কংকর নিক্ষেপের পদ্ধতি
কংকর নিক্ষেপ  সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর?
১০ই যিলহজ্জ অর্থাৎ ঈদের দিনে কাজ সমূহ?
নিম্নবর্ণিত ৪টি কাজ :
 কংকর নিক্ষেপ [শুধুমাত্র বড় জামারায়],
 কুরবানী করা,
 চুল কাটা
 তাওয়াফ করা অর্থাৎ তাওয়াফুল ইফাদা বা ফরয তাওয়াফ। এ দিনে না পারলে পরবর্তী ২ দিনের মধ্যে বা অন্য যে কোন সময় করলেও চলবে।
আজকের ঈদের দিনে কোন কাজটি প্রথমে করব?
 বড় জামারায় ৭টি কংকর মারা। মুস্তাহাব হলো এর আগে অন্য কোন কাজ না করা।
“বড় জামারা” কোন্‌টি?
 হারাম শরীফ থেকে মিনায় আসলে ঐ পথে যেটা কাবার নিকটতম সেটাই বড় জামরা।
কংকর নিক্ষেপের হেকমত কি?
 আল্লাহ তা’আলার যিক্‌র কায়েম করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহর ঘরে তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সাঈ এবং জামারায় পাথর নিক্ষেপ আল্লাহ তা’আলার যিক্‌র প্রতিষ্ঠা করার জন্যই করা হয়েছে। (তিরমিযী)
জামারায় কংকর মারার হুকুম কি?
 ওয়াজিব। এটা ছুটে গেলে দম দিতে হবে।
১১ এবং ১২ যিলহজ্জ তারিখে প্রতিটি “জামারায়” প্রতিবারে কয়টি কংকর মারতে হয়?
 ৭টি করে তিনটি জামারায় মোট (৭দ্ধ৩)=২১টি কংকর।
প্রথমদিন অর্থাৎ ১০ই যিলহজ্জ তারিখে ‘বড় জামারায়’ পাথর নিক্ষেপের সময় কখন শুরু হয়?
 সূর্যোদয়ের পর থেকে কংকর মারা উত্তম। ফজরের আউয়াল ওয়াক্ত থেকে সূর্য উঠার আগেও পাথর নিক্ষেপ জায়েয আছে। দুর্বল, শিশু, নারী ও অক্ষম ব্যক্তিরা মধ্যরাত্রির পর থেকে কংকর মারা শুরু করতে পারে।
প্রথমদিন কংকর নিক্ষেপের শেষ সময় কখন?
 ঐদিনে কংকর নিক্ষেপের উত্তম সময় হল সূর্যোদয় থেকে শুরু করে দুপুরে সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত। সন্ধ্যা পর্যন্ত মারাও জায়েয আছে। কারণবশতঃ সন্ধ্যার পর থেকে ঐ দিবাগত রাতের ফজর উদয় হওয়ার আগেও যদি মারে তবু চলবে। তবে এ সময়ে মাকরূহ হবে।
কংকর নিক্ষেপের শর্ত কয়টি ও কি কি?
শর্তগুলো নিম্নরূপ :
 জামারার খুঁটিকে লক্ষ্য করে কংকর ছুঁড়ে মারতে হবে। অন্যদিকে টার্গেট করে মারলে খুঁটিতে লাগলেও শুদ্ধ হবে না।
 ঢিলটি জোরে নিক্ষেপ করতে হবে। সাধারণভাবে কংকরটি সেখানে শুধু ছুয়ায়ে দিলে হবে না।
 কংকরটি পাথর হতে হবে। মাটি বা ইটের টুকরা দিয়ে হবে না।
 কংকরটি হাত দিয়ে নিক্ষেপ করতে হবে। ছেলে-মেয়েদের খেলনা, গুলাল, তীর বা পা দিয়ে লাথি মেরে নিক্ষেপ করলে হবে না।
 সাতটি পাথর হাতের মুঠোয় ভরে একেবারে নয় বরং একটি একটি কংকর হাতে নিয়ে নিক্ষেপ করতে হবে।
 ব্যবহৃত কংকর পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না।
 ওয়াক্ত হলে কংকর নিক্ষেপ করা। এর আগে পরে নয়।
কংকর নিক্ষেপের সুন্নাত তরীকাগুলো কি কি?
এগুলো নিম্নরূপ :
 মিনায় প্রবেশ করে কংকর নিক্ষেপের আগে অন্য কিছু না করা।
 কংকর নিক্ষেপ শুরু করার পূর্বে তালবিয়াহ পাঠ বন্ধ করে দেয়া।
 প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় “আল্লাহু আকবার” বলা। ডান হাতে নিক্ষেপ করা। পুরুষের হাত উঁচু করে নিক্ষেপ করা। মেয়েরা হাত উঁচু করবে না।
 কংকরের সাইজ হবে গুলালের গুলির কাছাকাছি বা চানা বুটের দানার চেয়ে একটু বড়।
 প্রথমদিন সূর্যোদয়ের পরে মারা সুন্নাত।
 দাঁড়ানোর সুন্নত হলো মক্কাকে বামপাশে এবং মিনাকে ডানে রেখে ‘জামারার’ দিকে মুখ করে দাঁড়াবে। এরপর নিক্ষেপ করবে। প্রচণ্ড ভীড় হলে যে
      কোন দিকে দাঁড়িয়েও মারতে পারেন।
 একটা কংকর মারার পর আরেকটি মারা। অর্থাৎ দুই কংকরের মধ্যে বেশী সময় না নেয়া।
 কংকরগুলো পবিত্র হওয়া মুস্তাহাব। অপবিত্র হলেও তা দিয়ে নিক্ষেপ করা যাবে। তবে মাকরূহ হবে।
আইয়্যামে তাশরীকের দিনগুলোতে পাথর নিক্ষেপের হুকুম কি?
 ওয়াজিব। এটা বাদ গেলে দম দিতে হবে। আইয়্যামে তাশরীক হল ১১, ১২ ও ১৩ই যিলহজ্জ।
উপরে বর্ণিত ৩ দিনে কংকর নিক্ষেপ কখন শুরু করব?
 দুপুরের পর থেকে। এর আগে জায়েয নয়।
এ ৩ দিনে পাথর নিক্ষেপের শেষ সময় কখন?
 সুন্নাত হলো সূর্য ডুবার পূর্ব পর্যন্ত। তবে রাতেও মারা যাবে অর্থাৎ ফজরের পূর্ব পর্যন্ত জায়েয আছে।
১২ই যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপ করে যদি সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ করতে না পারে তাহলে এর বিধান কি?
 ঐ দিন মিনাতেই রাত্রিযাপন করা ওয়াজিব হয়ে যায়। পরের দিন ১৩ই যিলহজ্জ দুপুরের পর ৩টি জামারাকে আরো ২১টি পাথর নিক্ষেপ করে পরে মিনা ত্যাগ করতে হবে।
যারা ১২ তারিখে সন্ধ্যার পূর্বে মিনা ত্যাগ করতে পারেনি তারা কি ১৩ তারিখে দুপুরের আগে পাথর মারতে পারবে?
 ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)-এর মতে মারা জায়েয আছে। কিন্তু একই মাযহাবের তাঁরই দুজন সঙ্গী ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মতে দুপুরে সূর্য ঢলার আগে কংকর নিক্ষেপ জায়েয হবে না। কাজেই দুপুরের আগে নিক্ষেপ না করাই উত্তম।
প্রথমে ছোট, এরপর মধ্যম এবং সর্বশেষে বড় জামারায় কংকর নিক্ষেপে তারতীব অর্থাৎ সিরিয়াল ঠিক রাখার বিধান কি?
 সিরিয়াল ঠিক রাখা ওয়াজিব। হানাফী মাযহাবে সুন্নাত।
আইয়্যামে তাশরীকের (অর্থাৎ ১১, ১২ ও ১৩ই যিলহজ্জ তারিখে) কংকর নিক্ষেপের সুন্নাত তরীকাগুলো কী কী?
তরীকাগুলো নিম্নরূপ :
 দুপুর হলে পরে কংকর নিক্ষেপ আগে, এরপর যুহরের সালাত আদায় এভাবে সিরিয়াল করা মুস্‌তাহাব। (বুখারী) প্রচণ্ড ভীড় থাকে বিধায় এ সিরিয়াল ঠিক রাখার
       চেষ্টা না করাই  ভাল।
  মিনার মসজিদে ‘খায়েফ’ থেকে কাবার দিকে অগ্রসর হলে প্রথমে ছোট এরপর মধ্যম এবং শেষে বড় জামরা দেখতে পাবেন। আগে ছোট ‘জামারায়’
       কংকর নিক্ষেপ করে এটাকে বামে রেখে এখান থেকে একটু এগিয়ে গিয়ে কিবলামুখী হয় দাঁড়িয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়বেন এবং
        দু’হাত উঠিয়ে দোয়া  করবেন।
 এরপর যাবেন মধ্যম ‘জামারায়’। এখানেও পূর্বের মত ‘আল্লাহু আকবার’ বলে প্রতিটি কংকর নিক্ষেপ করবেন এবং পরে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ আল্লাহু আকবার, লা ইলাহাইল্লাল্লাহ,
       পড়বেন এবং কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত উঠিয়ে আরবীতে বাংলায় যত পারেন লম্বা মুনাজাত করবেন। একাকি মুনাজাত করাই সুন্নাত।
 সবশেষে বড় জামরায় এসে ৭টি কংকর মেরে আর থামবেন না সেখানে। জামারা ত্যাগ করবেন। একই নিয়মে শেষ ৩ দিন প্রতিদিন ৭+৭+৭= ২১টি করে কংকর নিক্ষেপ  করবেন।
কংকরটি হাউজের মধ্যে পড়ল কিনা যদি এমন সন্দেহ হয় তাহলে কী করতে হবে?
 যে কটা সন্দেহ হবে সে কটা আবার মারতে হবে। কংকর হাউজের বাইরে পড়লে ঐ পাথর পুনরায় মারতে হবে।
যদি এক বা একাধিক কংকর কম নিক্ষেপ করে থাকে তবে তার বিধান কী?
 প্রতিটি কংকরের জন্য অর্ধেক সাআ (অর্থাৎ এক কেজি বিশ গ্রাম) পরিমাণ গম, খেজুর বা ভুট্টা দান করতে হবে। আর ঘাটতি কংকরের সংখ্যা ৩ এর অধিক হলে দম দিতে হবে।
কোন্‌ ধরনের হাজীদের পক্ষে বদলী পাথর নিক্ষেপ জায়েয আছে?
 দুর্বল, রোগী, অতি বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য।
কোন্‌ কোন্‌ শর্তে বদলী কংকর নিক্ষেপ জায়েয হবে?
  যিনি বদলী মারবেন তিনি একই বছরের হাজী হতে হবে।
(২) যার পরিবর্তে বদলী মারবেন তিনি অবশ্যই অক্ষম ব্যক্তি হতে হবে।
(৩) প্রথমে হাজী নিজের পাথর মারবেন, এরপর অক্ষম ব্যক্তির কংকর মারবেন।
জামারাগুলোকে’ শয়তান অর্থে ব্যবহারের একটা প্রচলন আছে। অর্থাৎ বড় শয়তান, মধ্যম শয়তান ও ছোট শয়তান বলা হয়, এরূপ নামকরণ কি ঠিক আছে?
 না, ঠিক নয়। এ ৩টি জামারা শয়তানের প্রতিভূ বা চিহ্ন নয়। এগুলোকে পাথর নিক্ষেপ করলে শয়তানকে পাথর মারা হয়, এ কথাও ঠিক নয়। এটা একটা ভুল ধারণা ও বিভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস। একটা ভুল অনুভূতি নিয়ে জামারাগুলোকে কংকর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে মানুষের ভাবাবেগের পরিবর্তন হয়ে যায়, বাড়াবাড়ি করে ফেলে। ফলে নানা অঘটনও ঘটে যায়। আসুন আমরা ভুল আকীদা পরিহার করি।
কংকর নিক্ষেপকালে কি কি ত্রুটি হাজীগণ সচরাচর করে থাকেন?
নিম্নবর্ণিত ভুল ত্রুটি লক্ষ্য করা যায় :
 ১১, ১২ ও ১৩ই যিলহজ্জ দুপুরের আগেই কংকর নিক্ষেপ করে থাকে। এ কাজটা ভুল। সময় শুরু হয় দুপুরের পর থেকে।
 মুযদালিফা থেকেই কংকর কুড়াতে হবে, এ ধারণা ভুল।
 কেউ কেউ কংকর ধৌত করে থাকে। এ কাজ ঠিক না।
 ধাক্কাধাক্কি করে অন্য হাজীদেরকে কষ্ট দিয়ে কংকর নিক্ষেপ করে থাকে। এরূপ করা অন্যায়।
 ক্ষিপ্ত হয়ে কোন কোন হাজী বড় পাথর, জুতা, ছাতা ও কাঠ দিয়ে ঢিল ছুড়ে। এরূপ মারা জায়েয নয়।
তথ্য সূত্রঃ Preaching Authentic Islam In Bangla.