প্রশ্ন : তামাত্তু হজ্জকারীর উপর কি হজ্জের জন্য তাওয়াফ ও সাঈ আছে? নাকি উমরার তাওয়াফ ও সাঈ তার জন্য যথেষ্ট?
উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ। তামাত্তু হজ্জকারীর উপর দুটো তাওয়াফ ও দুটো সাঈ আবশ্যক: উমরার একটি তাওয়াফ ও একটি সাঈ। হজ্জের জন্য একটি তাওয়াফ ও একটি সাঈ। এটাই জমহুর (অধিকাংশ) আলেমের মাযহাব। তাদের মধ্যে রয়েছেন: ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ি, ইমাম আহমাদ (তার থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ রেওয়ায়েত অনুযায়ী)। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁকে হজ্জে তামাত্তু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: “মুহাজির, আনসার ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পত্মীগণ সকলে বিদায় হজ্জের ইহরাম বাঁধলেন। আমরাও ইহরাম বাঁধলাম। যখন আমরা মক্কায় পৌঁছলাম তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমরা তোমাদের হজ্জের ইহরামকে উমরাতে পরিণত কর; যে ব্যক্তি হাদিকে (কোরবানীর পশুকে) মালা পরিয়েছে সে ছাড়া। তখন আমরা বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করলাম, সাফা-মারওয়াতে সাঈ করলাম। স্ত্রী সহবাস করলাম, নিজেদের (সাধারণ) পোশাক পরলাম। তিনি বললেন: যে ব্যক্তি হাদিকে মালা পরিয়েছে তার জন্য হাদি জবাই করার স্থানে পৌঁছার আগে হালাল হওয়া বৈধ হবে না। তারবিয়ার দিন আমাদেরকে হজ্জের ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দেওয়া হল। যখন আমরা হজ্জের কার্যাবলী সমাপ্ত করলাম তখন বায়তুল্লাহ্তে এসে তাওয়াফ করলাম, সাফা-মারওয়াতে সাঈ করলাম। এভাবে আমাদের হজ্জ সম্পন্ন হল এবং আমাদের উপর হাদি (কোরবানী দেওয়া) ওয়াজিব।”[এটি ইমাম বুখারী কিতাবুল হাজ্জ; আল্লাহ্র বাণী: এটি তাদের জন্য যাদের পরিবার মসজিদে হারামের বাসিন্দা নয় শীর্ষক পরিচ্ছেদ।
শাইখ শানক্বিত্বী বলেন:
“সহিহ বুখারীতে সাব্যস্ত এ হাদিসটিতে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, যারা তামাত্তু হজ্জ করেছেন, উমরা থেকে হালাল হয়েছেন: তারা তাদের উমরার জন্য তাওয়াফ-সাঈ করেছেন এবং তাদের হজ্জের জন্য আরো একবার তাওয়াফ-সাঈ করেছেন। মতভেদস্থলে এ হাদিসটি সুস্পষ্ট দলিল।”[আযওয়াউল বায়ান (৫/১৭৮)]
তিনি আরও বলেন:
“ইতিপূর্বে আমরা যা উল্লেখ করেছি তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে: তামাত্তু হজ্জকারী আরাফাতে অবস্থান করার পর তার হজ্জের জন্য সাঈ করবেন, তাওয়াফ করবেন; তিনি উমরার জন্য কৃত তাওয়াফ ও সাঈকে যথেষ্ট মনে করবেন না— এই মর্ম নির্দেশক ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর পূর্বোক্ত হাদিসটি যে কোন বিবেচনায় মতভেদের পয়েন্টে একটি সুস্পষ্ট সহিহ দলিল।”[আযওয়াউল বায়ান (৫/১৮২)]
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন তারা তাওয়াফ করে হালাল হয়ে গেছেন। এরপর তারা মীনা থেকে ফেরত আসার পর অন্য একটি তাওয়াফ করেছেন। পক্ষান্তরে যারা হজ্জ ও উমরা একত্রিত করে পালন করেছেন: তারা শুধু একটি তাওয়াফ করেছেন।”[সহিহ বুখারী (১৫৫৭) ও সহিহ মুসলিম (১২১১)]
শাইখ শানক্বিতী বলেন:
“এটি সর্বসম্মত একটি পরিস্কার দলিল; যা ক্বিরান হজ্জ আদায়কারী ও তামাত্তু হজ্জ আদায়কারীর মধ্যে পার্থক্য থাকার প্রমাণ নির্দেশ করছে: ক্বিরান হজ্জ আদায়কারীর আমল ইফরাদ হজ্জ আদায়কারীর মত। আর তামাত্তু হজ্জ আদায়কারী তার উমরার জন্য তাওয়াফ করবেন, হজ্জের জন্যেও তাওয়াফ করবেন। এই হাদিসের পর এ মাসয়ালায় মতভেদের কোন সুযোগ নাই। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর পূর্বোক্ত হাদিসটি সহিহ বুখারীতে রয়েছে।
যারা বলেন: আয়েশা (রাঃ) এর হাদিসে ‘একটি তাওয়াফ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- এক সাঈ তাদের এমন অভিমতের সুযোগ আছে। ইবনুল কাইয়্যেম এ অভিমতকে গ্রহণ করেছেন এবং আমার কাছেও এটি মজবুত অভিমত।
এ দলিলগুলো ক্বিরান হজ্জ ও তামাত্তু হজ্জের মধ্যে পার্থক্য থাকার অভিমতটি সঠিক হওয়ার পক্ষে প্রমাণ বহন করছে। এটাই জমহুর আলেমের অভিমত। ইনশা আল্লাহ্ এ মতটিই সঠিক।”[আযওয়াউল বায়ান (৫/১৮৫)]
স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন:
“তামাত্তু হজ্জকারীর উপর দুইটি সাঈ আবশ্যক: উমরার সাঈ ও হজ্জের সাঈ।”
শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ্ বিন গাদইয়ান।
[ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা লিল বুহুছিল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা (১১/২৫৮)]
এই অভিমতকে অগ্রগণ্যতা দিয়েছেন শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম; যেমনটি রয়েছে তাঁর ফতোয়াসমগ্রে (৬/৬৫) এবং শাইখ উছাইমীন; যেমনটি রয়েছে তাঁর রচিত “আশ-শারহুল মুমতি গ্রন্থে (৭/৩৭৪); সেখানে তাঁর ভাষ্য হচ্ছে:
“তামাত্তু হজ্জকারী: যিনি হজ্জের মাসসমূহে উমরার ইহরাম বেঁধেছেন, এরপর উমরা থেকে হালাল হয়ে গেছেন; একই বছর হজ্জের ইহরাম বেঁধেছেন। তার উপর সাধারণ সাঈ আবশ্যক। অর্থাৎ যেহেতু তার উপর দুটো তাওয়াফ ও দুটো সাঈ আবশ্যক: উমরার জন্য একটি তাওয়াফ ও হজ্জের জন্য একটি তাওয়াফ। উমরার জন্য একটি সাঈ ও হজ্জের জন্য একটি সাঈ।”
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব