকে রওনা হবেন। যখন মুযদালিফায় পেঁৗঁছবেন তখন মাগ্‌রিব এবং এশাকে জমা’ একত্রিত করে এশা-র সময় আদায় করবেন। আজান দিয়ে প্রথমে মাগরিবের নামাজ তিন রাকা’আত এবং পরে এশার নামাজ দু’রাকা’আত আদায় করুন। এ দুই নামাজের মাঝখানে কোন সুন্নাত নামাজ নেই।

পুরুষদের মত মহিলাদের জন্যও মুযদালিফায় অবস্থান করা জরুরি। তবে মহিলাদের জন্য মধ্যরাত্রির পরে মিনার দিকে জামরা ‘আকাবা তথা বড় জামরাতে পাথর নিক্ষেপের জন্য যাওয়া শয়িয়ত অনুমোদন করেছে। যাতে করে তারা পুরুষদের ভিড়ের আগেই পাথর নিক্ষেপ করতে পারে। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: “উম্মুল মু’মিনীন সাওদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সুবহে সাদেকের পূর্বে মুযদালিফা ছেড়ে যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি প্রদান করেন। কারণ, তিনি মোটা শরীরের জন্য ধীর-চলার মহিলা ছিলেন।[৪৮]

মহিলাদের সাথে তাদের মাহরাম এবং দুর্বল ব্যক্তিরাও যেমন ছোট বাচ্চা, অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক পুরুষরা সুবহে সাদিকের আগেই মুযদালিফা থেকে বের হতে পারবে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফা থেকে দুর্বল ব্যক্তিদের সাথে সুবহে সাদিকের আগে মিনার দিকে পাঠিয়েছিলেন।”[৪৯]

মহিলাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির উচিত তাদের নিরাপত্তা ও সার্বিক তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করা। আর সেজন্য মহিলার কারণে তাদের অভিভাবকরাও প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেরি করার অবকাশ রাখেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল, এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার পাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। …একজন পুরুষ তার পরিবারের উপর রাখাল স্বরূপ, সুতরাং তাকে তার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।”[৫০]

মুয়াত্তায় এসেছে, “আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে উমরের স্ত্রী সাফিয়্যা বিনত্‌ আবী উবাইদ তার এক নিকটাত্মীয়াসহ মুযদালিফায় কোন কারণে এতই দেরি করেছিল যে, সূর্য ডুবে গিয়েছিল। তারপর মিনায় আসার পরে আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে উমর তাদের উভয়কে পাথর নিক্ষেপের নির্দেশ দিলেন, এবং তাদের উপর অতিরিক্ত কোন কিছু ওয়াজিব মনে করেননি।”[৫১] এ থেকে বুঝা গেল যে, ভিড় অথবা সমস্যার কারণে মহিলা ও তাদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে যারা আছে তারাও পাথর নিক্ষেপের জন্য রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবেন। যাতে করে ইবাদতটি অত্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলার সাথে আদায় করা যায় এবং ভিড় ও বেপর্দা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শায়খ ইবনে উসাইমীন রাহেমাহুল্লাহ বলেন: ‘যদি কারও জন্য দিনের বেলায় পাথর নিক্ষেপ সম্ভব না হয়, তবে সে যেন রাতে পাথর নিক্ষেপ করে। আর যদি দিনের বেলায় পাথর নিক্ষেপ করা কষ্ট ও সমস্যাসহ সম্ভব হয়, কিন্তু রাতের বেলায় নিক্ষেপ করলে অধিক সহজ, সুশৃঙ্খল ও সঠিক পদ্ধতিতে আদায় করা সম্ভব হয়, তবে সে যেন রাতেই নিক্ষেপ করে। কেননা, সময়ের ফজিলতের চেয়ে সঠিক পদ্ধতিতে এবাদত করার ফজিলত বেশি হওয়ায় তার প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি।'[৫২]

বিশেষ জ্ঞাতব্য:

 অনেকে মনে করে থাকে মিনায় পাথর নিক্ষেপ করার জন্য যেসব পাথর দরকার তা মুযদালিফা থেকে সংরক্ষণ করতে হবে নামাজের আগে এবং তা বিধিবদ্ধ নিয়ম। এটি ভুল ধারণা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় পাথর কুড়োনোর জন্য বলেননি। তিনি পাথর কুড়িয়েছিলেন মুযদালিফা থেকে মিনায় যাওয়ার পথে। আর যেদিক থেকেই পাথর নেয়া হোক না কেন তা জায়েয হবে। মুযদালিফা থেকেই পাথর নিতে হবে এরকম কোন কথা নেই। মিনা থেকেও পাথর নেয়া যাবে।

 সুন্নাত হল প্রথম দিন সাতটি পাথর নিয়ে জাম-রাতুল ‘আকাবা তথা বড় জামরায় নিক্ষেপ করবেন এবং বাকি তিন দিনের প্রত্যেক দিন মিনা থেকে একুশ (২১)টি করে পাথর নিয়ে তিন ‘জামরা’য় নিক্ষেপ করবেন।

 আবার অনেকে মনে করে থাকেন যে, পাথর ধুয়ে তারপর নিক্ষেপ করতে হবে। এটিও ভুল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবায়ে কেরাম কেউই এ কাজ করেননি।

 যে পাথর একবার নিক্ষেপ করা হয়েছে তা আবার নিক্ষেপ করা যাবে না।

যখন মহিলা হাজী সাহেবা যিলহজের দশ (১০) তারিখ ঈদের দিন মিনায় পৌঁছাবেন, তখন প্রথমেই বড় ‘জামরা’র নিকট যাবেন। তারপর এতে সাতটি পাথর পরপর নিক্ষেপ করবেন। প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলবেন এবং প্রথম পাথর নিক্ষেপের সময়ে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করবেন। এরপরে আর তালবিয়া নেই। এর পরিবর্তে বেশি বেশি করে ঈদের তাকবীর পাঠ করবেন। ঈদের তাকবীর হল:

اَللهُ أَكْبَرْ اَللهُ أَكْبَرْ، لآ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرْ، اَللهُ أَكْبَرْ وَلِلهِ الْحَمْدُ.

উচ্চারণ: “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্‌দ।”

তাছাড়া অন্যান্য দো’আ ও জিকির করতে পারেন।

জাম-রাতুল আকাবা বা বড় জামরাতে পাথর নিক্ষেপের পর মহিলা হাজী সাহেবা তার মাহরাম বা অন্য কোন ব্যক্তির মাধ্যমে হাদী উট হলে নাহ্‌র, আর গরু-ছাগল হলে জবাই করাবেন। মহিলা হাজী সাহেবা ইচ্ছা করলে তার হাদী জবাই করার কাজটি তিনদিন অর্থাৎ, ঈদের দিন এবং এর পরে তিনদিন পর্যন্ত দেরি করতে পারেন। আইয়ামে তাশরীকের তৃতীয় দিনের সূর্য ডোবার আগে যে কোন সময় জবাই করলেই তা আদায় হয়ে যাবে।

তারপর হাজী সাহেবা তার সমস্ত চুলের বেণি হতে এক আঙ্গুলের মাথা (প্রায় এক সেণ্টিমিটার) পরিমাণ কেটে নেবেন। এটা খেয়াল রাখা দরকার যে, যাতে কোন বেগানা পুরুষের সামনে বা বেগানা পুরুষ দ্বারা তার মাথার চুল না কাটা হয়।

আর এ কাজটি সম্পন্ন করার মাধ্যমেই এহরামের কারণে যা তার জন্য হারাম ছিল সেসব কিছু তার জন্য পুনরায় হালাল হয়ে যাবে। কিন্তু স্বামী সহবাস করা যাবে না। এটাকে শরিয়তে “আত-তাহাল্লুল আল-আউয়াল” বা “প্রাথমিক হালাল” বলা হয়।

এরপর হাজী সাহেবা মক্কায় যাবেন এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবেন। এটি হজের তাওয়াফ, যাকে আমরা তাওয়াফে যিয়ারত বা তাওয়াফে ইফাদাও বলে থাকি। এ তাওয়াফ কাজ শেষ করে সম্ভব হলে মাকামে ইব্‌রাহীমের পিছনে দাঁড়িয়ে মাকামে ইব্‌রাহীম ও কা’বাকে সামনে রেখে দু’রাকাত নামাজ আদায় করবেন। আর যদি তা সম্ভব না হয় তবে মসজিদে হারামের যে কোন স্থানে এ দু’রাকাত নামাজ আদায় করতে পারেন।

এরপর পূর্ব বর্ণিত নিয়মে উমরার জন্য যেভাবে সা’য়ী করেছেন সেভাবেই হজের সা’য়ী আদায় করবেন।

জ্ঞাতব্য:

 যদি কোন হাজী সাহেবা তাওয়াফে ইফাযা বা হজের তাওয়াফের পূর্বে হায়েয এসে যায় তবে তিনি তাওয়াফের জন্য পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। কারণ, হায়েয অবস্থায় আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ করা জায়েয নেই।

 কিন্তু যদি অবস্থা এমন হয় যে, হাজী সাহেবার পক্ষে মক্কায় অবস্থান করা দুষ্কর হয়ে পড়ে তবে তিনি ইচ্ছা করলে এ অবস্থায় মক্কা ছেড়েও যেতে পারেন। তবে হালাল হওয়া মাত্রই মক্কায় এসে তার হজের বাকি কাজ তাওয়াফে ইফাযা বা তাওয়াফে যিয়ারত তথা হজের তাওয়াফ সম্পন্ন করবেন। তবে এ সময়টুকুতে তিনি স্বামী সহবাস থেকে দূরে থাকবেন।

 আর যদি অবস্থা এমন হয় যে, হাজী সাহেবার পক্ষে আর মক্কায় ফিরে আসা সম্ভব না হয় যেমন বিদেশি হোন এবং ভিসা, অর্থ ও সঙ্গী পাওয়া সংক্রান্ত জটিলতা থাকে তখন তার জন্য হায়েয অবস্থা থাকলেও হজের তাওয়াফ করা জায়েয হবে। তিনি তার সুনির্দিষ্ট স্থানে কাপড়ের পট্টি বেধে নেবেন এবং তাওয়াফ করবেন। যাতে মসজিদ অপবিত্র না হয়ে পড়ে।

 কোন কোন হাজীদেরকে দেখা যায় যে, তারা হজের সা’য়ীকে ৮ তারিখ একটি নফল তাওয়াফ করে তারপর অগ্রিম আদায় করে থাকেন। এ ধরনের কোন নিয়ম শরিয়ত সমর্থিত নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সেটা করেননি। সাহাবায়ে কেরামও সেটা করেননি। ইমামদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য কোন ইমামও সেটা করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি। তাই অগ্রিম সা’য়ী করার প্রবণতা বন্ধ করা উচিত।

তাওয়াফ শেষ করার পর হাজী সাহেবা আবার মিনায় ফিরে যাবেন। কেননা, তাকে মিনায় আইয়ামে তাশরীকের প্রথম ও দ্বিতীয় রাত মিনায় কাটাতে হবে। এরপর যদি কেউ তা’জীল বা তাড়াতাড়ি করে চলে যেতে চায় তিনি যেন দ্বিতীয় দিন সূর্যাস্তের পূর্বেই মিনা ত্যাগ করে চলে যান। আর যদি আইয়ামে তাশরীকের তৃতীয় দিন পাথর নিক্ষেপ করার মাধ্যমে দেরি করে কেউ যেতে চায় তবে তিনি আইয়ামে তাশরীকের তৃতীয় রাত্রিও সেখানে কাটাবেন এবং পরদিন জোহরের পরে পাথর নিক্ষেপের পরে সেখান থেকে বিদায় নেবেন। আর এটা অধিক উত্তম, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয় দিন জোহরের পরে পাথর নিক্ষেপ করে তারপর মক্কায় ফিরে গিয়েছিলেন।

মহিলা হাজী সাহেবা আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলোতে অর্থাৎ, এগারো, বার এবং যারা তেরো তারিখ পর্যন্ত দেরি করতে চায় তারা সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার পর প্রত্যেক জামরায় সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন এবং প্রত্যেক পাথর নিক্ষেপের সাথে সাথে ‘আল্লাহু আকবার’ বলবেন। মধ্য ‘জামরা’ এবং ছোট ‘জামরা’র পর নিজের মত করে দো’আ করবেন, কিন্তু জাম-রাতুল আকাবা বা বড় ‘জমরা’র পর দো’আ করবেন না। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধুমাত্র মধ্য এবং ছোট জামরার পর দো’আ করেছিলেন। বড় জামরার পর দো’আ করেননি। আর জামরায় পাথর নিক্ষেপ করতে হবে পর্যায়ক্রমে প্রথমে ছোট, তারপর মধ্য এবং সবচেয়ে শেষে বড় জামরায় পাথর নিক্ষেপ করতে হবে।

বিশেষ জ্ঞাতব্য:

 মহিলাদের উচিত এমন সময় পাথর নিক্ষেপ করা, যখন ভিড় কম থাকে। যেমন, রাতের বেলায়।

 যদি কোন মহিলা হাজী সাহেবা দ্রুত চলে যেতে চান, তবে যিলহজের ১২ তারিখে পাথর নিক্ষেপের পর সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করতে পারেন।

 যিলহজের বার (১২) তারিখে সূর্য ডোবার আগে যদি কেউ মিনা ত্যাগ করতে না পারেন, তবে সেখানে আরও একদিন অবস্থান করতে হবে এবং ১৩ তারিখে সূর্য হেলে যাওয়ার পর তিন জাম্‌রায় পাথর নিক্ষেপ করে তারপর মিনা ত্যাগ করতে হবে।

মিনার কাজ শেষ করে হাজী সাহেবা যখন মক্কায় ফিরে যাবেন তখন তিনি যদি মক্কা ছেড়ে চলে যেতে চান তবে বিদায় তাওয়াফ করবেন। আর যদি মক্কায় কিছুদিন অবস্থান করেন তবে মক্কা ছেড়ে যাওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে বিদায় তাওয়াফ করবেন। সে সময় যদি কোন মহিলা হাজী সাহেবার হায়েয বা নেফাস থাকে তবে তার বিদাই তাওয়াফ করা লাগবে না।

এ কাজগুলোর মাধ্যমে তামাত্তু হজ আদায়াকারী মহিলার তামাত্তু হজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।


দুই. তামাত্তু হজ আদায়কারী হাজী সাহেবাদের হজকর্মসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:

উমরার কাজ:

  • হজের মাওসুমে মীকাত থেকে এহরাম বাঁধা
  • এহরামের সময় বলবে: লাব্বাইকা ওমরাহ
  • মক্কা পৌঁছে হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করে সাতবার বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা তারপর সম্ভব হলে মাকামে ইব্‌রাহীম ও কা’বাকে সামনে নিয়ে নতুবা মসজিদে হারামের অন্যত্র দু’রাকা’আত নামাজ পড়া।
  • সাফা ও মারওয়া পাহাড় দ্বয়ের মাঝখানে সা’য়ী করা। তবে সাফা থেকে সা’য়ী শুরু করতে হবে।
  • চুল ছোট করা। এক আঙ্গুলের মাথা পরিমাণ বা এক সেন্টিমিটার পরিমাণ চুল কাটা।

এর মাধ্যমে উমরা থেকে হালাল হয়ে যাবে।

  • হজের কাজ:

যিলহজের ৮

(তারওয়ীয়াহ্‌র দিন)

  • নিজ নিজ স্থান থেকে হজের এহরাম বেঁধে নেয়া। এবং বলা যে, “লাব্বাইকা হাজ্জান”।
  • মিনাতে অবস্থান করে জোহর, আসর, মাগ্‌রিব, এশা ও ফজরের নামাজসমূহ সুনির্দিষ্ট ওয়াক্তে আদায় করা। চার রাকা’আতের ফরজ নামাজ দু’রাকা’আত পড়া।

যিলহজের ৯

(আরাফাহর দিন)

  • জোহরের পর থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত আরাফাহর ময়দানে অবস্থান করা।
  • ৯ তারিখের দিন-গত রাত তথা ১০ তারিখের রাতে কমপক্ষে মধ্যরাত পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করা।

যিলহজের ১০

(ঈদের দিন)

  • মিনায় যাওয়া।
  • জামারাতুল আকাবায় সাতটি ছোট পাথর নিক্ষেপ করা।
  • হাদী জবাই করানো।
  • এক আঙ্গুলের মাথা (১ সেঃমিঃ) পরিমাণ চুল ছোট করা।
  • তাওয়াফে ইফাযা বা হজের তাওয়াফ করা।
  • হজের সা’য়ী করা।
  • মিনাতে রাত্রি যাপন করার জন্য ফিরে যাওয়া।

যিলহজের ১১

(আইয়ামে তাশরীকের ১ম দিন):

  • সূর্য হেলে যাওয়ার পর প্রথমে ছোট জাম্‌রা, তারপর মধ্য এবং সর্বশেষে বড় জামরায় প্রতিটিতে পরপর সাতটি ছোট পাথর নিক্ষেপ করা।
  • হাদী জবাই করা (দশ তারিখে না করলে)।
  • এক আঙ্গুলের মাথা (১ সেঃমিঃ) পরিমাণ চুল ছোট করা (যদি ১০ তারিখে না করে থাকে)।
  • তাওয়াফে ইফাযা বা হজের তাওয়াফ ও সা’য়ী করা। (যদি ১০ তারিখে না করে থাকে)।
  • মিনাতে রাত্রি যাপন করা।

যিলহজের ১২ (আইয়ামে তাশরীকের ২য় দিন) 

  • সূর্য হেলে যাওয়ার পর প্রথমে ছোট জাম্‌রা, তারপর মধ্য এবং সর্বশেষে বড় জামরায় প্রতিটিতে পরপর সাতটি ছোট পাথর নিক্ষেপ করা।
  • হাদী জবাই করা (দশ বা এগারো তারিখে না করলে)।
  • এক আঙ্গুলের মাথা (১ সেঃমিঃ) পরিমাণ চুল ছোট করা (যদি ১০ বা ১১ তারিখে না করে থাকে)।
  • যারা তাড়াতাড়ি করে দু’দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে চায়, তারা এ দিনে অর্থাৎ, ১২ তারিখে সূর্যাস্তের পূর্বে পাথর মেরে মিনা পরিত্যাগ করা।
  • তাওয়াফে ইফাযা বা হজের তাওয়াফ ও সা’য়ী করা। (যদি ১০ বা ১১ তারিখে না করে থাকে)।
  • যারা এ দিন মক্কা ত্যাগ করতে চায় তাদের জন্য বিদায়ি তাওয়াফ করা।
  • যারা ১৩ তারিখে পাথর নিক্ষেপ করতে চায়, তাদের জন্য মিনাতে রাত্রি যাপন করা।

যিলহজের ১৩

(আইয়ামে তাশরীকের ৩য় দিন)

  • সূর্য হেলে যাওয়ার পর প্রথমে ছোট জাম্‌রা, তারপর মধ্য এবং সর্বশেষে বড় জামরায় প্রতিটিতে পরপর সাতটি ছোট পাথর নিক্ষেপ করা।
  • হাদী জবাই করা (দশ, এগার বা বার তারিখে না করলে)।
  • এক আঙ্গুলের মাথা (১ সেঃমিঃ) পরিমাণ চুল ছোট করা (যদি ১০, ১১ বা ১২ তারিখে না করে থাকে)।
  • তাওয়াফে ইফাযা বা হজের তাওয়াফ ও সা’য়ী করা। (যদি ১০, ১১ বা ১২ তারিখে না করে থাকে)।
  • যারা এ দিন মক্কা ত্যাগ করতে চায় তাদের জন্য বিদায়ি তাওয়াফ করা।

তবে মহিলাগণ যদি মক্কা ত্যাগ করার সময় হায়েয ও নেফাস অবস্থায় থাকে, তাদের বিদায়ি তাওয়াফ করা লাগবে না।

আর এভাবেই তামাত্তু’ হজকারী হাজী সাহেবার হজের কাজ শেষ হয়ে যাবে।


তিন. ‘ইফরাদ’ অথবা ‘কিরান’ হজ আদায়কারী হাজী সাহেবাদের কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত রূপ:

‘কিরান’ হজ আদায়কারী এবং ‘ইফরাদ’ হজ আদায়কারীর মধ্যে পার্থক্য:

কিরান হজ আদায়কারী হাজী সাহেবা উমরা এবং হজকে একসাথে আদায় করবেন। কিন্তু ইফরাদ হজ আদায়কারী শুধু হজ করবেন, হজের আগে কোন উমরা আদায় করবেন না।

১- কিরান হজ আদায়কারীর কর্মকাণ্ড:

কিরান হজকারী নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে হজ করবেন.

  • হজের মাওসুমে মীকাত থেকে এহরাম বাঁধা।
  • এহরামের সময় বলবে: “লাব্বাইকা উমরাতান ওয়া হাজ্জান” অর্থাৎ, আমি উমরা ও হজ আদায় করার জন্য হাজির হয়েছি, হাজির হয়েছি।
  • তাওয়াফে কুদূম বা আগমনি তাওয়াফ: মক্কা পৌঁছে হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করে সাতবার বাইতুল্লাহ্‌র তাওয়াফ করা।
  • সম্ভব হলে মাকামে ইবরাহীম ও কা’বাকে সামনে নিয়ে নতুবা মসজিদে হারামের অন্যত্র দু’রাকা’আত নামাজ পড়া।
  • সাফা ও মারওয়া পাহাড় দ্বয়ের মাঝখানে সা’য়ী করা। তবে সাফা থেকে সা’য়ী শুরু করতে হবে।
  • তাওয়াফ এবং সা’য়ী শেষ হওয়ার পরে এহরাম অবস্থাতেই থাকবেন। হালাল হতে পারবেন না।
  • তারপর ৮ ই জিলহজ্‌ হতে নিম্নোক্ত ছক অনুসরণ করুন:

যিলহজের ৮

(তালবীয়ার দিন)

  • যেহেতু তিনি পূর্ব থেকেই এহরাম অবস্থায় আছেন, তাই তিনি হজের তালবিয়া পড়তে পড়তে মিনায় যাবেন।
  • মিনাতে অবস্থান করে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজসমূহ সুনির্দিষ্ট ওয়াক্তে আদায় করা। চার রাকা’আতের ফরজ নামাজ দু’রাকা’আত পড়া।

যিলহজের ৯

(আরাফাহর দিন)

  • জোহরের পর থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত আরাফাহর ময়দানে অবস্থান করা।
  • ৯ তারিখের দিন-গত রাত তথা ১০ তারিখের রাতে কমপক্ষে মধ্যরাত পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করা।

যিলহজের ১০

(ঈদের দিন)

  • মিনায় যাওয়া।
  • জামা রাতুল আকাবায় সাতটি ছোট পাথর নিক্ষেপ করা।
  • হাদী জবাই করা।
  • এক আঙ্গুলের মাথা (১ সেঃমিঃ) পরিমাণ চুল ছোট করা।
  • তাওয়াফে ইফাযা বা হজের তাওয়াফ করা।
  • হজের সা’য়ী করা। তবে যদি তিনি তাওয়াফে কুদূমের পরে সা’য়ী করে থাকেন, তাহলে অনেক আলেমদের নিকটই তার আর সাঈী নেই।
  • মিনাতে রাত্রি যাপন করার জন্য ফিরে যাওয়া।

যিলহজের ১১

(আইয়ামে তাশরীকের ১ম দিন)

  • সূর্য হেলে যাওয়ার পর প্রথমে ছোট জাম্‌রা, তারপর মধ্য এবং সর্বশেষে বড় জামরায় প্রতিটিতে পরপর সাতটি ছোট পাথর নিক্ষেপ করা।
  • হাদী জবাই করা (দশ তারিখে না করলে)।
  • এক আঙ্গুলের মাথা (১ সেঃমি:) পরিমাণ চুল ছোট করা (যদি ১০ তারিখে না করে থাকে)।
  • তাওয়াফে ইফাযা বা হজের তাওয়াফ ও সা’য়ী করা। (যদি ১০ তারিখে না করে থাকে। তবে যদি তিনি তাওয়াফে কুদূমের পরে সা’য়ী করে থাকেন, তাহলে অনেক আলেমদের নিকটই তার আর সা’য়ী নেই)।
  • মিনাতে রাত্রি যাপন করা।

যিলহজের ১২ (আইয়ামে তাশরীকের ২য় দিন)

  • সূর্য হেলে যাওয়ার পর প্রথমে ছোট জাম্‌রা, তারপর মধ্য এবং সর্বশেষে বড় জামরায় প্রতিটিতে পরপর সাতটি ছোট পাথর নিক্ষেপ করা।
  • হাদী জবাই করা (দশ বা এগারো তারিখে না করলে)।
  • এক আঙ্গুলের মাথা (১ সেঃমিঃ) পরিমাণ চুল ছোট করা (যদি ১০ বা ১১ তারিখে না করে থাকে)।
  • যারা তাড়াতাড়ি করে দু’দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে চায়, তারা এ দিনে অর্থাৎ, ১২ তারিখে সূর্যাস্তের পূর্বে পাথর মেরে মিনা পরিত্যাগ করা।
  • তাওয়াফে ইফাযা বা হজের তাওয়াফ ও সা’য়ী করা। (যদি ১০ বা ১১ তারিখে না করে থাকে। তবে যদি তিনি তাওয়াফে কুদূমের পরে সা’য়ী করে থাকেন, তাহলে অনেক আলেমদের নিকটই তার আর সা’য়ী নেই)।
  • যারা এ দিন মক্কা ত্যাগ করতে চায় তাদের জন্য বিদায়ি তাওয়াফ করা।
  • যারা ১৩ তারিখে পাথর নিক্ষেপ করতে চায়, তাদের জন্য মিনাতে রাত্রি যাপন করা।

যিলহজের ১৩

(আইয়ামে তাশরীকের ৩য় দিন)

  • সূর্য হেলে যাওয়ার পর প্রথমে ছোট জাম্‌রা, তারপর মধ্য এবং সর্বশেষে বড় জামরায় প্রতিটিতে পরপর সাতটি ছোট পাথর নিক্ষেপ করা।
  • হাদী জবাই করা (দশ, এগারো বা বার তারিখে না করলে)।
  • এক আঙ্গুলের মাথা (১ সেঃমি:) পরিমাণ চুল ছোট করা (যদি ১০, ১১ বা ১২ তারিখে না করে থাকে)।
  • তাওয়াফে ইফাযা বা হজের তাওয়াফ ও সা’য়ী করা। (যদি ১০, ১১ বা ১২ তারিখে না করে থাকে। তবে যদি তিনি তাওয়াফে কুদূমের পরে সা’য়ী করে থাকেন, তাহলে অনেক আলেমদের নিকটই তার আর সা’য়ী নেই)।
  • যারা এ দিন মক্কা ত্যাগ করতে চায় তাদের জন্য বিদায়ি তাওয়াফ করা।

তবে মহিলাগণ যদি মক্কা ত্যাগ করার সময় হায়েয ও নেফাস অবস্থায় থাকে, তাদের বিদায়ি তাওয়াফ করা লাগবে না।

আর এভাবেই কিরান হজকারী হাজী সাহেবার হজের কাজ শেষ হয়ে যাবে।


২- ইফরাদ হজ আদায়কারীর কর্মকাণ্ড:

ইফরাদ হজকারী নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে হজ করবেন:

  • হজের মাওসুমে মীকাত থেকে এহরাম বাঁধা।
  • এহরামের সময় বলবে: “লাব্বাইকা হাজ্জান” অর্থাৎ, আমি হজ আদায় করার জন্য হাজির হয়েছি, হাজির হয়েছি।
  • তাওয়াফে কুদুম বা আগমনি তাওয়াফ: মক্কা পৌঁছে হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করে সাতবার বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা।
  • সম্ভব হলে মাকামে ইব্‌রাহীম ও কা’বাকে সামনে নিয়ে নতুবা মসজিদে হারামের অন্যত্র দু’রাকা’আত নামাজ পড়া।
  • ইচ্ছা হলে সাফা ও মারওয়া পাহাড় দ্বয়ের মাঝখানে সা’য়ী করা। তবে সাফা থেকে সা’য়ী শুরু করতে হবে। এ সা’য়ীটি হজের তাওয়াফের অগ্রিম সা’য়ী হিসেবে বিবেচিত হবে। আর যদি না করা হয়, পরবর্তীতে হজের তাওয়াফের পরে তা আদায় করতে হবে।
  • তাওয়াফ এবং সা’য়ী শেষ হওয়ার পরে এহরাম অবস্থাতেই থাকবেন। হালাল হতে পারবেন না।
  • তারপর ৮ই যিলহজ থেকে নিম্নোক্ত ছক অনুসারে পালন করুন:

যিলহজের ৮

(তারওয়ীয়াহ্‌র দিন)

  • যেহেতু তিনি পূর্ব থেকেই এহরাম অবস্থায় আছেন, তাই তিনি হজের তালবিয়া পড়তে পড়তে মিনায় যাবেন।
  • মিনাতে অবস্থান করে জোহর, আসর, মাগ্‌রিব, এশা ও ফজরের নামাজসমূহ সুনির্দিষ্ট ওয়াক্তে আদায় করা। চার রাকা’আতের ফরজ নামাজ দু’রাকা’আত পড়া।

যিলহজের ৯

(আরাফাহর দিন)

  • জোহরের পর থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত আরাফাহর ময়দানে অবস্থান করা।
  • ৯ তারিখের দিন-গত রাত তথা ১০ তারিখের রাতে কমপক্ষে মধ্যরাত পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করা।

যিলহজের ১০

(ঈদের দিন)

  • মিনায় যাওয়া।
  • জামারাতুল আকাবায় সাতটি ছোট পাথর নিক্ষেপ করা।
  • এক আঙ্গুলের মাথা (১ সেঃমিঃ) পরিমাণ চুল ছোট করা।
  • তাওয়াফে ইফাযা বা হজের তাওয়াফ করা।
  • হজের সা’য়ী করা। তবে যদি তিনি তাওয়াফে কুদূমের পরে সা’য়ী করে থাকেন, তাহলে আর সা’য়ী করা লাগবে না।
  • মিনাতে রাত্রি যাপন করার জন্য ফিরে যাওয়া।

যিলহজের ১১

(আইয়ামে তাশরীকের ১ম দিন)

  • সূর্য হেলে যাওয়ার পর প্রথমে ছোট জাম্‌রা, তারপর মধ্য এবং সর্বশেষে বড় জামরায় প্রতিটিতে পরপর সাতটি ছোট পাথর নিক্ষেপ করা।
  • এক আঙ্গুলের মাথা (১ সেঃমিঃ) পরিমাণ চুল ছোট করা (যদি ১০ তারিখে না করে থাকে)।
  • তাওয়াফে ইফাযা বা হজের তাওয়াফ ও সা’য়ী করা। (যদি ১০ তারিখে না করে থাকেন। কিন্তু যদি তিনি তাওয়াফে কুদূমের পরে সা’য়ী করে থাকেন, তাহলে আর সা’য়ী করা লাগবে না)।
  • মিনাতে রাত্রি যাপন করা।

যিলহজের ১২ (আইয়ামে তাশরীকের ২য় দিন)

  • সূর্য হেলে যাওয়ার পর প্রথমে ছোট জাম্‌রা, তারপর মধ্য এবং সর্বশেষে বড় জামরায় প্রতিটিতে পরপর সাতটি ছোট পাথর নিক্ষেপ করা।
  • এক আঙ্গুলের মাথা (১ সেঃমিঃ) পরিমাণ চুল ছোট করা (যদি ১০ বা ১১ তারিখে না করে থাকে)।
  • যারা তাড়াতাড়ি করে দু’দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে চায়, তারা এ দিনে অর্থাৎ, ১২ তারিখে সূর্যাস্তের পূর্বে পাথর মেরে মিনা পরিত্যাগ করা।
  • তাওয়াফে ইফাযা বা হজের তাওয়াফ ও সা’য়ী করা। (যদি ১০ বা ১১ তারিখে না করে থাকে। কিন্তু যদি তিনি তাওয়াফে কুদূমের পরে সা’য়ী করে থাকেন, তাহলে আর সা’য়ী করা লাগবে না)।
  • যারা এ দিন মক্কা ত্যাগ করতে চায় তাদের জন্য বিদায়ি তাওয়াফ করা।
  • যারা ১৩ তারিখে পাথর নিক্ষেপ করতে চায়, তাদের জন্য মিনাতে রাত্রি যাপন করা।

যিলহজের ১৩

(আইয়ামে তাশরীকের ৩য় দিন)

  • সূর্য হেলে যাওয়ার পর প্রথমে ছোট জাম্‌রা, তারপর মধ্য এবং সর্বশেষে বড় জামরায় প্রতিটিতে পরপর সাতটি ছোট পাথর নিক্ষেপ করা।
  • এক আঙ্গুলের মাথা (১ সেঃমিঃ) পরিমাণ চুল ছোট করা (যদি ১০, ১১ বা ১২ তারিখে না করে থাকে)।
  • তাওয়াফে ইফাযা বা হজের তাওয়াফ ও সা’য়ী করা। (যদি ১০, ১১ বা ১২ তারিখে না করে থাকে। কিন্তু যদি তিনি তাওয়াফে কুদূমের পরে সা’য়ী করে থাকেন, তাহলে আর সা’য়ী করা লাগবে না)।
  • যারা এ দিন মক্কা ত্যাগ করতে চায় তাদের জন্য বিদায়ি তাওয়াফ করা।

তবে মহিলাগণ যদি মক্কা ত্যাগ করার সময় হায়েয ও নেফাস অবস্থায় থাকে, তাদের বিদায়ি তাওয়াফ করা লাগবে না।

আর এভাবেই ইফরাদ হজকারী হাজী সাহেবার হজের কাজ শেষ হয়ে যাবে।

হায়েয বা নেফাস ওয়ালী মহিলা হাজী সাহেবানদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড

হজে যদি আপনার হায়েয বা নেফাস এসে যায় তবে তা নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই। কারণ, এটা আল্লাহ্‌ তাআলা প্রত্যেক নারীর জন্যই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমাদের দ্বীনে কঠিন ও সমস্যাসংকুল কিছু নেই। সব ধরনের সমস্যার সমাধান এতে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু মাসলা-মাসায়েল জেনে নেয়া আবশ্যক।

এখানে একটি সাধারণ নিয়ম হলো: সাধারণ হাজী সাহেবরা যা যা করেন হায়েয বা নেফাস ওয়ালী মহিলাও সেগুলো করবেন। তবে হায়েয ও নেফাস-ওয়ালী মহিলাগণ পবিত্রতা অর্জন পর্যন্ত আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ করবেন না। এর প্রমাণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদিস। হজের সফরে বের হওয়ার পর তার হায়েয এসেছিল। তিনি বলেন:

فدخل علي النبي صلى الله عليه وسلم وأنا أبكي فقال : ما يبكيك قلت لوددت أني لم أحج هذا العام قال : لعلك نفست (أي حضت ) قلت : نعم قال : فان ذلك شئ كتبه الله على بنات آدم . فافعلي ما يفعل الحاج، غير ألا تطوفي بالبيت حتى تطهري ) .

“তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে প্রবেশ করে দেখলেন আমি কাঁদছি। তিনি বললেন: তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম: হায়! আমি যদি এ বছর হজ না করতাম। তিনি বললেন: তোমার বোধ হয় হায়েয হয়েছে। আমি বললাম: হাঁ। তিনি বললেন: এটা তো মহান আল্লাহ আদমের প্রতিটি কন্যার উপর লিখে রেখেছেন। সুতরাং তুমি পবিত্র হওয়া ব্যতীত তাওয়াফ না করে অপরাপর হাজীদের মত হজের যাবতীয় কাজ করে যাও”[৫৩]

সুতরাং হায়েয ও নেফাস হলে মহিলাদের হজ আদায়ে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় না। তাদের জ্ঞাতার্থে নিম্নোক্ত মাসআলাগুলোকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হলো:

  • হায়েয বা নেফাস অবস্থায় একজন মহিলা উমরা বা হজের এহরাম বাঁধতে পারবে।
  • এহরামের সময় হায়েয ও নেফাসওয়ালী মহিলা গোসল করবে। কারণ হজের সফরে আসমা বিনতে উমাইসের সন্তান হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে গোসল করা এবং কাপড় বেঁধে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
  • হায়েয ও নেফাস ওয়ালী মহিলা তালবিয়াহ পাঠ করতে কোন বাধা নেই। অনুরূপভাবে যাবতীয় দো’আও করতে পারবে। এমনকি কোরআন স্পর্শ না করে মুখস্থ পড়ার অনুমতিও কোন কোন ইমাম দিয়েছেন। কারণ, হায়েয বা নেফাস অবস্থায় কোরআন পড়তে নিষেধ করার ব্যাপারে সহীহ কোন হাদিস নেই।
  • যদি তামাত্তু হজ আদায়কারী হয় আর উমরা অবস্থায় কোন মহিলার হায়েয আসে তাহলে সে উমরার এহরাম নিয়েই ৯ তারিখ অর্থাৎ, আরাফার দিন পর্যন্ত কাটিয়ে দেবে। তারপর যদি ৯ তারিখ সে পবিত্র হয়ে যায় তবে দেখতে হবে যে সে উমরা আদায় করার পর আরাফার মাঠে হাজির হওয়া সম্ভব হবে তাহলে উমরা পুরা করে নেবে। আর যদি ৯ তারিখ পর্যন্ত পবিত্র না হয় বা ৯ তারিখে এমন সময় পবিত্র হয়েছে যে, তার আর উমরা আদায় করার সময় নেই তখন তিনি উমরাকে হজে রূপান্তরিত করে ফেলবেন এবং বলবেন: হে আল্লাহ! আমি আমার উমরার সাথেই হজ করার জন্য এহরাম করছি। এভাবে তিনি কিরান হজ আদায়কারী রূপে গণ্য হবেন এবং মানুষের সাথে আরাফাহর ময়দানে অবস্থান করবেন এবং অন্যান্য হাজীদের মত হজের বাকি কাজ সম্পন্ন করবেন। তবে তিনি তাওয়াফ ও সা’য়ীকে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত দেরি করে আদায় করবেন। পবিত্র হওয়ার পর তিনি হজের তাওয়াফ ও সা’য়ী আদায় করলেই তার উমরার তাওয়াফ ও উমরার সা’য়ী করার প্রয়োজন পড়বে না। তবে তার উপর হাদী জবাই করা ওয়াজিব হবে।
  • যদি বিদায়ি তাওয়াফ করার পূর্বে কোন মহিলার হায়েয আসে এবং তাকে মক্কা ছাড়তে হয় তবে তার জন্য বিদায়ি তাওয়াফ করার আবশ্যকতা থাকবে না। তিনি বিদায়ি তাওয়াফ না করেই মক্কা ছেড়ে যেতে পারবেন। কিন্তু হজের তাওয়াফ না করলে হজ সম্পন্ন হবে না।
  • যদি হজের তাওয়াফ অর্থাৎ, তাওয়াফে ইফাযা বা তাওয়াফে যিয়ারাহ করার পূর্বে কারও হায়েয বা নেফাস আসে তাহলে তিনি পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। আর যদি মক্কায় অপেক্ষা করা তার জন্য দুষ্কর হয়ে পড়ে তবে তিনি তার এলাকায় চলে গেলেও যে পর্যন্ত পবিত্র হওয়ার পর আবার মক্কায় এসে তাওয়াফ না করবেন সে পর্যন্ত তার হজ পূর্ণ হবে না। আর এ সময়ে তিনি তার স্বামীর সাথে সহবাসও করতে পারবেন না। তারপর যখন তিনি মক্কায় এসে হজের তাওয়াফ সম্পন্ন করবেন তখন তার হজ পূর্ণ হবে। কিন্তু যদি অবস্থা এমন হয় যে, তার জন্য আবার মক্কায় আসা কষ্টসাধ্য বা মক্কায় অবস্থান করা অসম্ভব যেমন: দূর-দেশের লোক হয়, মাহরাম সফর সঙ্গী না পাওয়ার ভয় থাকে তাহলে তিনি উম্মতের বিজ্ঞ আলেমদের মতে, হায়েয বা নেফাসের স্থানে কাপড় বেঁধে তাওয়াফ করে ফেলবেন। অথবা যদি এমন কোন ইঞ্জেকশন পাওয়া যায় যার মাধ্যমে তার রক্ত বন্ধ করা যাবে তাহলে সেটাও গ্রহণ করতে পারেন।
  • মহিলা হাজী সাহেবানরা হায়েয বন্ধ করার জন্য যদি কোন ঔষধ গ্রহণ করতে চায় তবে তাও জায়েয হবে। কেননা এতে তার জন্য প্রভূত কল্যাণ ও সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় রয়েছে। তবে কোন শারীরিক ক্ষতিকারক কিছু করা যাবে না।
  • হায়েয বা নেফাস ওয়ালী মহিলা সা’য়ী করার স্থানে বসে কারও জন্য অপেক্ষা করতে কোন দোষ নেই। কারণ, সা’য়ী করার স্থানটি মসজিদুল হারামের বাইরের অংশ।

হজে মহিলাদের সৌন্দর্যচর্চা সংক্রান্ত বিভিন্ন হুকুম আহকাম

সৌন্দর্যচর্চা মেয়েদের একটি প্রাকৃতিক রীতি। কিন্তু এহরাম অবস্থায় মহিলাদের মূল অবস্থা কেমন হওয়া উচিত তা সহজেই অনুমেয়। কারণ, মক্কা-মদিনার মত পবিত্র স্থানে সবাই হজ, যিয়ারত ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সদা সচেষ্ট থাকে। সেখানে সৌন্দর্যচর্চার সুযোগ কোথায়? পবিত্র কোরআনে হাজীদেরকে হজের তাওয়াফের পূর্বে নিজেদের যাবতীয় ধুলি-মলিনতা ও ময়লা অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে হজের তাওয়াফ করতে বলা হয়েছে,

﴿ثُمَّ لْيَقْضُوا تَفَثَهُمْ وَلْيُوفُوا نُذُورَهُمْ وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيق﴾

“তারপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাদের মানত পূর্ণ করে এবং তাওয়াফ করে প্রাচীন ঘরের।”[৫৪]

তাছাড়া হাদিসে এসেছে,

إن الله يباهي بأهل عرفات أهل السماء فيقول لهم انظروا إلى عبادي جاءوني شعثاً غبراً.

“মহান আল্লাহ আরাফাতে অবস্থানকারীদের নিয়ে আসমানের অধিবাসী (ফেরেশতা) দের নিকট গর্ব করে বলেন, দেখ, আমার বান্দাগণ আমার নিকট উস্কাখুস্কু ধুলি-মলিন অবস্থায় এসে হাজির হয়েছে।”[৫৫]

আলেমগণ কোরআনের উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস থেকে এটাই বুঝেছেন যে, হজের সফর সৌন্দর্যচর্চার জন্য নয়।

তবে সৌন্দর্য চর্চার শ্রেণিভেদে হুকুমেরও পার্থক্য হয়ে থাকে। মূলত: ইসলাম এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছে:

  • এহরাম অবস্থায় কোন মহিলা হাজী সাহেবার জন্য তার নিজের চুল কাটা হারাম। চাই সেটা মাথার হোক, কিংবা শরীরের অন্য কোন অংশের চুল।
  • এহরাম অবস্থায় কোন মহিলা হাজী সাহেবার জন্য শরীরে কিংবা কাপড়ে সুগন্ধি ব্যবহার করা হারাম। তাছাড়া কোন মহিলার জন্য শরীরে কিংবা কাপড়ে সুগন্ধি বা আতর লাগিয়ে বেগানা পুরুষের সাথে মেলা-মেশা করা হারাম। চাই তা এহরাম অবস্থায় হোক অথবা না হোক, আবার তা হজের স্থানে হোক কিংবা অন্য কোন স্থানে হোক। কেননা, এটি খুব বড় অন্যায় এবং এতে রয়েছে বড় ফেতনা। আর যদি মহিলাদের জন্য মসজিদে সুগন্ধি লাগিয়ে যাওয়া হারাম হয়, তবে অন্যান্য স্থানে কী হবে? কিন্তু যখন এহরাম অবস্থায় না থাকে, তখন ঘরের মধ্যে সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে। যেমনটি করেছিলেন ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা।
  • এহরামকারী মহিলা এহরাম অবস্থায় শরীরে এমন তেল লাগাতে পারে, যাতে কোন সুগন্ধি নেই।
  • মহিলা হাজী সাহেবা হাতের চুড়ি, আংটি ইত্যাদি পরে এহরাম বাঁধতে পারেন। তবে সে যেন তা মাহরাম নয় এমন পুরুষ অর্থাৎ, বেগানা পুরুষের সামনে প্রকাশ না করে।
  • এহরাম অবস্থায় মহিলা হাজী সাহেবা আয়নার দিকে তাকাতে পারবেন।
  • এহরামকারী মহিলা এহরাম অবস্থায় মেহেদি ব্যবহার করতে পারবেন।
  • এহরাম অবস্থায় মহিলাদের জন্য সুর্মা লাগানো মাকরূহ।

হজে মহিলা ও তার সন্তান-সন্ততি:

অনেক মহিলারাই হজে তাদের ছোট সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে আসেন। তাই এখানে ছোট সন্তান সন্ততিদের হজের হুকুম-আহকাম তুলে ধরা হল।

  • ছোট সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, তাদের হজ শুদ্ধ হবে। কিন্তু তা দ্বারা ইসলামের ফরজ হজ আদায় হবে না। অর্থাৎ, যদি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে হজ করে, তবে সে হজ আদায় হবে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর ইসলামের ফরজ হজ আদায় করতে হবে। ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, “জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক সন্তানকে দেখিয়ে বলল, ‘এর জন্য কি হজ আছে?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘হ্যাঁ, এবং তোমার জন্য সওয়াব রয়েছে।”[৫৬]
  • এহরাম বাধার সময় বড় হাজীরা যা করে, ছোটদেরকেও তাই করাতে হবে। সন্তান ছেলে হলে পুরুষদের জন্য যা পরা যাবে না ছোট ছেলের জন্যও তা পরা যাবে না, আর সন্তান মেয়ে হলে মহিলাদের জন্য যা পরা যাবে না তা ছোট মেয়ের জন্যও পরা যাবে না।
  • অভিভাবকরা যদি এহরাম অবস্থায় থাকে তবে ছোটদের পক্ষে এহরাম বাঁধতে পারবেন। চাই সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক।
  • ছোট সন্তানের পক্ষে হজের যেসব কাজ করা সম্ভব হবে, তা সন্তানকে করতে হবে। এসব কাজ তার অভিভাবক তার পক্ষে আদায় করতে পারবে না। যেমন: আরাফাতে অবস্থান করা, মুযদালিফায় রাত্রি যাপন করা ইত্যাদি। আর ছোট সন্তান যেসব কাজ করতে পারবে না, তার অভিভাবক তার পক্ষ হতে সেগুলো করতে পারবে। যেমন: তালবিয়া পাঠ, পাথর নিক্ষেপ ইত্যাদি।
  • কিন্তু যে অভিভাবকগণ তাদের সন্তানের পক্ষ হতে পাথর নিক্ষেপ করবেন, তাদেরকে প্রতি জামরাতে প্রথমে নিজের পক্ষ থেকে পাথর নিক্ষেপ করে পরে তাদের সন্তানের পক্ষ থেকে নিক্ষেপ করতে হবে।
  • তাওয়াফের সময় যদি সন্তান হাঁটতে সক্ষম হয়, তবে সে নিজে নিজে হেঁটে তাওয়াফ করবে। নইলে তাকে বহন করে বা সাওয়ার করে তাওয়াফ করানো যাবে। এ অবস্থায় বহনকারীর জন্য এহরাম অবস্থা হওয়া শর্ত নয়।
  • কোন ক্রমেই ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে হারাম শরীফের বারান্দায় খেলা-ধুলার জন্য ছেড়ে দেয়া যাবে না। কেননা, এতে অন্যান্য মুসল্লিদের অসুবিধা হয়, যা অভিভাবকের গুনাহের কারণ হতে পারে।

ক্স অনুরূপভাবে যে সমস্ত সন্তান-সন্ততি নিজেরা নিজেদের পায়খানা-প্রস্রাব থেকে পবিত্র হতে শিখেনি, তাদেরকে তাদের অভিভাবক পবিত্র রাখবেন। যাতে করে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা হয়।


একনজরে মহিলা ও পুরুষ হাজীদের মধ্যে পার্থক্যসমূহ:

মহান আল্লাহ মহিলা পুরুষের মাঝে সৃষ্টিগত যেমন কিছু পার্থক্য রেখেছেন তেমনিভাবে তাদের সৃষ্টি ও শক্তি-সামর্থ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবাদতের ক্ষেত্রেও কিছু বিষয়ে পার্থক্য করেছেন।

আমরা যদি হজের আহকামসমূহের প্রতি তাকাই তাহলে দেখতে পাব যে, এ পার্থক্যের মূল ভিত্তি হচ্ছে তিনটি বিষয়:

১- মহিলাদের উপর পুরুষদের দায়িত্বশীলতা

২- মহিলাদের হায়েয ও নেফাস জনিত সমস্যা

৩- মহিলাদের পর্দা ও অবাধ বিচরণ নিয়ন্ত্রণ

১- মহিলাদের উপর পুরুষদেরকে মহান আল্লাহ দায়িত্বশীল ঘোষণা করেছেন। আর সে কারণে যে যে বিষয়ে মহিলারা পুরুষদের থেকে ভিন্ন তা হচ্ছে:

  • নফল হজের জন্য মহিলাদেরকে তাদের স্বামীর অনুমতি নিতে হবে।
  • ফরজ হজের জন্য মহিলাদেরকে তাদের স্বামীর অনুমতি নেয়া মুস্তাহাব।
  • কোন মহিলা ইদ্দতে থাকলে সে হজের সফরে যেতে পারবে না।

২- মহিলাদের হায়েয ও নেফাসজনিত সমস্যার কারণে যে যে বিষয়ে মহিলারা পুরুষদের থেকে ভিন্ন তা হচ্ছে:

  • হায়েয-নেফাস অবস্থায় মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে পারবে না।
  • হায়েয-নেফাস অবস্থায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারবে না। [তবে যে অবস্থা সম্পর্কে পূর্বে আলোচিত হয়েছে সেটা ভিন্ন]
  • মক্কা ছাড়ার সময় কোন মহিলা হায়েয-নেফাস অবস্থায় থাকলে তার আর বিদায়ি তাওয়াফ করা লাগবে না।

৩- মহিলাদের পর্দা, ইজ্জত আব্রুর সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তারা পুরুষদের থেকে যে যে বিষয়ে ভিন্ন তা হচ্ছে:

  • মাহরাম ব্যতীত সফর করা মহিলাদের জন্য জায়েয নয়।
  • যদি হজের কর্মকাণ্ড শুরু করার পর কারও মাহরাম মারা যায় তবে তিনি তার হজ কমপ্লিট করে নেবেন।
  • মহিলাগণ হাত মোজা ব্যবহার করতে পারবেন না।
  • এমন বোরকা ব্যবহার করা যাবে না যাতে মুখ ঢাকা পড়ে যায়।
  • মহিলাগণ হজে স্বাভাবিক অবস্থায় মুখ ঢাকতে পারবেন না।
  • যদি গায়রে মাহরাম তাদের সামনে এসে যায় তখন তারা মুখ ঢেকে ফেলবেন।
  • মাথার উপর থেকে ঢেকে রাখার মত কাপড় রাখা যাবে যা প্রয়োজনের সময় নীচে নামিয়ে ফেলা যায়।
  • নেকাব পরতে পারবে না।
  • মহিলাগণ অলংকার ব্যবহার করতে পারবেন।
  • সুগন্ধি নেই এমন সৌন্দর্যমূলক কিছু পরতে পারবেন। তবে না পরা ভাল।
  • মেহেদি ও খেজাব ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সুগন্ধি মিশ্রিত হতে পারবে না।
  • বড় ও উঁচু স্বরে তালবিয়া পাঠ করবে না।
  • অনুরূপভাবে তাওয়াফ, সা’য়ী ও অন্যান্য দো’আর সময়ও তার স্বর উঁচু হবে না।
  • মহিলাগণ রমল করবে না।
  • মহিলাগনের উপর ‘ইয্‌তেবা’ নেই।
  • মহিলাগণ পুরুষদের ভিড় থেকে বাঁচার জন্য প্রান্তদিক থেকে তাওয়াফ করবেন।
  • ভিড় থাকলে হাজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানী ধরার চেষ্টা না করাই ভাল।
  • সা’য়ীর সময় মহিলাগণ দুই সবুজ গম্বুজের মাঝখানে দৌড়াবেন না।
  • সা’য়ীর সময় মহিলাগণ সাফা পাহাড়ের উপরে বেয়ে উঠার চেষ্টা করবেন না।
  • মহিলা হাজী সাহেবা নিজের ‘হাদী’ নিজে জবাই করার চেয়ে অন্যের মাধ্যমে তা করানো উত্তম।
  • মহিলা চুল খাট করবে, যার পরিমাণ পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। তারা মাথা কামাতে পারবে না। এটা জায়েয নেই।

শরিয়ত নিষিদ্ধ কিছু কর্মকাণ্ড থেকে সাবধানকরণ:

  • সাবধান: কোন ক্রমেই বেপর্দা হওয়া যাবে না, যে কাপড় শরীর ঢাকে না সে কাপড় পরা যাবে না। এহরাম অবস্থায় থাকলেও কোন বেগানা পুরুষের সামনে মুখ খোলা রাখা যাবে না।
  • সাবধান: যতটুকু সম্ভব নারী-পুরুষের অবাধ মিলন হয় এমন অবস্থা থেকে দূরে থাকতে হবে। আর যে সময়গুলোতে ভিড় বেশি হয় না, সে সময়গুলোতে হজের কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন: রাতের বেলায় পাথর নিক্ষেপ।
  • সাবধান: শিরক ও বিদআত থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। অনুরূপভাবে না জেনে কারও অন্ধ অনুকরণ থেকে বিরত থাকুন এবং হজের আহকামসমূহ সঠিক পদ্ধতিতে জেনে নিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা আমার থেকে তোমাদের হজের নিয়ম-কানুন শিখে নাও।”[৫৭] তাই কোন একটি গ্রহণযোগ্য হজের বই সাথে নেয়ার জন্য নসিহত করছি।
  • সাবধান: গিবত, পরনিন্দা, পরচর্চা, ঝগড়া ও দুনিয়াবী ব্যাপারে অধিক কথাবার্তা বলা থেকে নিজেকে হেফাযত করতে হবে। বিশেষ করে এ পবিত্র ভূমির দাবি হচ্ছে জিকির এবং দো’আ, তাই এখানে এ সমস্ত কাজে সময় নষ্ট করার মত গুনাহ আর হতে পারে না।
  • সাবধান: সাধারণ লোকদেরকে দ্বীনি ব্যাপারে প্রশ্ন করা থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রশ্ন করতে হবে আলেমদেরকে। মহান আল্লাহ বলেন: “তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর।”[৫৮]
  • সাবধান: অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ যেন না হয়। অনুরূপভাবে হায়েয, নেফাস অবস্থায় মসজিদেও প্রবেশ করবেন না। এ ব্যাপারে লজ্জা যেন আপনাকে সঠিক পথে চলতে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।
  • সাবধান: যে সমস্ত কর্মকাণ্ডে কোন উপকার নেই তা পরিত্যাগ করুন। অকারণে বাজারে বাজারে ঘোরাফেরা ত্যাগ করুন। যদি যেতেও হয় খুব সামান্য সময়ের জন্য এবং নিজ মাহরামকে সাথে নিয়ে যান।
  • সাবধান: অপর মুসলিম বোনদের উপর অহংকার করে থাকবেন না। তাদের নিয়ে ঠাট্টা করা থেকে বিরত থাকুন। দ্বীনদার মুসলিম বোনদের সাথি হওয়ার চেষ্টা করুন।
  • সাবধান: হজের সফর এমনিতেই কষ্টের সফর। এতে ধৈর্য ধরে রাখা একটি বিরাট গুণ। তাই অতি সামান্যতেই রাগান্বিত হওয়া, বিরক্ত হওয়া, অভিযোগ দেয়া থেকে নিজেকে সংযত রাখুন। আর মনে রাখুন, হজের সফরে কষ্ট হবেই। কষ্টের কারণে সাওয়াব পাওয়া যাবে এবং গুনাহ মাফ হবে। তবে যদি ধৈর্য রাখতে না পারেন তবে তাতে গুনাহ্‌গার হতে পারেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তার উমরাহর সফরে কষ্ট হচ্ছে জানালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমার কষ্ট ও খরচ অনুপাতে তোমার সওয়াব রয়েছে”।[৫৯]
  • রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য হাদিসে আরো বলেছেন: “মুসলিম কোন কষ্ট, ব্যথা, চিন্তা, পেরেশান ইত্যাদি যাতেই নিপতিত হোক না কেন আল্লাহ এর দ্বারা তার গুনাহের কাফফারা করে থাকেন”।[৬০]
  • সাবধান: নিজের নেক আমলের ব্যাপারে খুব বেশি আশাবাদী হয়ে গর্ববোধ করবেন না। তাছাড়া লোক দেখানো বা লোকরা জানতে পারুক এমন প্রবণতা যেন আপনার মনে না থাকে। কেননা, সামান্য লোক দেখানোর প্রবণতাও ছোট শিরক। যা অপরাপর কবিরা গুনাহ থেকে বড় ধরনের গুনাহ। যারা এ ধরনের কাজ করে হা শরের মাঠে তাদের বলা হবে “যাদেরকে তোমরা দুনিয়ায় দেখানোর জন্য কাজ করেছিলে তাদের কাছে যাও এবং দেখ সেখানে তোমাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিদান পাও কি না?”[৬১]

মহিলা হাজীসাহেবা ও মদিনা শরীফের যিয়ারত:

(১) মসজিদে নববীর যিয়ারত এবং তাতে নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে যেকোনো সময় আপনার জন্য মদিনায় যাত্রা করা সুন্নাত। কারণ, মসজিদে নববীতে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা, মসজিদে হারাম ছাড়া অন্য যে কোন মসজিদে হাজার ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা অপেক্ষা শ্রেয়।

(২) মসজিদে নববীর যিয়ারতের জন্য এহরাম বাঁধা বা তালবিয়া পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। মসজিদে নব্বীর যিয়ারতের সঙ্গে হজের কোন রকম সম্পর্ক নেই।

(৩) মসজিদে নব্বীতে প্রবেশের সময় প্রথম ডান পা রাখবেন এবং বিসমিল্লাহ বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ পাঠ করবেন। আর আল্লাহর নিকট এ প্রার্থনা করবেন যে, তিনি যেন তাঁর রহমতের দ্বারসমূহ আপনার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। এরপর নিম্নোক্ত দো’আ পড়বেন :

أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَوَجْهِهِِ الْكَرِِيْمِِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِِ مِنَ الشَّيْطَانِِ الرَّجِيْمِِ ، اللّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

অর্থাৎ বিতাড়িত শয়তানের প্ররোচনা হতে মহান আল্লাহ, তাঁর সম্মানিত সত্তা ও প্রাচীন বাদশাহির নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত করে দাও।

এ দো’আ যে কোন মসজিদে প্রবেশের সময়ও পাঠ করা যায়।

মসজিদে প্রবেশ করেই তাহিয়্যাতুল মসজিদের দু’রাকাত নামাজ পড়বেন।

(৫) তারপর যখন মহিলাগণ ‘রাওদাহ’ নামক জান্নাতের বাগানে যাবেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের উদ্দেশ্যে দরুদ ও সালাম পেশ করতে পারেন।

(৬) পবিত্রতা অর্জন করত: মসজিদে কোবা যিয়ারত করে সেখানে নামাজ পড়া আপনার জন্য সুন্নাত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম নিজে তা করেছেন এবং অন্যদেরকেও উদ্বুদ্ধ করেছেন।

উপরোল্লেখিত স্থানগুলো ছাড়া মদিনার আর কোন মসজিদ বা অন্য কোন জায়গা যিয়ারত করা শরিয়ত সম্মত নয়। অতএব বিনা কারণে নিজেকে কষ্ট দেয়া ও নিজের উপর এমন বোঝা চাপিয়ে নেয়া যাতে কোনই সাওয়াব নেই, বরং উল্টো পাপের সম্ভাবনা রয়েছে, এমন কাজ করা কারো উচিত নয়। আল্লাহ তা’লা আমাদের সবাইকে এগুলো মেনে চলার তাওফীক দান করুন।

আল্লাহর দরবারে কবুল না হওয়ার ভয় থাকা

প্রিয় বোন!

মহান আল্লাহ আপনাকে এ হজ আদায়ের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য কবুল করেছেন এবং তাওফীক দিয়েছেন আর আপনাকে হজের সফরে এ পবিত্র ভূমিতে, উত্তম দিনগুলোতে জিকির, দো’আ করার মত সৌভাগ্যের অধিকারী করেছে এটাই তো একটি বিরাট নেয়ামত। এ নেয়ামতের কথা স্মরণ করে অন্য ধরনের ভয়ও আপনার মনে আসা উচিত আর তা হলো, ‘আমার আমলগুলো কি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে?

কত মানুষ এমনও আছে যারা হজ থেকে শুধু কষ্ট ও মুসিবতই কুড়িয়েছে। তাদের অনেক আবার এমনও আছে তারা যখন বলেছে, “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক” হে আল্লাহ! আমি আপনার দরবারে হাজির, তখন তাকে বলা হয়েছে, না তোমার হাজিরা গ্রহণ করা হয়নি। তোমার হজ সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহের জন্ম দিয়েছে।

এজন্য সালফে সালেহীন সব সময় নেক আমল করার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতেন। আমল করার পর তাদের ভয় হতো যে, আমলটি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে কি না? আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন: “তোমরা নেক কাজ করার চেয়ে কাজটি কবুল হয়েছে কি না এ দিকে বেশি গুরুত্ব দাও, তোমরা কি শোন না মহান আল্লাহর কথা, তিনি বলেছেন: “আল্লাহ তো কেবলমাত্র মুত্তাকীদের থেকে কবুল করে থাকেন।”[৬২]

প্রিয় বোন!

আল্লাহর নিকট কোন আমল কবুল হওয়ার বড় প্রমাণ হলো:

যাবতীয় গুনাহের কাজ থেকে খাটি তাওবাহ করার তাওফীক হওয়া এবং ভবিষ্যতে আল্লাহর দ্বীন ও রাসূলের আনুগত্যের উপর দৃঢ় থাকতে পারা। গুনাহ করার পর সৎকাজ করা কতই না উত্তম তার থেকে উত্তম হলো সৎকাজের পর সৎকাজ করতে সক্ষম হওয়া এবং এর উপর দৃঢ় থাকা। অপরদিকে সবচেকে দুঃখ ও দুর্ভাগ্যজনক কাজ হলো, সৎকাজের পর অসৎ কাজের মাধ্যমে সে সৎকাজকে নিশ্চি‎হ্ন‎‎ করে দেয়া।

সম্মানিতা বোন!

আজ আপনি আল্লাহর আনুগত্যে অবগাহন করে সম্মানিত হচ্ছেন সুতরাং এ ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকা প্রয়োজন যেন কাল সে আনুগত্যের সম্মানকে অপরাধ ও অলসতা দ্বারা অপমানিত না করেন।

প্রিয় বোন!

আপনার মনে করা উচিত যে, আপনি নবী স্ত্রী আয়েশার গোষ্ঠীভুক্ত। আপনার সম্মান ও প্রতিপত্তি নবী পত্নীদের মত। আপনি সামান্য নাটক ও খারাপ পত্রিকার খপ্পরে পড়ে নিজেকে, নিজের আত্মসম্মানকে কোন ক্রমেই নিচু হতে দেবেন না। আপনার কান আজ আজানের ধ্বনিতে কুহরিত, মুখ কোরআনের বাণীতে মুখরিত। আপনি আপনার এ কান ও মুখকে গান-বাদ্যের মত শয়তানি কর্মকাণ্ডের মধ্যে রেখে বিষাক্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না।

প্রিয় বোন!

আপনার সন্তানগুলো আপনার কাঁধে আমানতস্বরূপ। তাদেরকে দ্বীনের উপর পরিচালনা করা এবং তাদের মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং দ্বীনের মহব্বত জাগ্রত করা ও তাতে বলীয়ান করা আপনার ঈমানী দায়িত্ব। তাদেরকে কখনো অন্যায় করার সুযোগ করে দেয়া। খারাপ বন্ধু-বান্ধব, সঙ্গীদের সংশ্রব থেকে তাদের মুক্ত রাখুন।

আপনি নিজেকে তাদের জন্য আল্লাহর ইবাদত, আনুগত্য ও সচ্চরিত্রতার ক্ষেত্রে অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বরূপে পেশ করুন।

প্রিয় বোন!

আপনার স্বামী আপনাকে একজন নেক স্ত্রী রূপে দেখতে চায়। যার দিকে তাকালে তার অন্তর খুশিতে ভরে যায়। যাকে কোন নির্দেশ দিলে সে তা খুশি মনে করতে সদা প্রস্তুত থাকে। সুতরাং সে রকম হওয়ার চেষ্টা করুন। তাকে সৎকাজের আদেশ দিন এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করুন আর এর কুফল থেকে সাবধান করুন।

প্রিয় দ্বীনি বোন!

আপনি নিজে ব্যক্তিত্বসম্পন্না হোন। সৎ বান্ধবীদেরকে আপনার সাথি বানান। যাদেরকে সাথি বানালে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আখেরাতের কথা আপনার স্মরণ হবে তাদেরকে বন্ধু বানান। খারাপ মহিলা ও দুষ্ট প্রকৃতির মেয়েদের সাথে মিশে নিজেকে অপমানিত করবেন না।

সবশেষে, এ দো’আ করব যে, আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন। তিনি তো হেফাজতকারী। দয়াশীল। তিনি আপনার হজ, উমরা ও যিয়ারত কবুল করুন। আমীন। আমীন।

মহিলা হাজী সাহেবার জন্য সহিহ হাদিস থেকে নির্বাচিত কিছু মাসনুন দো’আ

নিম্নলিখিত দো’আসমূহ অথবা তন্মধ্যে থেকে যতটুকু সম্ভব আরাফাত, মুযদালিফা ও অন্যান্য দো’আর স্থানে পড়া উচিত :-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ العَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةَ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِيْنِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي، وَمَالِي

হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ক্ষমা এবং দুনিয়া ও আখরাতে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ক্ষমা এবং আমার দ্বীন ও দুনিয়া, পরিজন ও সম্পত্তির ব্যাপারে নিরাপত্তা চাচ্ছি।

اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي، وَآمِنْ رَوْعَاتِي، اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يـَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِيْ، وَعَنْ يَمِينِي، وَعَنْ شِمَالِي، وَمِنْ فَوْقِي، وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي.

হে আল্লাহ! তুমি আমার গোপন দোষসমূহ ঢেকে রাখ। আমার ভয় ভীতিকে নিরাপত্তায় পরিণত কর। আমার অগ্র-পশ্চাৎ, ডান-বাম এবং উর্ধ হতে আপতিত বিপদ থেকে আমাকে হেফাজত কর। নিম্নদিক হতে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া থেকে তোমার মহত্ত্বের আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

اللَّهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَدَنِـيْ، اللَّهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ سَمْعِيْ، اللَّهُمَّ عَافِنِيْ فِي بَصَرِيْ، لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ.

হে আল্লাহ! তুমি আমাকে দৈহিক নিরাপত্তা দাও, আমার শ্রবণেন্দ্রিয় ও দৃষ্টিশক্তিকে নিরাপদ রাখ। তুমি ছাড়া আর কোন প্রকৃত মা’বুঁদ নেই।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ، وَالْفَقْرِ، وَأَعُـوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ.

হে আল্লাহ! আমি কুফুরী, দরিদ্র ও কবরের আজাব হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তুমি ছাড়া আর কোন হক মা’বুদ নেই।

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِيْ لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ.

হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া আর কোন সত্যিকার মা’বুদ নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি সাধ্যানুসারে তোমার সাথে কৃত ওয়াদার উপর উপর রয়েছি। আমি যা করেছি, তার অপকারিতা হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমাকে যে সব নেয়ামত দান করেছ আমি তার স্বীকৃতি প্রদান করছি। আমি আমার সমুদয় গুনাহ স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ছাড়া আর কেউ আমার গুনাহসমূহ মাফ করতে পারবে না।

اللَّهُمَّ إِنِّـي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحُزْنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَمِنَ الْبُخْل والْجُبُنِ، وأعوذ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ.

হে আল্লাহ! আমি চিন্তা ও উদ্বেগ, অক্ষমতা ও অলসতা, কৃপণতা ও কাপুরুষতা, ঋণের গুরুভার ও মানুষের অধীনতা হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

اللَّهُمَّ اجْعَلْ أَوَّلَ هَذَا الْيَوْمِ صَلاَحاً، وَأَوْسَطَهُ فَلاَحاً، وَآخِرَهُ نَجَاحاً، وَأَسْأَلُكَ خَيْرَيِ الدُّنْيَا وَاْلآخِرَةِ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ.

হে আল্লাহ! আজকের দিনের প্রথম অংশকে সততা, মধ্যভাগকে কল্যাণ এবং শেষ-ভাগকে সফলতায় ভরে দাও। হে পরম দয়ালু! আমি তোমার কাছে দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ কামনা করছি।

اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكُ الرِّضَى بَعْدَ الْقَضَاءِ، وَبَرَدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ، وَلَذَّةَ النَّظَرِ إِلَى وَجْهِكَ الكَريْمَ، وَالشَّوْقَ إِلَى لِقَائِكَ فِي غَيْرِ ضَرَّاءِ مُضِرَّةٍ وَلاَ فِتْنَةٍ مُضِلَّةٍ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَم، أَوْ أَعْتَدِيَ أَوْ يُعْتَدَى عَلَيَّ، أَوْ أَكْتَسِبَ خَطِيئَةً أَوْ ذَنْباً لاَ تَغْفِرُهُ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ.

হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি তোমার ফয়সালার পর খুশি থাকার মনোবৃত্তি, মৃত্যুর পর সুখময় জীবন, তোমার চেহারা মুবারাক দর্শনের স্বাদ গ্রহণ, তোমার সাথে সাক্ষাতের প্রবল আকাঙ্ক্ষা -কোন ক্ষতিকর স্বাচ্ছন্দ্য ও বিভ্রান্তিকর ফেনতা ছাড়াই। কারো প্রতি জুলুম করা কিংবা কেউ আমার প্রতি জুলুম করা থেকে আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই।আশ্রয় চাচ্ছি কারো প্রতি সীমালংঘন করা থেকে বা কেউ আমার উপর সীমালংঘন করা থেকে, ক্ষমার অযোগ্য কোন ভুল বা পাপ-কাজ থেকে। বার্ধক্যের শেষ পর্যায়ে উপনীত হওয়া থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।

اللَّهُمَّ اهْدِنِي ِلأَحْسَنِ اْلأَعْمَالِ وَاْلأَخْلاَقِ لاَ يَهْدِيْ لأَحْسَنِهَا إِلاَّ أَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّيْ سَيِّئَهَا، لاَ يَصْرِفْ عَنِّيْ سَيِّئَهَا إِلاَّ أَنْتَ.

হে আল্লাহ ! আমাকে সর্বোত্তম কাজ ও চরিত্রের দিকে হেদায়েত দাও। তুমি ছাড়া আর কেউ এ ব্যাপারে হেদায়েত দিতে পারবে না। আর আমা হতে নিকৃষ্ট কাজ ও চরিত্রকে ফিরিয়ে রাখ। তুমি ছাড়া আর কেউ তা ফিরিয়ে রাখতে পারবে না।

اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِيْ دِيْنِيْ، وَوَسِّعْ لِيْ فِيْ دَارِيْ، وَبَارِكْ لِيْ فِيْ رِزْقِيْ.

হে আল্লাহ আমার জন্য আমার দ্বীনকে সংশোধন করে দাও। আমার বাসস্থানকে প্রশস্ত করে দাও এবং আমার রুজিতে বরকত দাও।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْقَسْوَةِ وَالْغَفْلَةِ وَالذِّلَةِ وَالْمَسْكَنَةِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفُسُوقِ وَالشِّقَاقِ وَالنِّفَاقِ وَالسُّمْعَةِ وَالرِّيَاءِ.وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الصَّمَمِ، وَالْبُكْمِ، وَالْجُـذَامِ، وَسَيِّءِ اْلأَسْقَامِ.

হে আল্লাহ ! আমি অন্তরের পাষণ্ডতা, গাফলতী, অবমাননা ও অভাব-অভিযোগ হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি কুফুরী, ফাসেকী, সত্যের বিরুদ্ধাচরণ এবং লোক শোনানো ও দেখানো হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি বধিরতা, বাকশক্তি-হীনতা, কুষ্ঠ ও অন্যান্য দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।

اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِيْ تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا.

হে আল্লাহ আমার আত্মাকে তাকওয়া দান কর এবং একে পবিত্র কর। তুমি তো সর্বোত্তম পবিত্রকারী। তুমিই এর অভিভাবক ও প্রভু।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ، وَقَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ، وَنَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ، وَدَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجَابُ لَهَا.

হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট উপকারহীন জ্ঞান, নির্ভয় অন্তর, অতৃপ্ত আত্মা এবং কবুল হয় না এমন দো’আ হতে আশ্রয় চাই।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ، وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَلِمْتُ، وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْلَمْ.

হে আল্লাহ ! যে কাজ আমি করেছি এবং যা করিনি, তার অমঙ্গল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। যে বিষয় আমি জেনেছি এবং যা জানিনি, এত দু ভয়ের অমঙ্গল থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيعِ سَخْطِكَ.

হে আল্লাহ ! আমার প্রতি তোমার নেয়ামতের অবক্ষয়, অনাবিল শানিবতর অপসারণ, শাস্তির আকস্মিক আক্রমণ এবং তোমার সকল অসন্তোষ হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَدَمِ وَالتَّرَدِّيْ وَمِنَ الْغَرَقِ وَالْحَرْق وَالْهَرَم، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ يَتَخَبَّطَنِيَ الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغاً، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ طَمَعٍ يَهْدِيْ إِلَى طَبْعٍ.

হে আল্লাহ ! আমার মাথার উপর কিছু ধসে পড়ার কারণে অথবা অন্য যে কোন কারণে আমি ধ্বংস হয়ে যাই, অথবা পানিতে ডুবে কিংবা আগুনে জ্বলে মৃত্যুবরণ করি – এ থেকে এবং বার্ধক্যজনিত কষ্টের হাত হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আশ্রয় চাচ্ছি শয়তান যেন মৃত্যুর সময় আমাকে গুমরাহ না করে। আশ্রয় চাচ্ছি দংশিত হয়ে মারা যাওয়া এবং লোভ-লালসা হতে যা মানুষকে কুপ্রবৃত্তির দিকে নিয়ে যায়।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ اْلأَخْلاَقِ وَاْلأَعْمَالِ وَاْلأَهْوَاءِ وَاْلأَدْوَاءِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ، وَقَهْرِ الْعَدُوِّ، وَشَمَاتَةِ اْلأَعْدَاءِ.

হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি ঘৃণিত স্বভাব এবং অবাঞ্ছিত আচরণ হতে, আর আমাকে রক্ষা কর কুপ্রবৃত্তির তাড়না এবং দৈহিক রুগ্নতা হতে এবং আশ্রয় চাচ্ছি ঋণের গুরুভার, শত্রুর দুর্দম অপ প্রভাব ও উপহাস হতে।

اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِيْ دِيْنِيَ الَّذِيْ هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِيْ، وَأَصْلِحْ لِيْ دُنْيَايَ الَّتِيْ فِيْهَا مَعَاشِيْ، وَأَصْلِحْ لِيْ آخِرَتِيَ الَّتِيْ فِيْهَا مَعَادِيْ، وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِيْ فِيْ كُلِّ خَيْرٍ، وَالْمَوْتَ راحَةً لِيْ مِنْ كُلِّ شَرٍّ.

হে আল্লাহ ! আমার দ্বীনকে আমার জন্য পরিশুদ্ধ করে দাও যার মধ্যে রয়েছে আমার সমুদয় কার্যাদির আত্মরক্ষার নিশ্চিত উপায়। আর সংশোধন করে দাও আমার পার্থিব জীবনকে যার মধ্যে রয়েছে আমার জীবিকা। আর আমার আখেরাতকে তুমি করে দাও বিশুদ্ধ, যেখানে আমাকে অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। আমার দীর্ঘ জীবনকে অধিকতর মঙ্গল কাজের অসি-লা করে দাও। আর আমার মৃত্যুকে প্রত্যেক অনিষ্ট হতে আমার জন্য শান্তির অসি লা করে দাও।

ربِّ أَعِنِّيْ وَلَا تُعِنْ عَلَّي، وَانْصُرْنِيْ وَلاَ تَنْصُرْ عَلَيَّ، وَاهْدِنِيْ وَيَسِّرِ الْهُدَي علَيَّ.

প্রভু হে! আমাকে সাহায্য কর, আমার প্রতিপক্ষকে সাহায্য করো না। আমাকে সফলতা দান কর, আমার প্রতিপক্ষকে দান করো না। আমাকে হেদায়াত দাও এবং হেদায়াত লাভ আমার জন্য সহজ করে দাও।

اللَّهُمَّ اجْعَلْنِيْ ذَكَّاراً لَكَ، شَكَّاراً لَكَ، مِطْوَاعاً لَكَ، مُخْبِتًا إِلَيْكَ، أَوَّاهًا مُنِيْباً، رَبِّ تَقَبَّلْ تَوْبَتِيْ، وَاغْسِلْ حَوْبَتِيْ، وَأَجِبْ دَعْوَتِيْ، وَثَبِّتْ حُجَّتِيْ، وَاهْدِ قَلْبِيْ، وَسَدِّدْ لِسَانِيْ، وَاسْلُلْ سَخِيمَةَ صَدْرِيْ.

হে আল্লাহ ! আমাকে এমন তাওফীক দান কর যাতে আমি তোমার খুব বেশি স্মরণকারী, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী ও অনুগত হতে পারি এবং তোমারই নিকট বিনম্র হই এবং তোমারই নিকট দুঃখ প্রকাশ করতে শিখি। হে আমার প্রতিপালক! আমার তাওবাকে তুমি কবুল কর। আমার গুনাহরাশি ধুয়ে মুছে দাও। আমার দো’আ কবুল কর। আমার প্রমাণ দৃঢ় কর। আমার অন্তরকে হেদায়েত দাও। আমার জিহ্বাকে ঠিক রাখ। আমার অন্তরের কলুষ কালিমাকে বিদূরিত করে দাও।

اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الثَّبَاتَ فِي الْأَمْرِ، وَالْعَزِيْمَةَ عَلَى الرُّشْدِ، وَأَسْأَلُكَ شُكْرَ نِعْمَتِكَ، وَحُسْنَ عِبَادَتِكَ، وَأَسْأَلُكُ قَلْباً سَلِيْماً، وَلِسَاناً صَادِقاً، وَأَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا تَعْلَمُ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شرِّ مَا تَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا تَعْلَمُ، إنَّكَ عَلاَّمُ الغُيُوْبِ.

হে আল্লাহ ! আমি কর্মে অবিচলতা, সৎ পথে দৃঢ় নিষ্ঠা, তোমার নেয়ামতের শুকরগুজারী ও তোমার ইবাদতকে সুষ্ঠু সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার তাওফীক তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করি নির্ভেজাল ও প্রশান্ত হৃদয় এবং সত্যনিষ্ঠ রসনা। আমি সেই মঙ্গলের প্রার্থনা জানাই যা তুমি আমার জন্য ভাল মনে কর। আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই সে অমঙ্গল হতে যে সম্পর্কে তুমি সুবিদিত। আর আমি মাগফিরাত চাই সে অন্যায় অপকর্ম হতে যা একমাত্র তুমিই জান। নিশ্চয় তুমি গায়েব সম্পর্কে সুবিদিত।

اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِيْ وَأَعِذْنِيْ مِنْ شَرِّ نَفْسِيْ.

হে আল্লাহ ! আমাকে তুমি হেদায়াত দ্বারা অনুগৃহীত কর। আর আমার প্রবৃত্তির অনিষ্ট হতে আমাকে রক্ষা কর।

اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَترْكَ الْمُنكَرَاتِ، وَحُبَّ الْمَسَاكِيْنِ، وَأنْ تَغْفِرَ لِيْ وَتَرْحَمْنِيْ، وَإِذَا أَرَدْتَ بِعِبَادِكَ فِتْنَةً، فَتَوَفَّنِيْ إِلَيْكَ غَيْرَ مَفْتُوْنٍ، اللَّهُمَّ إنِّيْ أَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ، وَحُبَّ كُلِّ عَمَلٍ يُقَرِّبُنِيْ إِلَى حُبِّكَ.

হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ভাল কাজ সম্পাদন, মন্দ কাজ পরিহার এবং গরবীদেরকে ভালোবাসার তাওফীক কামনা করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর। আমার প্রতি রহমত বর্ষণ কর। তোমার বান্দাদেরকে কোন পরীক্ষায় নিপতিত করতে ইচ্ছা করলে আমাকে ফেতনামুক্ত অবস্থায় উঠিয়ে নিও। হে আল্লাহ ! আমি তোমার ভালোবাসা প্রার্থনা করি, আর ঐ ব্যক্তির ভালোবাসা যে তোমাকে ভাল বাসে এবং এমন কাজের ভালোবাসা যা আমাকে তোমার ভালোবাসার নিকটবর্তী করে দেয়।

اَللَّهُمَّ إنَّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَسْألَةِ، وَخَيْرَ الدُّعَاءِ، وَخَيْرَ النَّجَاحِ، وَخَيْرَ الثَّوَابِ، وَثَبِّتْنِيْ وَثَقِّلْ مَوَازِيْنِيْ، وَحَقِّقْ إِيْمَانِيْ، وَارْفَعْ دَرَجَتِيْ، وَتَقَبَّلْ صَلاَتِيْ، وَعِبَادَاتِيْ، وَاغْفِرْ خَطِيْئَاتِيْ، وَأَسْأَلُكَ الدَّرَجَاتِ الْعُلَى مِنَ الْجَنَّةِ.

হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট সুন্দরতম প্রতিদান, উত্তম প্রার্থনা, ফলপ্রসূ সফলতা এবং শ্রেষ্ঠ পুরস্কার কামনা করছি। তুমি আমাতে দৃঢ়তা দান কর। আমার নেকির পাল্লা ভারী কর। আমার ঈমানকে মজবুত কর। আমার সম্মান ও মর্যাদা বর্ধিত কর। আমার নামাজ ও এবাদত কবুল কর। আমার গুনাহ মার্জনা কর। হে আল্লাহ ! বেহেস্তে আমার পদ মর্যাদা বৃদ্ধি কর।

اللَّهُمَّ إنِّي أسْأََلُكَ فَوَاتِحَ الخَيْرِ، وَخَوَاتِمَهُ، وَجَوَامِعَهُ، وَأوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَظَاهِرَهُ وَبَاطِنَهُ، وَالدَّرَجَاتِ الْعُلَى مِنَ الجَنَّةِ.

হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট মঙ্গলের সূচনা, তার পরিসমাপ্তি, তার ব্যাপকতা, তার প্রথম ও শেষ, তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং বেহেশ্‌তের উচ্চ মর্যাদা যাচ্ঞা করছি।

اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ أَنْ تُرْفَعَ ذِكْرِيْ، وَتَضَعَ وِزْرِيْ، وَتُطَهِّرَ قَلْبِيْ، وَتُحَصِّنْ فَرْجِيْ، وَتَغْفِرَ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَأَسْأَلُكَ الدَّرْجَاتِ العُلَى مِنَ الْجَنَّةِ،

হে আল্লাহ! আমার স্মরণকে গৌরবময়, আমার বোঝা অপসারিত, আমার অন্তরকে পবিত্র,আমার গুপ্ত অঙ্গকে সংরক্ষিত, আমার গুনাহগুলোকে মার্জনা এবং বেহেস্তে উচ্চ মর্যাদা প্রদানের জন্য আমি তোমার নিকট আবেদন করছি।

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ أَنْ تُبَارِكَ فِيْ سَمْعِيْ، وَفِيْ بَصَرِيْ، وَفِيْ خَلْقِيْ، وَفِيْ خُلُقِيْ، وَفِيْ أَهْلِيْ وَفِيْ مَحْيَايَ، وَفِيْ عَمَلِيْ، وَتَقَبَّلْ حَسَنَاتِيْ، وَأَسْأَلُكَ الدَّرَجَاتِ العُلىَ مِنَ الجَنَّةِ.

হে আল্লাহ ! তুমি আমার নিকট আমার শ্রবণ-শক্তিতে, দৃষ্টিশক্তিতে, চেহারা ও আকৃতিতে, স্বভাব ও চরিত্রে, পরিবার-পরিজনে এবং জীবনে বরকত প্রদানের জন্য আবেদন করছি। আমার সৎকর্মগুলো কবুল করতে এবং বেহেস্তে উচ্চ মর্যাদা প্রদানের প্রার্থনা করছি।

اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ، وَدَرَكِ الشِّقَاءِ، وَسُوءِ القَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ اْلأَعْدَاءِ.

হে আল্লাহ ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিপদের কষ্ট, দুর্ভোগের আক্রমণ, মন্দ ফয়সালা ও বিপদে শত্রুর উপহাস হতে।

اللَّهُمَّ مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ، ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلَى دِيْنِكَ، اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ.

অন্তরসমূহের বিবর্তকারী হে আল্লাহ ! তুমি আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত রাখ। অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী হে আল্লাহ ! তুমি আমার অন্তরকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দাও।

اَللَّهُمَّ زِدْنَا وَلَا تَنْقُصْنَا، وَأَكْرِمْنَا وَلَا تُهِنَّا، وَأَعْطِنَا وَلَا تَحْرِمْنَا، وَآثِرْنَا وَلَا تُؤْثِرْ عَلَيْنَا.

হে আল্লাহ ! তুমি আমাদেরকে বাড়িয়ে দিয়ো, কমিয়ে দিয়ো না। সম্মানিত কর, অসম্মানিত করো না। আমাদেরকে দাও, বঞ্চিত করো না।আমাদেরকে অগ্রাধিকার দাও, আমাদের উপর কাউকে অগ্রাধিকার দিয়ো।

اَللَّهُمَّ أَحْسِنْ عَاقِبَتَنَا فِي الْأُمُوْرِ كُلِّهَا، وَأَجِرْنَا مِنْ خِزْيِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الآخِرِةِ.

হে আল্লাহ ! আমাদের সকল কাজের পরিণতি শুভ কর, আমাদেরকে ইহজগতে লজ্জা ও অপমান এবং আখেরাতের আজাব হতে রক্ষা কর।

اللَّهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا تَحُوْلُ بِهِ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعْصِيَتِكَ، وَمِنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِهِ جَنَّتَكَ، وَمِنَ الْيَقِيْنِ مَا تُهَوِّنُ بِهِ عَلَيْنَا مَصَائِبَ الدُّنْيَا، وَمَتِّعْنَا بِأَسْمَاعِنَا وَأَبْصَارِنا وَقُوَّاتِنَا مَا أحْيَتَنا، وَاجْعَلْهَا الْوَارِثَ مِنَّا، وَاجْعَلْ ثَأْرَنَا عَلَى مَنْ ظَلَمَنَا، وَانْصُرْنَا عَلَى مَنْ عَادَانَا، وَلَا تَجْعَلِ الدُّنْيَا أَكْبَرَ هَمِّنَا، وَلَا مَبْلَغَ عِلْمِنَا، وَلَا تَجْعَلْ مُصِيْبَتَنَا فِيْ دِيْنِنَا، وَلَا تُسَلِّطْ عَلَيْنَا مَنْ لَا يَخَافُكَ وَلَا يَرْحَمْنَا.

হে আল্লাহ ! তুমি আমাদের অন্তরে এমন ভীতির সঞ্চার করে দাও যা আমাদের ও পাপ কাজের মধ্যে প্রতিবন্ধক হতে পারে। আমাদেরকে এমন আনুগত্য প্রদান কর যা আমাদেরকে বেহেস্তে পৌঁছে দেবার উপকরণ হয়। আর আমাদের অন্তরে এমন বিশ্বাস উদয় করে দাও যা আমাদের বাস্তব জীবনের অনিষ্টতা ও ক্ষতির প্রতিষেধক হতে পারে। আর তুমি যতদিন আমাদেরকে জীবিত রাখবে ততদিন আমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি অক্ষত রাখবে। যাতে আমরা লাভবান হতে সমর্থ হই। এ কল্যাণ আমাদের পরেও জারি রেখো। অধিকন্তু যে আমাদের প্রতি অত্যাচার করবে, আমাদের প্রতিশোধ তুমি তাদের উপর গ্রহণ করো। আর আমাদেরকে আমাদের শত্রুদের উপর সাহায্য কর। এই পার্থিব জীবনকে আমাদের একমাত্র লক্ষ্যে পরিণত করো না এবং সেটাকে জ্ঞানের শেষ পরিণতি করো না। দ্বীনের ব্যাপারে আমাদেরকে বিপদে নিক্ষেপ করো না। আমাদের পাপের কারণে আমাদের উপর এমন শাসক চাপিয়ে দিয়ো না, যার অন্তরে তোমার ভয় ভীতি নেই এবং যে আমাদের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করবে না।

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مُوْجِبَاتِ رَحْمَتِكَ، وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ، وَالْغَنِيْمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ، وَالسَّلَامَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ، وَالْفَوْزَ بِالْجَنَّةِ، وَالنَّجَاةَ مِنَ النَّارِ.

হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট তোমার রহমতের কারণসমূহ, তোমার ক্ষমা লাভের দৃঢ় ইচ্ছা, প্রত্যেক সৎকাজের গনিমত এবং পাপ কাজ হতে নিরাপত্তা, জান্নাত লাভের সৌভাগ্য এবং জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ লাভের প্রার্থনা করছি।

اللَّهُمَّ لَا تَدَعْ لَنا ذَنْبًا إلَّا غَفَرتَهُ، وَلَا عَيْبًا إلَّا سَتَرْتَهُ، وَلَا هَمًّا إلَّا فَرَّجْتَهُ، وَلَا دَيْنًا إِلًّا قَضَيْتَهُ، وَلَا حَاجَةً مِنْ حَوَائِجِ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ هِيَ لَكَ رِضًى وَلَنَا صَلَاحٌ إِلَّا قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ.

হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সর্বপ্রকার অপরাধ মার্জনা কর। সর্বপ্রকার দোষত্রুটি গোপন কর। সকল দুশ্চিন্তা অপসারিত কর। সকল ঋণ পরিশোধ করে দাও। দুনিয়া ও আখেরাতের সব প্রয়োজন পূর্ণ কর, যাতে তুমি সন্তুষ্ট থাক এবং যার মধ্যে আমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে হে পরম দয়ালু !

اَللَّهُمَّ إِنِّيْْ أَسْأَلُكَ رَحْمَةً مِنْ عِنْدَكَ، تَهْدِيْ بِهَا قَلْبِيْ، وَتَجْمَعُ بِهَا أَمْرِيْ، وَتُلِمُّ بِهَا شَعْثِيْ، وَتَحْفَظُ بِهَا غَائِبِيْ وَتَرْفَعُ بِهَا شَاهِدِيْ، وَتُبَيِّضَ بِهَا وَجْهِيْ، وَتُزَكِّيْ بِهَا عَمَلِيْ، وَتُلْهِمُنِيْ بِهَا رُشْدِيْ، وَتَرُدُّ بِهَا الْفِتَنَ عَنِّيْ، وَتَعْصِمُنِيْ بِها مِنْ كُلِّ سُوْءٍ.

হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট এমন রহমত যাচ্ঞা করছি যদ্বারা আমার হৃদয় সৎপথে পরিচালিত হয়, আমার কার্যাদি যথাযথভাবে সুসম্পন্ন হয়, অন্তরের অশান্তি বিদূরিত হয়, গোপনীয়তা সুরক্ষিত থাকে, লোকসমাজে মান উন্নত হয়, আমার চেহারা উজ্জ্বল হয়, আমার আমল নিষ্কলুষ হয়, আমি সুপথের দিশারি হতে পারি। আমার থেকে ফিতনা ফাসাদ দূরে থাকে এবং সর্বপ্রকার অমঙ্গল থেকে আমাকে বাঁচিয়ে রাখে।

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْفَوْزَ يَوْمَ الْقَضَاءِ، وَعَيْشَ السُّعَدَاءِ، وَمَنْـزِلَ الشُّهَدَاءِ، وَمُرَافَقَةِ الأَنْبِيَاءِ، وَالنَّصْرَ عَلَى الأَعْدَاءِ.

হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট শেষ বিচার দিনের সফলতা, সুখী সজ্জনের ন্যায় জীবন যাপন, শহীদদের মর্যাদা, নবীদের সাহচর্য এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে সাহায্য কামনা করছি।

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ صِحَّةً فِيْ إِيْمَانٍ، وَإِيْمَاناً فِيْ حُسْنِ خُلُقٍ، وَنَجَاحًا يَتْبَعُهُ فَلَاحٌ، ورَحْمَةً مِنْكَ وَعَافِيَةً مِنْكَ وَمَغْفِرَةً مِنْكَ وَرِضْوَانًا.

হে আল্লাহ ! তোমার নিকট আমি ঈমানের নিষ্কলুষতা প্রার্থনা করছি। আর এমন চরিত্র কামনা করি যার ভেতর ঈমানের প্রভাব কার্যকরী থাকবে এবং এমন সাফল্য আশা করি যদ্বারা পরকালে মুক্তি পেতে পারি। আর তোমার রহমত, বরকত, ক্ষমা ও মাগফিরাত এবং সন্তুষ্টি কামনা করছি।

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الصِّحَّةَ وَالْعِفَّةَ، وَحُسْنَ الْخُلْقِ وَالرِّضَاءَ بِالْقَدْرِ.

হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট সুস্বাস্থ্য, পবিত্রতা, উত্তম চরিত্র এবং ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার মনোবল কামনা করছি।

اللَّهُمَّ إنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِيْ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إنَّ رَبِّيْ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيْمٍ.

হে আল্লাহ ! আমি আমার অন্তরের অপকারিতা এবং পৃথিবীর বুকে চলমান জীবজন্তু – যাদের ভাগ্যরাশি তোমার হাতের মুঠোয় রয়েছে তাদের অপকারিতা হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক সহজ সরল পথে রয়েছেন।

اللَّهُمَّ إنَّكَ تَسْمَعُ كَلَامِيْ، وتَرَى مَكَانِيْ، وَتَعْلَمُ سِرِّيْ وَعَلَانِيَّتِيْ، ولا يَخْفَى عَلَيْكَ شَيْءٌ مِنْ أمْرِيْ، وَأَنَا الْبَائِسُ الْفَقِيْرُ، وَالُمسْتَغِيْثُ المُسْتَجِيْرُ، وَالوَجِلُ الْمُشْفِقُ المُقِرُّ المُعْتَرِفُ إِلَيْكَ بِذَنْبِهِ، أسْألُكَ مَسْألَةَ المِسْكِيْنِ، وَاَبْتَهِلُ إِلَيْكَ ابْتِهَالَ الْمُذْنِبِ الذَّلِّيْلِ، وَأدْعُوْكَ دُعَاءَ الخَائِفِ الضَّرِيْرِ، دُعَاءَ مَنْ خَضَعَتْ لَكَ رَقَبَتُهُ، وَذَلَّ لَكَ جِسْمُهُ، وَرَغِمَ لَكَ أَنْفُهُ.

হে আল্লাহ ! অবশ্যই তুমি আমার বক্তব্য শুনছ, আমার অবস্থান অবলোকন করছ, আমার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সবই অবগত আছ, আমার এমন কিছু নেই যা তোমার অজানা আছে। আমি নিঃস্ব সহায় সম্বলহীন ফকির। তোমার দরবারে যাচঞা করছি ও প্রার্থনা করছি। আমি ভীত, সন্ত্রস্ত। আমি আমার কৃত অপরাধের কথা স্বীকার করছি। আমি নিঃস্ব মিসকিন, আমি নিকৃষ্ট পাপাচারীর ন্যায় অশ্রু সজল নয়নে ক্রন্দন করছি। লজ্জায় ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিনীতভাবে কাকুতি মিনতি করছি। আমি তোমার নিকট ঐ ব্যক্তির ন্যায় মিনতি জানাই যার স্কন্ধ তোমার নিকট বিনীত,যার দেহ তোমার নিকট অবনত এবং যার নাক তোমার নিকট ধূলি-ধূসরিত।

وصلى الله على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه وسلم.



তথ্যসূত্র:

[১] সূরা আলে-ইমরান: ৯৭

[২] সূরা আল-হাজ: ২৭-২৮

[৩] মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪২১, ৬০১ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত

[৪] বুখারি: ১৫১৯, মুসলিম: ২৪৪

[৫] বুখারি: ১৭৭৩, মুসলিম: ৩২৭৬

[৬] বুখারি: ১৫২১, মুসলিম: ৩২৭৮

[৭] মুসলিম : ৯৮৩

[৮] দেখুন : ফতহুল বারি, ৩/৩৮২

[৯] বুখারি: ১৫২০

[১০] সূরা আত-তালাক: ১

[১১] বুখারি: ১৭৬৩, মুসলিম: ১৩৪১

[১২] সূরা আল-মায়িদাহ: ২৭

[১৩] বুখারি: ৫৯৫০, মুসলিম: ২৭৪৭

[১৪] মুসনাদে আহমদ: ৫/৪২৯

[১৫] বুখারি: ২৫৮৭, মুসলিম: ১৬২৭

[১৬] সহীহ মুসলিম: ১৩৯২

[১৭] সূরা আল-বাকারাহ: ১৯৭

[১৮] বুখারি: ৫৬৭২, মুসলিম: ৪৭

[১৯] সূরা আল-বাকারাহ: ১৯৬

[২০] ইবনে মুনযির কৃত আল-ইজমা’

[২১] বুখারি: ১৩৪, মুসলিম: ১১৭৭

[২২] বুখারি: ১৭৪২, মুসলিম: ১২০৬

[২৩] বুখারি: ১৭৪১

[২৪] মুসলিম: ১৪০৯

[২৫] সূরা আল-মায়িদাহ: ৯৫

[২৬] মুসনাদে আহমাদ ২/৬৫

[২৭] সূরা আল-বাকারাহ: ২৮৬

[২৮] সূরা আল-বাকারাহ: ১৯৬

[২৯] আবু দাঊদ: ১৮৩৩

[৩০] সহীহ বুখারি: ২/৫৫৯

[৩১] বুখারি: ১৫৬৮, মুসলিম: ১২১৬

[৩২] মুসলিম: ১২১৮

[৩৩] সুনান আবি দাউদ: ১৮৩০

[৩৪] ইবনুল মুনযিরঃ আল-ইজমা’

[৩৫] ইবনুল মুনযির: আল-ইজমা’ পৃ.১৮

[৩৬] মুসলিম: ১১৮৩

[৩৭] বুখারি: ১৪৬১, মুসলিম: ১৩৪৬

[৩৮] বুখারি: ১৪৭৪, মুসলিম: ১১৮৪

[৩৯] সূরা আল-বাকারাহ্‌: ২০১

[৪০] বুখারি: ২৯৯, মুসলিম: ১২১১

[৪১] সূরা আল-হজ: ২৫

[৪২] সহীহ বুখারি: ১৫৩৯

[৪৩] ফাকেহী: আখবারু মাক্কাঃ ১/২৫২

[৪৪] সূরা আল-বাকারাহ: ১৫৮

[৪৫] দারু কুতনীঃ ২/২৫৯, বাইহাকীঃ ৮৮২১

[৪৬] বুখারি: ১৪৭৪, মুসলিম: ১১৮৪

[৪৭] তিরমিজি : ৩৫৮৫

[৪৮] বুখারি: ১৫৯৬, মুসলিম: ১২৯০

[৪৯] মুসলিম: ১২৯৩

[৫০] বুখারি: ৮৯৩ মুসলিম: ১৮২৯

[৫১] মুয়াত্তাঃ ৯৩৭

[৫২] আশ-র্শা‌হুল মুম্‌তি’: ৭/৩৮৬

[৫৩] বুখারি: ২৯০, ২৯৯, মুসলিম: ১২১১

[৫৪] সূরা আল-হজ: ২৯

[৫৫] মুসনাদে আহমাদঃ ২/২২৪, ৩০৫

[৫৬] মুসলিম: ১৩৩৬

[৫৭] মুসলিম: ১২৯৭

[৫৮] সূরা আল-আম্বিয়া: ৭

[৫৯] মুস্তাদরাকে হাকিম: ১৭৩৩,১৭৩৪

[৬০] বুখারি: ৫৩১৮, মুসলিম: ২৪৭৩

[৬১] মুসনাদে আহমাদ ৪/৪২৯

[৬২] সূরা আল-মায়েদাহঃ২৭, হিলইয়াতুল আওলিয়াহ ১/৭৫


লেখক: ড. আবু বকর যাকারিয়া

تأليف: الدكتور أبو بكر محمد زكريا

সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব